মেয়াদোত্তীর্ণ সিনেটরদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ৪০তম সিনেট অধিবেশন। শনিবার বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবনের সিনেট হলে অনুষ্ঠিত হবে এ সিনেট অধিবেশন। এতে সভাপতিত্ব করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৭৩ এর ১৯ (১) ধারা অনুসারে ৯৩ জন মনোনীত ও নির্বাচিত সদস্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট গঠিত হয়। এর মধ্যে উপাচার্যসহ চারজন এবং সরকার কর্তৃক মনোনীত পাঁচজন উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা পদাধিকার বলে নিয়মিত মেয়াদে রয়েছেন।
তবে অধ্যাদেশের ১৯(১) এর ‘জে’ ধারা অনুসারে শিক্ষক প্রতিনিধিদের নির্বাচিত ৩৩ জনের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে ২০১৮ সালের অক্টোবরে। অধ্যাদেশের ১৯ (১) এর ‘আই’ ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েটদের নির্বাচিত প্রতিনিধি ২৫ জনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে। এতে নিয়ম অনুযায়ী সিনেটের ৫৮টি সদস্যপদে নতুন করে নির্বাচনের প্রয়োজন রয়েছে।
এছাড়া, সিনেটে স্পিকার মনোনীত পাঁচজন সংসদ সদস্য, রাষ্ট্রপতি মনোনীত পাঁচজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সিন্ডিকেট মনোনীত পাঁচজন গবেষক এবং একাডেমিক কাউন্সিল থেকে পাঁচজন কলেজ অধ্যক্ষ রয়েছেন, যাদের সবার মেয়াদ প্রায় ২ বছর আগে শেষ হয়েছে।
তবে অধ্যাদেশে বর্ণিত ১৯(২) ধারা অনুযায়ী সিনেটরদের দায়িত্ব ততক্ষণ পর্যন্ত বহাল থাকবে, যতক্ষণ না তাদের উত্তরাধিকার নির্বাচিত, মনোনীত ও নিয়োগপ্রাপ্ত না হয়। ফলে ধারা অনুযায়ী উক্ত সদস্যদের পদ শূন্য হচ্ছে না।
অধ্যাদেশের ১৯(১) এর ‘কে’ ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধিদের পাঁচটি পদ বিগত ৩ দশক ধরে শূন্য রয়েছে। ফলে আসন্ন সিনেটকে ‘অপূর্ণাঙ্গ’ উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে, দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় সিনেট অধিবেশনের নৈতিক বৈধতা নেই বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকবৃন্দ।
রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট ক্যাটাগরির সিনেট সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও আমরা সিনেটে যাচ্ছি এটা আমাদের জন্য লজ্জার। আমাদের যাওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের যেতে বাধ্য করছে। রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েটরা আমাকে তিন বছরের জন্য ম্যানডেট দিয়েছে। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও সঠিক সময়ে নির্বাচন দিতে না পারা প্রশাসনের ব্যর্থতা। মেয়াদোত্তীর্ণ পর্ষদের মাধ্যমে প্রশাসন তাদের পারপাস সার্ভ (উদ্দেশ্য চরিতার্থ) করতে সুবিধা হওয়ায় তারা ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন দিচ্ছেন না। বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৭৩-এর মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসন ও নির্বাচন করার যে আমানত রাষ্ট্র আমাদের দিয়েছে, আমরা তার খিয়ানত করছি।
একই ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত সিনেট সদস্য ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলেন, সিনেট থেকে নির্বাচিত দুইজন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট সিন্ডিকেটে যাওয়ার কথা। কিন্তু পাঁচ বছর সিনেট অধিবেশন হয়ে গেলেও এটার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সুবিধাভোগী একটা গোষ্ঠী ভাবে নতুন নির্বাচন হলে কোন পর্ষদ আসে, সে আশঙ্কা থেকেই হয়তো প্রশাসন নির্বাচন দিতে চায় না।
সিনেটের শিক্ষক প্রতিনিধি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতি ব্যতীত বাকি গণতান্ত্রিক পর্ষদগুলোতে নির্বাচনের হদিস নেই। এ সকল পর্ষদে নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা বারবার প্রশাসনকে অবহিত করেছি। বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা আশা করেছিলাম তিনি নির্বাচনগুলো দেবেন। কিন্তু তিনিও সাবেক উপাচার্যের পথে হাঁটছেন। অদৃশ্য কোনো এক ভয়ের কারণে প্রশাসন নির্বাচন দিচ্ছে না। তাদের ভয় এসব পর্ষদে নির্বাচন হলে তারা জিততে পারবে না। ভিন্ন মতের মানুষেরা কী বলতে চায়, সেগুলো তারা শুনতেই চায় না।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বলেন, অধ্যাদেশ অনুযায়ী সিনেটরদের দায়িত্ব ততক্ষণ পর্যন্ত বহাল থাকবে, যতক্ষণ না তাদের উত্তরাধিকার নির্বাচিত, মনোনীত ও নিয়োগপ্রাপ্ত হয়। ফলে ধারা অনুযায়ী উক্ত সদস্যদের পদ শূন্য হচ্ছে না। তবে আমরা জাতীয় নির্বাচনের পরে জাকসু, সিনেটসহ অন্যান্য সকল প্রশাসনিক ক্ষেত্রে নির্বাচনের আয়োজন করবো।
আসন্ন ৪০তম সিনেট অধিবেশনের আলোচ্যসূচিগুলো হলো-উপাচার্যের ভাষণ, সিনেটের ৩৯তম অধিবেশনের কার্যবিবরণী নিশ্চিতকরণ, ১২ আগস্ট ২০২২ এ অনুষ্ঠিত সিনেটের বিশেষ সভার কার্যবিবরণী নিশ্চিতকরণ, ৩৯তম সিনেট সভার ভার্বেটিম রিপোর্ট অনুমোদন, ২০২২-২৩ সনের (সংশোধিত) এবং ২০২৩-২৪ সনের (মূল) রেকারিং বাজেট অনুমোদন, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের খসড়া বার্ষিক প্রতিবেদন অনুমোদন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অ্যান্ড কলেজকে শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটে রুপান্তর করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কমিটির প্রতিবেদনসহ স্ট্যাটিউট অনুসমর্থনের বিষয় বিবেচনা।