বর্তমান যুগে ধীরে ধীরে সব কাজই হয়ে উঠছে ইন্টারনেটনির্ভর। মানুষ আরও বেশি সময় কাটাচ্ছে অনলাইনে। ফলে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টায় ডিজিটাল বিজ্ঞাপনও বাড়ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে ২০২৩ সালেও। তবে করোনাভাইরাস মহামারি পরবর্তী বৈশ্বিক বিজ্ঞাপনের বাজারে যে সুসময় শুরু হয়েছিল, নতুন বছরে তা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
বিজ্ঞাপনী জায়ান্ট ডেন্টসু’র পূর্বাভাস বলছে, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞাপনী আয় পাঁচ শতাংশের বেশি বেড়ে ৭৮ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে। কিন্তু প্রকাশকরা বিজ্ঞাপনের জন্য আরও বেশি অর্থ দাবি করার কারণেই মূলত এ খাতে আয় বাড়বে।
দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিজ্ঞাপনদাতারা দ্বিধান্বিত হয়ে উঠতে পারেন, বিশেষ করে পশ্চিমারা। কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটতে পারে বিজ্ঞাপন ও বিপণন সংস্থাগুলো।
তবে মহামারির মধ্যে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনে যে সুসময় শুরু হয়েছিল, তা আরও ফলদায়ক দেবে। ২০২৩ সালে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের পেছনে আরও বেশি অর্থ ঢালা হবে, যা মোট বিজ্ঞাপনী ব্যয়ের ৫৭ শতাংশ দখল করতে পারে।
এর মধ্যে মোবাইল বিজ্ঞাপনে ব্যয় বাড়বে সবচেয়ে বেশি। অনলাইন গেম ও ক্ষুদ্র ভিডিওর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কারণে এই খাতে ব্যয় বাড়াতে আগ্রহী হবেন বিজ্ঞাপনদাতারা।
ভারত-ব্রাজিলের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ডিজিটাল মিডিয়া ভোক্তার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ফলে নতুন বছরে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের বাজারে নেতৃত্ব দেবে এরাই। তবে উদীয়মান বাজারগুলোতে মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জায়ান্টদের মুনাফা কমবে।
বাজার গবেষণা সংস্থা ই-মার্কেটারের ধারণা, ২০২৬ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মোট বিজ্ঞাপনী ব্যয়ের ৮০ শতাংশের বেশি দখল করবে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন। ওই বছর দেশটিতে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনী ব্যয় বেড়ে ৩৮ হাজার ৫৪৭ কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে এখনো সবচেয়ে বেশি ডিজিটাল বিজ্ঞাপন পায় ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটা। কিন্তু এর হার ক্রমেই কমছে। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মোট ডিসপ্লে বিজ্ঞাপনের ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ পেয়েছিল মেটা, ২০২৪ সালেই তা কমে ৩০ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়াবে।
তবে মেটাভার্স সফল হলে পরিস্থিতি না-ও বদলাতে পারে। অন্যথায় মেটার বিজ্ঞাপনগুলো অ্যামাজন, টিকটক, সিটিভির মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে চলে যাওয়া বাড়তেই থাকবে।
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, নতুন বছরে গোপনীয়তা সংক্রান্ত উদ্বেগও জোরালো হবে। নিয়ন্ত্রক ও ভোক্তারা ‘কুকিজ’ দূর করতে বিজ্ঞাপনী জগতের ওপর চাপ দিচ্ছেন।
গ্রাহকদের তথ্য সংগ্রহ বন্ধ করতে তৃতীয় পক্ষকে ব্লক করার সুবিধা দিচ্ছে অ্যাপল। সংস্থাটির এই সিদ্ধান্ত ডিজিটাল বিজ্ঞাপনদাতাদের ওপর চাপে বাড়াবে। তবে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কুকি-ব্লকিং সার্ভিস বিলম্বিত করার বিষয়ে গুগলের সিদ্ধান্ত বিজ্ঞাপনদাতা এবং বিজ্ঞাপন-নির্ভর ব্যবসা উভয়কে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে।
এই ‘কুকিজ’ বিতর্কে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও মেটার। সংস্থাটি তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় তৃতীয় পক্ষের ডেটার ওপর বেশি নির্ভরশীল।
তবে আমাজন এবং ওয়ালমার্টের মতো যেসব ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের কাছে ক্রেতাদের প্রচুর ডেটা রয়েছে, তারা লাভবান হবে। গ্রাহকদের আরও ভালোভাবে নিশানা বানাতে তাদের ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহার করতে চাইবে অন্য কোম্পানিগুলো।