চট্টগ্রামে ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু। বছর বছর চট্টগ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। চলতি বছরের এ ছয় মাসে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে চট্টগ্রামে।
২০২০ সালে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৭ জন, এরপর ২১ সালে তা বেড়ে ২৭১ জন। পরের বছর ২০২২ সালে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৪৪৫ জন শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৭৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হলেও পরের তিন মাস কমে আসে। ফের হঠাৎ করে চোখ রাঙিয়ে জুন ও জুলাইতে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। আক্রান্তের বেশির ভাগই শিশু, ফলে উদ্বিগ্ন পরিবারও।
এ সময়ে শিশুদের প্রতি বাড়তি নজর দেওয়ার পাশাপাশি জ্বর হলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে চিকিৎসকরা।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৮ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট ৬৬১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ৭৭ জন। পরের তিন মাস ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসে শনাক্তের হার কমে আসে। ফেব্রুয়ারিতে ২২ জন, মার্চে ১২ জন এবং এপ্রিলে ১৮ জন শনাক্তের পর মে মাসে এসে আবার ঊর্ধ্বমুখী হয় ডেঙ্গু আক্রান্তের হার। মে মাসে আক্রান্ত হয় ৫৩ জন। জুন মাসে ২৮২ জন এবং জুলাই মাসের পাঁচদিনে ১৯৭ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে।
শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, শিশুরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে বিপদ বেড়ে যায়। অল্পতেই শরীরের অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয় তাদের। তাই শিশুদের বিষয়ে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ করে এ মৌসুমে দিনে হোক কিংবা রাতের বেলায় শিশুরা ঘুমালে অবশ্যই মশারি টানাতে হবে। প্রয়োজন হলে ফুল প্যান্ট ও ফুল হাতার জামা পড়িয়ে রাখতে হবে। পাশাপাশি জ্বর আসলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হবে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, বুধবার চট্টগ্রামে ৪৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে, মঙ্গলবার হয়েছিল ৩৩ জন। ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশির ভাগই শিশু। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩ জন, জুন মাসে ৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। ডেঙ্গু থেকে শিশুদের বাঁচানোর জন্য ফুলহাতা জামা পড়ানো, ঘুমানোর সময় মশারি টাঙাতে হবে। এছাড়াও বাসায় ফুলের টপ থেকেও ডেঙ্গু হতে পারে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরের সদরঘাট এলাকার ১১ বছর বয়সী শ্রাবণী সরকার নামে এক শিশুর শরীরে হঠাৎ কাপুনি দিয়ে জ্বর এসেছে। ধীরে ধীরে শরীর নিস্তেজ হয়ে রাত নয়টার সময় বেসরকারি একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছে সে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে তার মা বিটু সরকার ও ভাই সদীপ সরকার।
শ্রাবণীর বাবা বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, তিন দিন জ্বর থাকার পর শ্রাবণী ও তার ভাইয়ের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনায় তাদের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। মঙ্গলবার শ্রাবণীর জ্বর কমে আসে, সন্ধ্যায় হঠাৎ কাপুনি দিয়ে জ্বর আসলে মেডিকেল নিয়ে যেতে যেতে আমার মেয়ে আর নেই।