বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজ ৭৪ বছরে পা রাখলো। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী এই দলটি ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি পরতে পরতে আওয়ামী লীগের নাম জড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের সকল অর্জনে আওয়ামী লীগ জড়িয়ে আছে নিবিড়ভাবে।
ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আজকের এই বাংলাদেশ ছিলো পূর্ব পাকিস্তান। পাকিস্তানের অংশ হয়েও বাংলার মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। তখন বাংলার মানুষ শোষিত হতো পশ্চিম পাকিস্তানিদের দ্বারা। যার থেকে মুক্তি পেতে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে একটি রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন ছিলো। প্রতিষ্ঠিত হলো আওয়ামী লীগ। সভাপতি নির্বাচিত হলেন মাওলানা ভাষানী ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন শামসুল হক। তখন তরুন নেতা শেখ মুজিবুর রহমান দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
প্রতিষ্ঠাকালে এই দলের নাম ছিলো আওয়ামী মুসলিম লীগ। ১৯৫৫ সালে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেন। তখন থেকে দলটির নাম হয় “আওয়ামী লীগ”।আমাদের ভাষা আন্দোলন, আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ছয় দফা, ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুবের সামরিক শাসন-বিরোধী আন্দোলন, ’৬৪-এর দাঙ্গার পর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন ও ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২৪ বছরের আপোষহীন সংগ্রাম-লড়াই এবং ১৯৭১ সালের নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ তথা সশস্ত্র জনযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
আওয়ামী লীগ এদেশের খেটে খাওয়া সংগ্রামী মানুষের প্রতিচ্ছবি। গত ৭৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ এদেশের জনগণের কাছে নিজের অপরিহার্যতা প্রমাণ করে যাচ্ছে। দলটির গৌরবজ্জ্বল আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস সেটাই প্রমাণ করে।
মুক্তিযুদ্ধে জয় লাভের পর মাত্র ৩ বছর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এদেশের জনগণের মনে যে দল নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে তাকে মুছে ফেলা অসম্ভব। ১৯৮১ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে ভঙ্গুর আওয়ামী লীগের হাল ধরে। তিনি দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন শুরু করে। সেই আন্দোলনে বাধ্য হয়ে সামরিক শাসক এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। কিন্তু ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা হয়। কিন্তু ১৯৯৬ সালে সব বাধা-বিপত্তিকে পায়ে মাড়িয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসে। পিছিয়ে যাওয়া দেশকে এগিয়ে নিতে শুরু করে আওয়ামী লীগ। দেশে-বিদেশ শুরু হয় ষড়যন্ত্র। ২০০১ সালের নির্বাচনে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে পরাজিত হয়। শুরু হয় আওয়ামী লীগের উপর নির্যাতন। আওয়ামী লীগের প্রায় ২২০০০ নেতাকর্মীকে খুন ও গুম করা হয়। আওয়ামী।লীগের বিভিন্ন সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রীদের দিনে-দুপুরে হত্যা করা হয়। আন্দোলন সংগ্রামের সময় বর্ষীয়ান অনেক নেতা নেত্রীকে পুলিশ-জামাত ও বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মী বাহিনী দিয়ে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পিটুনি দেয়া হয়। দেশ জঙ্গিবাদের উর্বর ভূমিতে পরিনত হয়। এরমধ্যে আসে সেই ভয়ংকর ২১ আগস্ট,২০০৪ সাল। এদিন চিরতরে আওয়ামী লীগকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হয়। আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করা হয়। শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগের সকল প্রবীণ নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা করা হয়। শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও সেই হামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমান সহ অনেকেই নিহত হয়। আহত হন শত শত আওয়ামী লীগের কর্মী। মানবঢাল তৈরি করে সেদিন আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেছিলো আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। যাদের অনেকে এখনো শরীরে সেদিনের৷ গ্রেনেডের স্প্রিন্টারের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। সবকিছুর পরেও আওয়ামী লীগ ফিনিক্স পাখির মতো বার বার ফিরে আসে। নিয়ে আসে নতুন আলো। ২০০৮ সালে ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে সকল ষড়যন্ত্রকে পায়ে মাড়িয়ে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করে।
জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে আজ সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাঁর সুদক্ষ দেশ পরিচালনার ফলে দেশের অর্থনীতি, অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ খাত অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। আওয়ামী লীগ আজ বাংলাদেশকে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই আজ বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে।
কিন্তু এখনো সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে লড়াই জারি রাখতে হয়েছে। এখনো ধর্মের নামে আওয়ামী লীগকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে ধর্ম ব্যবসায়ীরা। অসাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রতিটি ধর্ম,জাতি,গোত্রের মানুষ বাংলাদেশে সমান অধিকার ভোগ করবে। কিন্তু সেটা অনেকেই পছন্দ করেছে না। আজ বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। যা অনেকেরই পছন্দ হচ্ছে না। তাই শুরু হয়েছে ষড়যন্ত্র। আর কয়েক মাস পরে নির্বাচন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তি স্বাধীনতায় পরাজিত শক্তিকে ক্ষমতায় বসাতে চায়। তাদের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে তাদের গোলামে পরিনত করা হয়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে যা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের মানুষকেই এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি চায়! তারা কি আবার ২০০১-০৬ সালের মতো বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের উর্বর শস্যভূমি হিসাবে দেখতে চায় নাকি বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী একটি রাষ্ট্র হিসাবে দেখতে চায়।
আজ আওয়ামী লীগ তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশকে শক্তিশালী অর্থনৈতিক রাষ্ট্রে পরিনত করেছে। আজ আমরা কারো মুখাপেক্ষি নই। আমাদের চাইলেই তথাকথিত মোড়লেরা চোখ রাঙানি দিতে পারেনা। যা অনেকেই মেনে নিতে পারছে না। তাই আজ সিদ্ধান্ত আমাদের! উন্নয়ন নাকি পশ্চাদপদ জাতি হিসাবে আমরা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাই তা ভাবতে হবে আমাদের! তবে ইতিহাস সাক্ষী বাংলার মানুষ ভুল করেনা। ৭১ এ যেমনটি করেনি, এবারও করবেনা।
ভোটের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ প্রমান করে দেবে বাংলাদেশ আর পিছিয়ে যাবেনা। আওয়ামী লীগের হাত ধরে এগিয়ে যাব আমরা, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
জয় বাংলা,
জয় বঙ্গবন্ধু,
জয় শেখ হাসিনা,
জয় হোক আওয়ামী লীগের।
কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি।