পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলার সীমান্তবর্তী মিয়ানমার সীমান্তের দুর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলোতে র্যাবের অভিযানে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার ৭ জন এবং পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ৩ জন সদস্যকে আটক করা হয়েছে। মূলত ‘হিজরতের উদ্দেশ্যে’ বাড়ি থেকে ‘নিখোঁজ’ তরুণদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেয় কেএনএফ। যৌথবাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ৭ জঙ্গি ও কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফের) তিন সদস্য এই তথ্যই জানিয়েছে। তারা বলেছে, মাসে তিন লাখ টাকা ও খাবারের বিনিময়ে কেএনএফের সঙ্গে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার চুক্তি হয়েছিল।
গতকাল শুক্রবার (২১ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ মিলনায়তনে র্যাবের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।তিনি সাংবাদিকদের জানান, সম্প্রতি কুমিল্লা থেকে বেশ কয়েকজন তরুণ উগ্রবাদে উদ্ধুদ্ধ হয়ে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়। এলিট ফোর্স র্যাব সেই বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এসময় আরও জানা যায়, বেশ কয়েকজন তরুণ ঘর ছেড়ে উগ্রবাদের পথে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। র্যাবের গোয়েন্দা শাখার একটি টিম এমন ৪ তরুণকে এরইমধ্যে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।এ সময় তিনি আরও জানান, জঙ্গিবাদে জড়িয়ে নতুন করে কথিত হিজরতের নামে ঘরছাড়া তরুণরা জামাতুল আনসারের হয়ে পাহাড়ি এলাকার আস্তানায় আশ্রয় নেয়। সেখানে তাদের ভারী অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো, পার্বত্য অঞ্চলের প্রশিক্ষণ শিবিরে অর্ধশতাধিক প্রশিক্ষণার্থী রয়েছে।
এছাড়া অসংখ্য তরুণদের হিজরতের নামে বিভিন্ন ভাবে উৎসাহিত করতো কেএনএফ। খন্দকার আল মঈন আরো জানান, আনিসুর রহমান মাহমুদের নেতৃত্বে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামের উগ্রবাদী সংগঠনে ছয় জন শূরা সদস্য রয়েছে, যারা দাওয়াতি, সামরিক, অর্থ, মিডিয়া ও উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছে। শূরা সদস্য আবদুল্লাহ মাইমুন দাওয়াতি শাখার প্রধান, মাসকুর রহমান সামরিক শাখার প্রধান, মারুফ আহমেদ সামরিক শাখার দ্বিতীয় ব্যক্তি, মোশারফ হোসেন অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান, শামীম মাহফুজ প্রধান উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক এবং ভোলার শায়েখ আলেম বিভাগের প্রধান হিসেবে সংগঠনটিতে দায়িত্ব পালন করছে।খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, তারা অস্ত্র চালনাসহ সশস্ত্র সংগ্রামের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গোপনে পরিচালনার জন্য বান্দরবান ও রাঙামাটির দুর্গম এলাকাকে বেছে নেয়, এজন্য তারা স্থানীয় একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সহায়তা গ্রহণ করে। তারা পার্বত্য অঞ্চলের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হতে তাদের খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি অর্থের বিনিময়ে সংগ্রহ করতো। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের সদস্যদের সাথে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ করে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) র্যাবের অভিযানে রাঙ্গামাটির জেলার বিলাইছড়ির সাইজামপাড়া ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার বাজার এলাকা থেকে র্যাব-৭ ও র্যাব-১৫ এর সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করে পাহাড়ী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এর তিনজন সদস্যকে গ্রেফতার করে জানতে পারে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফের) সদস্য। এসময় একটি জঙ্গি আস্তানা ধ্বংস করা হয় এবং সেখান থেকে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। তবে সেখানে তাদের আরও বেশ কয়েকটি আস্তানা থাকতে পারে বিধায় যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে বলে জানায় র্যাব।