প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করলেও এখনও চালু হয়নি বাণিজ্যিক ট্রেনের যাত্রা। তবে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী ১ নভেম্বর থেকে শুরু হবে যাত্রীসহ বাণিজ্যিক ট্রেনের চলাচল। প্রাথমিকভাবে পদ্মাসেতু দিয়ে চারটি যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, এ চারটি ট্রেনের মধ্যে খুলনা-ঢাকা রুটের দুটি আন্তঃনগর ট্রেন এবং সুন্দরবন অথবা চিত্রা এক্সপ্রেসের যেকোনো একটি ট্রেন পদ্মাসেতু দিয়ে চলবে। অন্যটি চলবে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু দিয়ে। আর ঢাকা-বেনাপোল রুটের বেনাপোল এক্সপ্রেস বর্তমান রুট পরিবর্তন করে পদ্মাসেতু ঢাকায় চলাচল করবে।
রাজশাহী থেকে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত চলাচল করা আন্তঃনগর ট্রেন মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেনটিকেও রাজশাহী থেকে ভাঙ্গা হয়ে পদ্মাসেতু দিয়ে ঢাকায় আনার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। আর ঢাকা থেকে ভাঙ্গা রুটে একটি কমিউটার ট্রেন চলাচলের বিষয়টিও চূড়ান্ত হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় এই চারটি ট্রেন ছাড়াও আগামীতে আরও কিছু ট্রেন চলবে।
এরমধ্যে ঢাকা-কলকাতা রুটের আন্তর্জাতিক ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস রুট পরিবর্তন করে পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকায় চলাচল করবে।
প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, খুলনা থেকে গোয়ালন্দ রুটে চলাচলকারী মেইল ট্রেন নকশিকাঁথা এক্সপ্রেসকে ভাঙ্গা হয়ে পদ্মাসেতু দিয়ে ঢাকায় আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, আমরা একটি প্রস্তাবনা বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক বরাবর পাঠিয়েছি। পদ্মাসেতু হয়ে আগামী ১ নভেম্বর থেকে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচলের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতি. মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী বলেন, পদ্মাসেতু হয়ে বেনাপোল এক্সপ্রেস, ঢাকা-খুলনা রুটের একটি ও মধুমতী ট্রেন আসবে।
এরআগে, গত ১০ অক্টোবর উদ্বোধনের দিনে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবির বলেছেন, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর-খুলনা ও বেনাপোল রুটে প্রাথমিকভাবে আট জোড়া ট্রেন চলবে। এসব ট্রেনের যাত্রী ধারণ ক্ষমতা হবে ১৪ হাজার ৫০০। এর মাধ্যমে ২৬৮ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব হবে।
নতুন ১০০ কোচ পাচ্ছে যেসব আন্তঃনগর ট্রেন
পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় চীনা নির্মিত ১০০টি আধুনিক ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ বা কোচ কেনা হয়েছে। ক্যারেজগুলোর মধ্যে শোভন চেয়ার ২৫টি, এসি চেয়ার ৩৫টি, এসি কেবিন ১৫টি, ডাইনিং কার কাম গার্ডব্রেক ১৫টি ও পাওয়ার কার- ১০টি।
এরমধ্যে চিত্রা এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, বেনাপোল এক্সপ্রেস এবং চিলাহাটি এক্সপ্রেসের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ৭০টি কোচ। অবশিষ্ট রয়েছে ৩০টি কোচের কমিশনিং ও ট্রায়াল রান সম্পন্ন হয়েছে। এই ৩০টি কোচ ব্যবহৃত হবে দুইটি ট্রেনে।
প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকার কমলাপুর থেকে পদ্মাসেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত দীর্ঘ ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মিত হচ্ছে।
এরমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ঢাকা-মাওয়া ৪০ কি.মি. ও মাওয়া-ভাঙ্গা ৪২ কিলোমিটার রেলপথ উদ্বোধন করা হয়েছে। আর প্রকল্পের তৃতীয় অংশের ভাঙ্গা-যশোর ৮৭ কি.মি. রেললাইন নির্মাণ কাজ ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে। এ অংশের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭৮ ভাগ।