হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে তালাক দেওয়া স্ত্রী গালিগালাজ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যা করেছে সাবেক স্বামী। ৭ সন্তানের জননী আকলিমা আক্তারকে হাত-পা কেটে হত্যা করে তার প্রথম স্বামী সুজন মিয়া। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এরপর আদালতের মাধ্যমে সুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করা হয়েছে আকলিমাকে। ৯ মাসের সন্তানসহ ৭ সন্তান এখন অসহায়। তাদের ঘরে এক বেলার খাবারও নেই। রোববার বিষয়টি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সামনে আসে তাদের সংসারের করুণ চিত্র। সাত সন্তানরা হলো- তাহমিনা আক্তার, তানজিনা আক্তার মমনিনা আক্তার, ছাবিনা আক্তার, সাহেদা আক্তার, আতাউর রহমান ও হাবিবুর রহমান।
রোববার বিকাল ৪টার দিকে চুনারুঘাট উপজেলার ছনখলা গ্রামে নিহত আকলিমার বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ৭ সন্তানকে। ওই দম্পতির মেজো মেয়ে তানজিনা আক্তার জানান, তার বাবা মাদকাসক্ত। প্রায়ই নেশা করে বাড়ি ফিরে তাদের মাকে নির্যাতন করতেন। তানজিনা বলেন, ‘বাবা আমাদের ভরণপোষণ করেন না। মা-ই আমাদের একমাত্র ভরসা ছিলেন। আমার বাবা সেই মায়ের হাত-পা কেটে দিয়েছে। এখন আমরা কেমনে বাঁচুম’-এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে তানজিনা। এ সময় তানজিনার কান্না দেখে আকলিমার আরও ৬ সন্তানকে বিলাপ করতে দেখা যায়।
মা-বাবাকে হারিয়ে ৭ সন্তান দিশেহারা।তাদের কোনো সম্পত্তি নেই। বড় মেয়ে তাহমিনা বলেন, রোববার দুপুরে খাবারের ব্যবস্থাও ছিল না। পরে তারা নানার বাড়ি ছনখলা চলে যান। এর মধ্যে বড় মেয়ে তাহমিনা আক্তারের বিয়ে হয়েছে। তিনি স্বামীর বাড়ি অবস্থান করলেও তেমন অবস্থা নেই। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় ১৫ বছর পূর্বে গাজীপুর ইউনিয়নের সোনাচং গ্রামের ফজল মিয়ার ছেলে সুজন মিয়ার (৩৮) সঙ্গে একই ইউনিয়নের ছনখলা গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের মেয়ে আকলিমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের কোলজুড়ে ৭ সন্তান জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু পরবর্তীতে বনিবনা না হওয়ায় সম্প্রতি তাদের মধ্যে তালাক হয়। এরপর খেতামারা আশ্রয়ণে অবস্থান নেন আকলিমা।
শনিবার সন্ধ্যায় সুজনের সঙ্গে রাস্তায় দেখা হয় তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী আকলিমার। এ সময় আকলিমাকে বাড়িতে নেওয়ার জন্য সুজন তাকে টানাটানি করেন। কিন্তু আকলিমা বাড়িতে যেতে চাননি এবং এনিয়ে সুজনকে গালিগালাজ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সুজন তার হাতে থাকা দা দিয়ে ঘটনাস্থলেই আকলিমাকে কুপিয়ে শরীর থেকে বাম হাত আলাদা করে ফেলেন। পরে দা দিয়ে কুপিয়ে একটি পা কেটে ফেলেন।গুরুতর আহত আকলিমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় তার।
এ ঘটনায় স্বামী সুমনের নামে চুনারুঘাট থানায় মামলা হয়েছে।