জাঁটকা শিকারে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ মৌসুম শুরু হলেও অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে প্রত্যাশিত মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং নদীতে প্রচুর স্রোত থাকায় জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে না।
এদিকে, সাগরে মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকায় সাগর থেকেও ইলিশ আহরণ বন্ধ রয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতিরি উন্নতি হলে নদীর পানি কমবে এবং তখন প্রত্যাশিত ইলিশ মিলবে বলে ধারণা মৎস্যজীবীদের। অপরদিকে, আগামী ২৩ জুলাই সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগর থেকেও প্রচুর ইলিশ আহরিত হবে বলে আশা মৎস্য বিভাগের।
জাঁটকা (ছোট ইলিশ) নির্বিঘ্নে বড় হওয়ার সুযোগ দিতে সরকার ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ মাস নদ-নদীতে জাঁটকা শিকার নিষিদ্ধ করে। বিগত বছরে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে অভ্যন্তরীণ নদীতে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যেত। এবার মৌসুম শুরুর সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও জেলেদের জালে ইলিশ পড়ছে না। তীব্র স্রোতে জেলেরা নদীতে জাল ফেললেও জাল টেনে তুলছেন শূন্য হাতে। কেউ কেউ দুই-চারটা ইলিশ পেলেও প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না তাদের। বিভিন্ন নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়া ইলিশ হাত বদল হয়ে পরদিন সকালে চলে আসে বরিশাল পোর্ট রোড মোকামে।
রবিবার পোর্ট রোড আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকটি আড়তের সামনে বিভিন্ন সাইজের কিছু ইলিশের লট ব্যাপারীরা হাকডাক মেরে প্রকাশ্য নিলামে কিনছেন। নিলামে কেনা ইলিশের একাংশ বিক্রি হচ্ছে পোর্ট রোড সহ বিভিন্ন বাজারে। মান সাইজের ইলিশগুলো ব্যাপারীদের হাত ধরে চলে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে।
পোর্ট রোডের খুচরা মাছ বিক্রেতা মো. হারুন জানান, রবিবার পোর্ট রোডে পাইকারি বাজারে দেড় কেজি সাইজের ইলিশ কেজি প্রতি ২ হাজার ৭৫০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ১ কেজি ২শ’ গ্রাম সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি ২ হাজার ৩৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ৪শ’ টাকায়, এক কেজি সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি ২ হাজার ২৫০ টাকায়, রপ্তানিযোগ্য এলসি সাইজের (৬০০ থেকে ৯০০ গ্রাম) ইলিশ প্রতি কেজি ১ হাজার ৮৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮৭৫ টাকায় এবং ভেলকা সাইজের (৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম) প্রতি কেজি ইলিশ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকায়। পাইকারি বাজার থেকে উচ্চমূল্যে ইলিশ কিনে কেজি প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা লাভে বিক্রি করছেন খুচরা বাজারে।
গতকাল শনিবার প্রায় ১শ’ মণ ইলিশ এসেছিল পোর্ট রোড মোকামে। রবিবার এসেছে সর্বোচ্চ ৮০ মণ ইলিশ। সরবরাহ কম থাকায় আগের দিনের চেয়ে ইলিশের দাম কেজি প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
পোর্ট রোডের মাছ বিক্রেতা হালিম শিকদার জানান, ইলিশ মাছের খুচরা দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। দাম শুনে আঁতকে ওঠেন অনেকে। পরে অন্য মাছ কিনে নেন ক্রেতারা।
পোর্ট রোডের ইলিশ আড়তদার মো. নাসির উদ্দিন জানান, ইলিশ মৌসুম শুরু হলেও আড়তে ইলিশ নেই। মৌসুমের সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পর গতকাল শনিবার চলতি মৌসুমে সর্বাধিক প্রায় ১শ’ মণ ইলিশ এসেছিল পোর্ট রোড মোকামে। এর আগের দিন এসেছিল সর্বাধিক ৬০ মণ ইলিশ। রবিবার এসেছে প্রায় ৮০ মণ ইলিশ। তার মতে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। নদীতে পানি থৈ থৈ করছে। জেলেরা ঠিকমতো নদীতে জাল ফেলতে পারছেন না। এ কারণে ইলিশ আহরণ কম হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনে নদীর পানি কমলে নদীতে ইলিশ আহরণ বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা।
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পাশাপাশি নদীতে পানি কমলে তখন অভ্যন্তরীণ নদীতে ইলিশ আহরণ বাড়বে। ২৩ জুলাই সাগরে মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে সাগর থেকেও প্রচুর ইলিশ আহরিত হবে। তখন দামও সাধ্যের মধ্যে চলে আসবে বলে ধারণা করছে মৎস্য বিভাগ।
দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে (জিডিপি) ইলিশের অবদান ১ ভাগ। গত বছর দেশে প্রায় ৫ লাখ ৬৫ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে। যার ৬৬ ভাগ উৎপাদিত হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলে।