আজ ১৭ মে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সফল রাষ্ট্র নায়ক দেশরত্ন শেখ হাসিনা’র ‘স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’।
বাংলাদেশের পুনর্জন্মের ভিত্তি রচিত ১৭ই মে, ১৯৮১ সালে। সেদিন বঙ্গকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে
দীর্ঘ ৬ বছর নির্বাসিত জীবন শেষে ১৯৮১ সালের এই দিনে দেশে ফেরেন তিনি। সেদিন তাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি বিকেলে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে ঢাকায় নামলে বিমানবন্দরে লাখো মানুষ তাকে স্বাগত জানান।
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর স্বামী-সন্তানসহ ছয় বছর বিভিন্ন দেশে কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরতে সক্ষম হন শেখ হাসিনা। তার দুই শিশুসন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে রেখে দেশে ফিরেছিলেন তিনি।
দেশে ফিরে লাখো জনতার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই। তিনি আরো বলেছিলেন
❝ বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য আমি দেশে এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে , বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই ৷ ❞
সেদিন লাখো জনতা সমস্বরে বলে উঠে
ঝড় বৃষ্টি আধাঁর রাতে
প্রিয়নেত্রী
আমরা আছি তোমার সাথে
আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।
বিদেশে থাকাকালেই ১৯৮১ সালে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগ নেতারা শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করেন। দেশে প্রত্যাবর্তনের পর নেতারা তার হাতে তুলে দেন দেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যের সাফল্যগাথা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পতাকা। এরপর থেকে শেখ হাসিনা দলীয় কাউন্সিলে বারবার নির্বাচিত হয়ে দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
শেখ হাসিনার দীর্ঘ ৪১ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের এ পথচলা কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না- ছিল কণ্টকাকীর্ণ ও বিপদসংকুল। গণমানুষের মুক্তির লক্ষ্যে আন্দোলন- সংগ্রাম করার অপরাধে তাকে বারবার ঘাতকদের হামলার শিকার ও কারা নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে।
নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং জনকল্যাণমুখী কার্যক্রমে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রমাগত প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ মাথাপিছু আয় বাড়ছে, কমছে দারিদ্র্যের হার। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর কাজ শেষে ঊদ্ভোধনের অপেক্ষায়। মেট্রোরেল, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, কর্ণফুলী টানেল, হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজও নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করতে তিনি রূপকল্প-২০২১’ এর সফল বাস্তবায়নের পথ ধরে ‘রূপকল্প-২০৪১’ ও ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ এর মতো দূরদর্শী কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে শেখ হাসিনার এসব যুগান্তকারী কর্মসূচি বিশ্বে আজ রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। তাই আমরা গত বছর বাঙ্গালি জাতি হিসাবে দেশে-বিদেশে সাড়ম্বরে উদযাপন করেছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন বিশাল একটি জনগোষ্ঠীর আবাসনের ব্যবস্থা করে দিয়ে আপনি , যা গোটা বিশ্বে ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের দারিদ্র্যবিমোচনের ধারণার ক্ষেত্রে একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করেছেন।
মহামারি করোনার প্রভাবে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োচিত ও সাহসী পদক্ষেপের ফলে করোনার প্রভাব মোকাবিলা করে সরকার অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে সরকারের নানামুখী আর্থ-সামাজিক ও বিনিয়োগধর্মী প্রকল্প, কর্মসূচি এবং কার্যক্রম গ্রহণের ফলে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
টানা চারবারসহ মোট পাঁচবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। যথাযথ প্রক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছেন, চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দণ্ড কার্যকর করেছেন। একই সঙ্গে দেশের উন্নয়নের চাকাকে গতিশীল রেখেছেন দক্ষ নেতৃত্বে।
বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরেই আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ
ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ও বাঙালী জাতির ভাগ্য উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় শেখ হাসিনা’র প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।
প্রিয় নেত্রীর সুন্দর জীবন ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
জয় বাংলা,
জয় বঙ্গবন্ধু।
সুমনা আক্তার লিলি
সম্পাদক
সংবাদপোস্ট.কম