সিরাত শব্দের অর্থ জীবনী। যে মহামানবের আলোচনা ইতিহাসের পাতায় পূর্ণতা আনে। যাঁর অনুপম আদর্শে মানুষ খুঁজে পায় মুক্তির দিশা। পৃথিবী হয় প্রাণবন্ত। জেগে ওঠে শান্ত সজীবে। তাঁর পবিত্র জীবনীই হলো সিরাত।
মহানবী (সা.)-এর জীবনী শীর্ষক যে পরিমাণ বইপুস্তক রচনা হয়েছে, গোটা পৃথিবীতে আর কারও জীবনী শীর্ষক এতগুলো বই রচনা হয়নি। তাঁর জীবনের প্রতিটি কথা, কাজ ও নির্দেশনা সিরাতের অন্তর্ভুক্ত। আল কোরআন হলো বিশ্বনবী (সা.)-এর সিরাত জানা ও সিরাত নিয়ে গবেষণা করার শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। তাঁর সিরাত অধ্যয়নের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষ তার ইহ ও পরকালকে সাজাতে পারে। সিরাতের আলোকে খুঁজে নিতে পারে শান্তির ঠিকানা। তাই সিরাত অধ্যয়ন শুধু জানার জন্য নয়। নয় শুধু কেবল গবেষণার লক্ষ্যে। বরং সিরাত হলো মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এবং ইহ ও পরকালীন যাবতীয় কল্যাণের শ্রেষ্ঠ নির্দেশিকা। উত্তম আদর্শ। তাঁর সিরাত সর্বকালের সমগ্র মানবজাতির জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। জীবনপথের আলোর মশাল।
মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘অবশ্যই তোমাদের জন্য রসুল (সা.)-এর মধ্যে রয়েছে অনুপম আদর্শ, তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে।’ (সুরা আহজাব ২১)।
মহানবী (সা.)-এর জীবন ছিল সর্বজনীন, বিশ্বজনীন। একজন মুসলমান তার জীবনের সার্বিক প্রয়োজনের সমাধান করার লক্ষ্য নিয়ে সিরাত অধ্যয়ন করবে। ইহ ও পরকালের যাবতীয় কল্যাণ ও সফলতা লাভের আশা এবং সুদৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে সিরাত গবেষণা করবে।
রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সিরাত আমাদের জন্য যেসব বিষয়ে পাথেয় হবে তার অন্যতম হলো পরিপূর্ণ ইমানের দৃঢ়তা লাভ। বস্তুত তাঁর জীবনী আমাদের প্রতিটি মুসলমানের ইমান পরিপূর্ণ ও কার্যকর করার জন্য সোনালি সোপান। রসুলুল্লাহ (সা.) ইসলাম প্রচারের পথে অগণিত ইমানি ধাপ পাড়ি দিয়েছেন। গোটা জীবনে অতিক্রম করেছেন অনেক ইমানি পরীক্ষা। সিরাতগ্রন্থে তা সোনার অক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে। একজন মুমিনের ইমান শানিত হওয়ার জন্য সিরাত অধ্যয়নের বিকল্প নেই।
মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘সুতরাং তোমরা সবাই ইমান গ্রহণ কর আল্লাহর ওপর, তাঁর প্রেরিত উম্মি নবীর ওপর, যিনি ইমান রাখেন আল্লাহ এবং তাঁর সমস্ত কালামের ওপর। তাঁর অনুসরণ করো যাতে সরল পথপ্রাপ্ত হতে পারো।’ (সুরা আল আরাফ-১৫৮)
ইসলামী শরিয়তের মৌলিক ও প্রধান উৎস আল কোরআন। কোরআন মানুষের সুখশান্তি ও চিরন্তন সফলতার চাবিকাঠি। এই কোরআন বোঝার অন্যতম সহায়ক হলো রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সিরাত। মহানবী (সা.)-এর জীবনের অবিস্মরণীয় ঘটনাবলিকে কেন্দ্র করে মহাগ্রন্থ আল কোরআন অবতরণ হয়েছে। তাই কোরআনে কারিম গবেষণার মাধ্যমে মহানবী (সা.)-এর সিরাত এবং নববি কার্যক্রম ও আদর্শ উদঘাটন হয়। ভেসে ওঠে তাঁর জীবনের রক্তমাখা ইতিহাস।
এ বাস্তবতাকেই আম্মাজান আয়েশা (রা.) নিজের ভাষায় বর্ণনা করেছেন, ‘তাঁর সিরাত হলো গোটা কোরআন।’ (মুসনাদে আহমাদ-২৫৩০২)
অনুরূপভাবে এ পৃথিবীতে মানুষের উত্থানপতনের ইতিহাস ও মুসলমানদের জন্য পাথেয়, মানুষ ও বিভিন্ন প্রাণীর অধিকার ও আমাদের করণীয়, আদর্শ মানুষের গুণাবলি, আত্মশুদ্ধির প্রয়োজনীয়তা ও পদ্ধতি, আদর্শ মানুষের আচার-আচরণ-শিষ্টাচার, মানবিক শিক্ষা এবং দায়িত্ব সচেতনতা ইত্যাদি পবিত্র সিরাতের আলোকে জানা যায়। আদর্শ মানুষ হওয়া যায়। গড়া যায় আদর্শ জীবন, শান্তির নীড়।
লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা