যেখানে এবং যখনই ‘ধর্ম এবং আবেগ’ আমাদের যাপিত জীবনের মূল চালিকা শক্তিতে পরিণত হয়েছে, সেখানেই অন্ধ বিশ্বাসের মেঘ সকল যুক্তি ও বিবেচনাবোধকে গ্রাস করে ফেলেছে।
যদি এই ধরনের শক্তি সমাজে বসবাসরত মানব মনে লতায়-পাতায় বেড়ে উঠতে থাকে, তাহলে সামাজিক বাস্তুসংস্থানের অনেকগুলো লেয়ারে যৌক্তিক চিন্তা ভাবনা করার স্বাধীনতা সহজাতভাবে বাঁধাগ্রস্থ হয়। এবং এই ভয়াবহ
‘যৌক্তিক চিন্তা ভাবনা’কে গ্রাস করা শক্তি, মানব মনে ‘বিশ্বাস’ নামক জ্বালানীতে রূপান্তরিত হয়ে সমাজকে পুড়িয়ে দিতে থাকে নীরবে-নিভৃতে।
ফলে, অযৌক্তিক বিশ্বাসের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়া পথিকের জন্য লড়াই-সংগ্রামের পথটি এত বেশি দীর্ঘ হয়ে যায় যে, সেই পথ ধরে আর কেউ হাঁটতে চায় না।
তখন সমাজে ‘শর্ট-কাট ইজি ওয়ে আউট’ অনুসন্ধান করার তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। খেয়াল করলে দেখা যায়,
সমাজের অধিকাংশজনই ‘শর্ট-কাট ইজি ওয়ে আউট’ এর মাঝে নিজেদের ব্যস্ত রাখতেই আরাম অনুভব করা শুরু করে।
ফলে আরাম অনুভব করার দরুন সমাজের প্রায় সকলেই ‘স্টেটমেন্ট অফ কনভিনিয়েন্ট’ থিওরি অথবা ‘যখন যেটা বলা সুবিধা’ সেই শর্ট-কাট থিওরির দিকে ঝুঁকে পড়ছে এবং তাদের উদ্দেশ্যও অসফল না হয়ে দিব্যি সফল হচ্ছে।
কিন্তু আমরা এটা উপলব্ধি করছি না যে, কিছু কিছু ক্ষয় সহজেই ফেরানো যায় না। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘ইরেভার্সিবল ড্যামেজ’। আমি মনে করি, এই শর্ট-কাট গুলো হচ্ছে সমাজের ইরেভার্সিবল ড্যামেজ।
ঘুণে ধরা, উইপোকার চাদরে মোড়ানো মতাদর্শ দিয়ে যারা সত্য লুকায়, কিংবা ভুয়া ও গুজবের মাতৃগর্ভে তৈরি হওয়া বুদ্ধিবৃত্তিক গ্যাংব্যাং-ছানা নিয়ে যারা হাজির করে ব্যক্তি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বয়ান, একটু খেয়াল করলে দেখবেন- তারাই আসলে দুনিয়াকে জাহান্নাম বানানোর কারিগর হিসেবে কাজ করে!
আমার পরিমিত চিন্তার বোধ থেকে সমাজের সকলের প্রতি
অনুরোধ একটাই, বীরদর্পে সত্যের বিস্তৃত তীর ঘেঁষে এগিয়ে যান; কিন্তু সমাজের জন্য কেউ ‘হেডলেস হর্সম্যান’ হয়ে উইঠেন না।
জন লেননের ‘ইমাজিন’ গানে তিনি যেমন বলেছিলেন,
‘ইউ মে সে আই অ্যাম আ ড্রিমার, বাট অ্যাম নট দি অনলি ওয়ান।’
তেমনি কবির সুমন তাঁর ‘স্বপ্ন দেখার গান’ এর মাঝেও ঠিক একইভাবে বাংলায় বলেছেন-
‘স্বপ্ন দেখেই বেশ করেছি!
একলা তবু দেখছি না।
একদিন ঠিক জানি খুঁজে পাবো
মানুষের আসল ঠিকানা।’
আমারও এমনি করে ভীষণ বলতে ইচ্ছে করে!
মুনেম শাহারিয়ার মুন
সাধারণ সম্পাদক,
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ,স্যার এ.এফ.রহমান হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।