টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার পাকুটিয়া বৃন্দাবন চন্দ্র রাধা গোবিন্দ (বিসিআরজি) উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুরে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। এতে হুমকিতে রয়েছে দেলদুয়ার-কালামপুর আঞ্চলিক মহা সড়কসহ স্কুল ও খেলার মাঠ। এছাড়া স্কুলের মাঠ ভরাটের নাম করে প্রধান শিক্ষক স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে ভ্যেকু দিয়ে ওই পুকুরের মাটি বিনা টেন্ডারে ইট ভাটাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে। মাটি বিক্রির মোটা অঙ্কের টাকা ও স্কুল ফান্ডের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর পক্ষে কফিল উদ্দিন, মো. কাদের খান ও মো. শামীম খান জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন বলে জানা গেছে।
এলাকাবাসী ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পাকুটিয়া বৃন্দাবন চন্দ্র রাধা গোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রায় ৩ একর আয়তন বিশিষ্ট একটি বিশাল পুকুর রয়েছে। পুকুরটি সংস্কারের নামে প্রাথমিক অবস্থায় খননের কাজ শুরু করে। প্রথমে পুকুর সংলগ্ন মাঠ ভরাট করার অজুহাতে সামান্য কিছু মাটি মাঠে ফেলার পর বাকী মাটি রাতের অন্ধকারে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ইট ভাটা, নীচু বাড়ি ও ছোট জলাশয় ভরাটের জন্য বিক্রি করে। বিক্রির টাকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষা ও ম্যানেজিং কমিটির কতিপয় সদস্যের যোগ সাজে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করে। এতে বিদ্যালয়ের অপূরণীয় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
অভিযোগে আরো জানা যায়, অবৈধ ড্রেজার ও ভ্যেকু বসিয়ে দেদারসে মাটি বিক্রি করে নাম মাত্র টাকা বিদ্যালয় তহবিলে দিয়ে বাকী টাকা লুটপাট করেছে। চক্রটি মাটি বিক্রি করেই থেকে থাকেনি ওই পুকুরে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে মেতেছে। পুকুরের পূর্ব ও দক্ষিণ পাশে চলমান রয়েছে আ লিক মহা সড়কের কাজ। স্থানীয়দের আশঙ্কা, ড্রেজার দিয়ে পুকুর থেকে বালু উত্তোলনের কারণে যে কোন সময় ধসে যেতে পারে পুকুরের দুই পাশের মহা সড়ক। স্থানীয় ওবায়দুর রহমান বলেন, স্কুলের মাঠ ভরাটের অজুহাতে একটি মহল পুকুরের মাটি বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। মাটি খেকোরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করছে না। এছাড়া বাংলা ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে স্কুল ক্যাম্পাস, খেলার মাঠ, মহা সড়ক ও পূর্ব পাশে অসংখ্য বসত বাড়ি ভয়াবহ ভাঙ্গণের আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
পুকুর খনন ও মাঠ ভরাটের জন্য স্কুল ফান্ড থেকে টাকা উত্তোলন প্রসঙ্গে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অভিভাবক সদস্য মো. আরিফ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি জানেন। অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক মো. শামীম হুদা বলেন, স্কুলের প্রয়োজনে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। মাটি বিক্রির টাকা বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হচ্ছে। অবশিষ্ট টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক বলেন, পুকুর খনন ও মাঠ ভরাটের জন্য পুকুর থেকে প্রথমে ৯০ হাজার মাটি উত্তোলনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু মাটির দাম কম হওয়ায় স্কুলের পক্ষ থেকে ড্রেজার ও ভ্যেকু বসানো হয়। ড্রেজার ও ভ্যেকুসহ আনুষঙ্গিক খরচের জন্য ৭০ হাজার মাটি বাহিরে বিক্রি করা হয়েছে। বাকী ২০ হাজার মাটি দিয়ে পুকুরের পাড় ও মাঠ ভরাট করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান জানান, এবিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন কোন ভাবেই করতে পারবে না।