স্বামী ও চিলমারী ইউএনও মনোনীত বিদ্যালয়ের সভাপতি আবু তারিক আলম বলেন, আমার ২৬ শতক জমিতে সমাজের অবহেলিত প্রতিবন্ধী শিশুদের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে ২০০৯ সালে তার গড়ে তোলা হয় রিকতা আখতার বানু (লুৎফা) বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে প্রায় তিন শত শিক্ষার্থীদের আধাপাকা ভবনে চলছে পাঠদান। আবাসিক ভবনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
নয়ন জুড়ে স্বপ্ন আর: রিকতা আখতার বানু (লুৎফা) এর কন্যা প্রতিবন্ধী তানভীন দৃষ্টিমনি (ব্রহ্মপুত্র) এখন পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। কথা বলতে না পারলেও সব সময় মিষ্টি হাসি লেগে থাকে তার ঠোঁটে। এখন নিজের কাজ, বাড়ির কাজ আর পড়াশোনার কিছু কাজ নিজেই করতে পারে। অন্য শিশু-শিক্ষার্থীদেরও অনেকেই ধীরে ধীরে জড়তামুক্ত হচ্ছে, শিখছে কথা বলা। পঞ্চম শ্রেণির ক্লাসের আল আমিন বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। আগে কিছুই বলতে পারত না সে। স্পিচ থেরাপিসহ শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় এখন ছড়া পাঠ, কোরআন তিলাওয়াতসহ লেখাপড়ায় তার আগ্রহ শিক্ষকদের আশা জাগাচ্ছে। মোস্তফার মা ও বাবা দুজনই প্রতিবন্ধী। তার পরও থেমে নেই তার শিখন কার্যক্রম। আরেক শিক্ষার্থী নাজমা আখতার লাকি বলে, আগে পাঁচ টাকা চিনি নাই, এখন চিনি। শিক্ষার্থী সাদিয়া আখতারের মা রেশমা বেগম বলেন, চিলমারীতে প্রতিবন্ধীদের জন্য কোনো স্কুল নেই। রিকতা আপার স্কুলটিই আমাদের ভরসা।
অন্তহীন স্বপ্ন: রিকতা আখতার বানু (লুৎফা) এর স্বপ্ন দেখেন তার স্কুলটি হবে আবাসিক। দূর-দূরান্ত থেকে শিশুরা এখানে আসবে। হাতে-কলমে শিক্ষা নিয়ে সমাজের মূলস্রোতে মিশবে অবহেলিত সেই শিশুরা। বর্তমানে বাতজ্বরে কাবু হয়ে বেশির ভাগ সময় বিছানায় কাতরান রিকতা বানু। চাকরি আর সংসারের বোঝা টানতে চরম বেগ পাচ্ছেন। তারপরও অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষে দেখেন আলোর হাতছানি। মৃত্যুর আগে তিনি স্বপ্নের স্কুলটির আরও প্রসার চান, হাসি ফোটাতে চান আরও অনেক মলিন মুখে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে মুগ্ধ হয়েছি এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।