অভাবের সংসারে দুঃখের ছিল না রাহেনার (৩২)। অপরিণত বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাকে। কিন্তু সেখানেও একই অন্ধকার। শেষমেষ সুন্দর জীবনের আশায় রাহেনা পাড়ি জমায় জর্ডানে। তবু ভাগ্য তার অনুকূলে থাকে না। প্রবাসে থাকতেই স্বামী তাকে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেয়। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তার। ঠিক তখনই রাহেনার পাশে এসে দাঁড়ায় শ্রীলঙ্কান যুবক মিতল (৩৩)। তারপর ধীরে ধীরে গাঢ় হয় রাহেনা-মিতলের প্রেম। অবেশেষে প্রেম থেকে বিয়ে।
তারা এখন স্বামী-স্ত্রী হিসাবে বসবাস করছেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার দোগাছী ইউনিয়নের উত্তর পাথুরিয়া গ্রামে।
রাহেনা বেগম জানান, অভাব অনটনের সংসারের কারণে ছোট বয়সে বিয়ে হলেও স্বামীর সংসারেও যেন অভাব শেষ হয় না। একটা ছেলেও হয়। অভাবের সংসারের হাল ধরতে ২০১৪ সালে কাজ নিয়ে জর্ডানে যান রাহেনা। একই কোম্পানিতে সুপারভাইজার হিসাবে কাজ করতেন শ্রীলঙ্কান যুবক রওশন মিতল।
মিতল দেড় বছর আগে তার নিজ দেশ শ্রীলঙ্কায় চলে যান। রাহেনাও বাংলাদেশে চলে আসেন। মোবাইল ফোনে তাদের যোগযোগ ছিল। গত ২০ সেপ্টেম্বর রওশন প্রেমের টানে শ্রীলঙ্কা থেকে ঢাকায় আসেন। রাহেনা তাকে ঢাকা বিমানবন্দরে গ্রহণ করে জয়পুরহাট নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। ২২ সেপ্টেম্বর তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর তারা আদালতে এফিডেফিট করেন।
রাহেনা বলেন, মিতলের পরিবার এই বিয়ে মেনে নিয়েছেন। আমার পরিবারের সম্মতিতে আমি বিয়ে করেছি। রওশনের পরিবারের লোকজন ভালো বলে দাবি করেন রাহেনা। বিয়েতে রাহেনার পরিবার খুশি। মিতন আধো আধো বাংলা বলতে পারায় তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
মিতল বলেন, মেয়ের পরিবার পছন্দ করায় রাহেনাকে বিয়ে করেছি। আমি এখানেই থাকতে চাই। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি।
রাহেনার বাবা শাহাদুল ইসলাম বলেন, আমার মেয়ে রাহেনা জর্ডানে ছিল। ছেলেও জর্ডানে ছিল। একই কোম্পানিতে কাজ করতেন তারা। দুজনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক তাদের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত জামাই মেয়ে ভালো আছে। ছেলে বাংলাদেশে থাকতে চাইলে বাড়ি করার জন্য জমি দেব। আর যদি তার দেশে যেতে চায়, যাবে। তাতেও আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি দোয়া করি, তারা যেন সুখে শান্তিতে থাকে।
দোগাছী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামছুল আরেফিন সুমন বলেন, শ্রীলঙ্কান যুবক মিতলের সঙ্গে উত্তর পাথুরিয়া গ্রামের শাহাদুল ইসলামের মেয়ে রাহেনার বিয়ের কথা শুনেছি। তারা এখন ভালো আছেন বলেও জানান তিনি।