পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের শুমারি পরবর্তী মূল্যায়নের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) করা জনশুমারির তথ্য ঠিক আছে কি না সেই বিষয়টি মাঠ পর্যায়ে যাচাই-বাছাই করবে বিআইডিএস। এজন্য প্রতিষ্ঠানটিকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
সোমবার (৩ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস জনশুমারির পরবর্তী মূল্যায়ন করার জন্য এক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী করে। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মতিউর রহমান। সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। বক্তব্য দেন জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের পরিচালক মো. দিলদার হোসেন, পিইসি কার্যক্রমের সমন্বয়কারী ড. ইউনূস।
অনুষ্ঠানে বিআইডিএস জানায়, জনশুমারি প্রকল্পের তৃতীয় পক্ষের তদারকি কাজ শুরু হচ্ছে আগামী ১০ অক্টোবর। দেশের ৩৫৪টি নমুনা এলাকায় নতুন করে তথ্য সংগ্রহ শুরু করবে বিআইডিএস। আগামী ৯ অক্টোবর রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে শুরু হয়ে এ কার্যক্রম চলবে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, ট্যাবের মাধ্যমে কম্পিউটার অ্যাসিসটেড পারসোন্যাল ইন্টারভিউয়িং (সিএপিআই) পদ্ধতিতে এটি করা হবে। ৯ অক্টোবর রাত ১২টা ১ মিনিটে নির্ধারিত এলাকার অবস্থান করা সব দেশি-বিদেশি নাগরিককে গণনার আওতায় আনা হবে। এছাড়া ছয় মাসের কম সময়ের জন্য সাময়িকভাবে বিদেশে অবস্থান করা নির্দিষ্ট এলাকার সব বাংলাদেশি নাগরিককে পুনরায় গণনা করা হবে। এরপর নতুন তথ্যের সঙ্গে আগে পাওয়া শুমারির তথ্য মিলিয়ে দেখে বলা যাবে শুমারিতে কতটি ভুলক্রুটি হয়েছে। তারপর ওই তথ্য সমন্বয় করে জনশুমারির মূল প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, একটি সুখবর আছে। মূল্যস্ফীতির পাগলা ঘোড়ার লাগাম টানা সম্ভব হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি তথ্য প্রকাশ করা হবে। আগস্টে মূল্যস্ফীতি বেড়েছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বরে সেটি কমেছে। এ কারণ হচ্ছে ১ কোটি ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ৪ কোটি লোক সুবিধা পাচ্ছে। সেই সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে যারা সরাসরি মূল্যস্ফীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তারা উপকৃত হয়েছেন। ফলে মূল্যস্ফীতিতে লাগাম টানা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, জনগণের টাকা ব্যয় করে এই শুমারি করা হয়েছে। এখন পরবর্তী মূল্যায়নও করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে বড় অঙ্কের এই টাকার সঠিক ব্যবহার হয়। এই টাকা খরচের দায়িত্ব যেমন বিরল সম্মানের তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা স্বাধীনভাবে কাজ করুণ।
ড. শামসুল আলম বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বিবিএস একটি ভালো শুমারি করেছে। এখন সেটি পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিবিএসকে আরও একটু স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। ভারতে পরিসংখ্যান সংস্থা যেভাবে স্বাধীনতা ভোগ করে বাংলাদেশে সেটি হচ্ছে না। পরিসংখ্যান ব্যুরোকে আরও হালনাগাদ তথ্য দিতে হবে।
মামুন-আল-রশীদ বলেন, পিইসি কমিটি যে এটা স্বাধীনভাবে করবে তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এরমধ্যেই তারা কাজের শুরুতেই মেন্টাল ও ইথিক্যাল দিকটি নিশ্চিত করেছে। ফলে এটা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে ভালো মূল্যায়ন হবে। তথ্য যদি সঠিক না হয় তাহলে পরিকল্পনাও সঠিক হবে না। এ বিষয়টি সবাইকে মাথায় রাখতে হবে।
ড. শাহনাজ আরেফিন বলেন, সংখ্যাতত্ত্ব হচ্ছে টেবিলের পায়ের মতো। যার মাধ্যমে টেবিলটি দাঁড়িয়ে থাকে। তেমনি সঠিক পরিসংখ্যান না হলে কোনো পরিকল্পনাই সঠিক হবে না। ইউএন গাইড লাইন অনুসরণ করেই আমরা জনশুমারি করেছি। আশা করছি পিইসির মাধ্যম বাকি যদি ভুল ক্রটি থাকে তাহলে উঠে আসবে। এর মাধ্যমে বিবিএস বলে দেবে কতটা পরিশুদ্ধ হয়েছে জনশুমারির কার্যক্রম।