শনিবার, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪
spot_img
Homeলাইফস্টাইলসুরা বাকারার বৃহত্তম সুরার ফজিলত ও বরকত

সুরা বাকারার বৃহত্তম সুরার ফজিলত ও বরকত

বাকারাহ পবিত্র কোরআনের দ্বিতীয় সুরা। মদিনায় নাজিল হওয়া সর্ববৃহৎ সুরা। এই সুরায় তাওহিদের শিক্ষা; কুফর, শিরক ও মুনাফিকের পরিচয় স্থান পেয়েছে। বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধান এবং উম্মতে মুহাম্মদির পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ এই সুরার কিছু ফজিলত আলোচনা করা হলো—
সুরা বাকারাহ সম্মান বৃদ্ধি করে : সুরা বাকারাহ মানুষের সম্মান বৃদ্ধি করে; পাঠকারীর নেতৃত্বের সৌভাগ্য নসিব করে। একজন অল্প বয়সী সাহাবি এই সুরার কারণে অভিযানের সর্দার হয়েছিলেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার এক প্রতিনিধিদলকে এক অভিযানে পাঠালেন। তারা সংখ্যায় ছিলের কয়েকজন।

তিনি তাদের কোরআন পাঠ করতে বলেন, প্রত্যেকেই যে যা জানত তা পাঠ করে শোনালো। শেষে তিনি এদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী এক ব্যক্তির কাছে এলেন। বলেন, হে অমুক তোমার কী আছে? সে বলল, অমুক অমুক সুরা এবং সুরা বাকারাহ আমার জানা আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সুরা বাকারাহ তোমার মুখস্থ? লোকটি বলল, হ্যাঁ! তিনি বলেন, যাও তুমি তাহলে এ দলের আমির।

তখন এ দলের একজন নেতৃস্থানীয়  লোক বলল, আল্লাহর কসম! রাতের নামাজে তা পড়তে না পারার আশঙ্কায় আমাকে এ সুরাটি শেখা থেকে বিরত রেখেছে। নবীজি (সা.) বললেন, তোমরা কোরআন শিক্ষা করো এবং তা পড়ো। কেননা যে ব্যক্তি কোরআন শিখে তা তিলাওয়াত করে এবং নামাজে দাঁড়িয়ে পড়ে তার জন্য কোরআনের দৃষ্টান্ত হলো কস্তুরী ভর্তি চামড়ার একটি থলের মতো। সর্বত্র তার সৌরভ প্রসারিত হয়। আর যে ব্যক্তি তা শিখে ঘুমিয়ে আছে তার দৃষ্টান্ত হলো মুখ বাঁধা কস্তুরীর থলের মতো।

(জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৮৭৬ )
সুরা বাকারাহ ঘরে শয়তানের প্রবেশ রোধ করে : সুরা বাকারাহর গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য অনেক বেশি। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের বাড়িতে গোরস্তান বানিয়ো না। যে বাড়িতে সুরা বাকারাহ পাঠ করা হয় সে ঘরে শয়তান প্রবেশ করে না।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৮৭৭; সহিহ মুসলিম : ১/৫৩৯)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন, ‘প্রত্যেক জিনিসের উচ্চতা থাকে, তেমনি কোরআনের উচ্চতা হচ্ছে সুরা বাকারাহ। যে ব্যক্তি রাতে নিজের নিভৃতকক্ষে তা পাঠ করে তিন রাত পর্যন্ত শয়তান সেই ঘরে যেতে পারে না । আর দিনের বেলায় যদি পড়ে তাহলে তিন দিন পর্যন্ত সেই ঘরে শয়তান পা দিতে পারে না।’ (তাবারানি : ৬/১৬৩; ইবন হিব্বান : ২/৭৮ )

সুরা বাকারাহ পাঠে ঘরে বরকতময় হয় : আবু উমামা বাহিলি (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কোরআন তিলাওয়াত করবে, কেননা কিয়ামতের দিন তা তিলাওয়াতকারীদের জন্য শাফায়াতকারী হিসেবে উপস্থিত হবে। তোমরা দুটি সমুজ্জল সুরা বাকারাহ ও আলে ইমরান তিলাওয়াত করবে, কেননা এ দুটি কিয়ামতের দিনে উপস্থিত হবে যেন দুটি মেঘ খণ্ড কিংবা দুটি ছায়াদানকারী কিংবা যেন দুটি ডানা বিস্তারকারী পাখির ঝাঁক, যারা তাদের তিলাওয়াতকারীদের পক্ষে সাহায্যকারী হবে। তোমরা সুরা বাকারাহ তিলাওয়াত করবে, কেননা তা তিলাওয়াত করায় বরকত আছে এবং তা বর্জন করা আফসোসের কারণ। কারণ বাতিলপন্থীরা (জাদুকররা) তার সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারবে না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৭৪৭)

আয়াতুল কুরসি সুরা বাকারাহর শ্রেষ্ঠ

আয়াত : সুরা বাকারাহর শ্রেষ্ঠ আয়াত হলো আয়াতুল কুরসি। এটাকে সব আয়াতের সর্দার বলা হয়েছে। এই আয়াতের আছে বিশেষ ফজিলত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি বস্তুর শীর্ষদেশ আছে। কোরআনের শীর্ষস্থানীয় সুরা হলো বাকারাহ। এতে এমন একটি আয়াত আছে, যা কোরআনের আয়াতগুলোর মধ্যে প্রধান। আর সেটা হলো আয়াতুল কুরসি।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৮৭৮)

আয়াতুল কুরসি আমলের ফজিলত সম্পর্কে আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে জান্নাতে প্রবেশ করতে শুধু তার মৃত্যুই বাধা। অর্থাৎ মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তাবারানি কাবির, হাদিস : ৭৪০৮)

সুরা বাকারাহর শেষ দুই আয়াতের

ফজিলত : সুরা বাকারাহর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও ফজিলতপূর্ণ। ছোট্ট ছোট্ট আয়াতের বড় বড় ফজিলত আছে। শেষ দুই আয়াতের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একবার জিবরাইল (আ.) নবী (সা.)-এর কাছে উপবিষ্ট ছিলেন। হঠাৎ ওপরের দিকে তিনি একটি আওয়াজ শুনতে পেয়ে নিজের মাথা তুললেন এবং বললেন, এটি আসমানের একটি দরজা, যা আজই খুলে দেওয়া হলো। আজকের দিন ছাড়া কখনো তা খোলা হয়নি। তখন সে দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতরণ করলেন। তিনি বললেন, ইনি একজন ফেরেশতা। আজ ছাড়া অন্য কখনো তিনি অবতরণ করেননি। এরপর ওই ফেরেশতা সালাম করে বললেন, দুটি নুরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন!  যা আপনাকে দেওয়া হয়েছে এবং যা আপনার আগে আর কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি। তা হলো সুরা ফাতিহা ও সুরা বাকারাহর শেষাংশ। এ দুটির যেকোনো হরফ আপনি পাঠ করবেন তা আপনাকে দিয়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ এতে যে দোয়ার বিষয়বস্তু আছে তা কবুল করা হবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৭৫০)

প্রতিদিন এই দুই আয়াত পাঠের কথা হাদিসে এসেছে। আবু মাসউদ আনসারি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে সুরা বাকারাহর শেষ দুই আয়াত পাঠ করবে তা ওই ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৮৮১)

পর্যালোচনা সংক্ষিপ্ত বিবরণ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন