পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজদের মরদেহ উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তৎপর নয় বলে অভিযোগ উঠেছে। উদ্ধার কাজ করছে সাধারণ মানুষ। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের বার বার বলার পরও কেউ পানিতে নামছেন না। পানিতে লাশ থাকার কথা বললেও তারা স্থানীয়দের পানিতে নামতে বলছেন বলে অভিযোগ করেছেন নিখোঁজদের স্বজনরা।
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোমবার সকাল থেকে প্রতিটি মরদেহ উদ্ধার করেছে সাধারণ মানুষ। মরদেহ উদ্ধারের পর ফায়ার সার্ভিস এসে তাদের নাম গণমাধ্যমে প্রচার করছে।
বীরেন্দ্র নাথ নামে এক ব্যক্তি সংবাদ পোস্টকে বলেন, ‘এখানে ফায়ার সার্ভিস খালি মহড়া দিতে আসছে। নৌকায় করে এ কিনারা, ও কিনারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা কি কাজ করতেছে? মানুষগুলা হামা এখানে আছি লাশটা অন্তত পাইলে বাড়ি নিয়ে যাবো, আর এরা তামাশা লাগাইছে।’
ষাটোর্ধ্ব শরিফ উদ্দীন সংবাদ পোস্টকে বলেন, ‘সকাল থাকি দেখনু কেউ নামে নাই পানিতে। এলাকার মানুষ লাশগুলা তুলি আনেছে। আর হাকাও সরকার বেতন দেয় ফায়ার সার্ভিসের লোককে।’
বিমল চন্দ্র নামে আরেকজন স্থানীয় বাসিন্দা সংবাদ পোস্টকে বলেন, ‘এরা নাটক করতেছে, কোনো কাজ নাই। সকাল থেকে শুধু ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর ডজনে ডজনে গাড়ি আনি রাখছে, লোক নাই।’
পরিমল সরকার নামে এক ব্যক্তি সংবাদ পোস্টকে বলেন, ‘মানুষজন খুব ক্ষেপছে এদের কার্যকলাপ দেখে। আমাদের পরিবারের পাঁচজন দুর্ঘটনার শিকার। তিনজনের মরদেহ পাওয়া গেছে। কিন্তু বাকিদের এখনো পাওয়া যায় নাই। ফায়ার সার্ভিস শুধু নৌকা দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একবারও দেখলাম না পানিতে নামতে। এভাবে কী উদ্ধার কাজ হয়, নাকি নাটক হয়।’
বিষ্ণু দাস নামে একজন সংবাদ পোস্টকে বলেন, ‘এখানে ফায়ার সার্ভিসের কোনো কাজ নাই। তারা শুধু ডেমো। আমরা টিম বানায়া কাজ করছি। একটা টিম ক্লান্ত হলে আরেক টিম যাচ্ছি। আমরা একটু আগে একজনের লাশ উদ্ধার করে আনলাম।’
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মাহবুল ইসলাম সংবাদ পোস্টকে বলেন, আমাদের উদ্ধার কাজ চলমান আছে। স্বজনরা তো অভিযোগ করবেই, কারণ তাদের স্বজন হারিয়েছে। তারা লাশটা পেলে অন্তত মনকে সান্ত্বনা দিয়ে চলে যাবে। তাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। এখানে যাদের দেখছেন তারা সবাই ড্রাইভার। ডুবুরি ও ফায়ার ফাইটাররা বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের উদ্ধার অভিযান চলমান থাকবে। নিখোঁজ হওয়া শেষ ব্যক্তিকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত আমরা অভিযান চালাব।
এদিকে দুপুরে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রেলপথ মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম সুজন, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন।
এ সময় রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন সংবাদ পোস্টকে বলেন, এখানে কারো পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তি হারিয়েছে। আবার অনেকের কোলের সন্তান হারিয়েছে। মাননীয় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এসেছেন। উনি সব দেখে চলে যাবেন। আমি এলাকায় থাকব সবার ক্ষতি বিবেচনা করে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এখানে অনেকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষকে হারিয়েছেন, তাদের বিষয়টি বিশেষভাবে ভাবা হবে। আর এখানে ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে যত জরুরি সম্ভব কাজ করা হবে।
এর আগে রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় করতোয়া নদীতে যাত্রীবোঝাই একটি নৌকা ডুবে যায়। এ দুর্ঘটনায় সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত দুই দিনে ৪৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আরও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার দুপুরে মহালয়া দেখতে আউলিয়া ঘাট থেকে নৌকায় বদশ্বেরী ঘাটে যাচ্ছিলেন সনাতন ধর্মাবলম্বী প্রায় শতাধিক মানুষ। নৌকাটি ছাড়ার শুরুতেই দুলতে থাকে। একপর্যায়ে দুলতে দুলতে মাঝপথে গিয়ে নৌকাটি ডুবে যায়।
এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান ও পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায় বলেন, এখন পর্যন্ত (বিকেল সাড়ে ৫টা) ৪৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কয়েকজন বাদে বাকি সবার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।