ভারতের সমর্থকরা খুব করে চেয়েছিলেন সুপার ফোরের গুরুত্বপুর্ণ এ ম্যাচে জিতুক আফগানিস্তান। তাহলে বিরাট কোহলিদের ফাইনালে খেলার আশা কিছুটা হলেও বেঁচে থাকবে। কিন্তু ভারতীয়দের স্বপ্ন চূরমার করে দিয়েছেন নাসিম শাহ ও মোহাম্মদ হাসনাইন। শেষ উইকেট জুটিতে শ্বাসরুদ্ধকর ও নাটকীয় জয়ে এশিয়া কাপের ফাইনাল নিশ্চিত করলো পাকিস্তান। আফগানিস্তানের সঙ্গে বিদায় নিলো ভারতও।
আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১২৯ রান সংগ্রহ করে আফগানিস্তান। জবাবে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে চার বল হাতে রেখে ৯ উইকেট হারিয়ে কাঙ্ক্ষিত জয় তুলে নেয় পাকিস্তান।
ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় পাকিস্তান। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই বাবরকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন ফজলহক ফারুকি। আফগান পেসারের বলে গোল্ডেন ডাকে ফেরেন এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত সুবিধা করতে না পারা পাকিস্তান অধিনায়ক। এর আগে আফগানিস্তান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবিও গোল্ডেন ডাক করে ফিরেন। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে দ্রুত এক রান নিতে গিয়ে ননস্ট্রাইকে রানআউট হন ফাখর জামান। ফেরার আগে ৯ বলে ৫ রান।
তবে আগের ম্যাচগুলোর মতোই ক্রিজ আঁকড়ে পড়ে থাকেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ইফতিখারকে সঙ্গে নিয়ে বাড়াতে থাকেন রানের চাকা। তবে ৩২ বল স্থায়ী এই জুটি তুলতে পেরেছে মাত্র ২৭ রান। আফগানদের আঁটোসাটো বোলিংয়ে যেন খাবি খাচ্ছিলেন পাক ব্যাটাররা। সেটা আর কুলিয়ে উঠতে পারেননি রিজওয়ান। রশিদ খানের গুগলিতে এলবিডব্লিউ হন তিনি। আম্পায়ার সায় দিলে ফিরতে হয় তাকে। ফেরার আগে ২৬ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায় ২০ রান করেন তিনি।
মাত্র ৪৫ রানে পাকিস্তানের ৩ টপ অর্ডারকে ফিরিয়ে ভালোই চেপে ধরেছিলেন রশিদ-ফারুকীরা। রিজওয়ান যখন আউট হলেন, তখনও জয়ের জন্য প্রয়োজন ৮৫ রান। হাতে ছিল ৫৮ বল। তবে সেই চাপ সামাল দেন চতুর্থ উইকেট জুটিতে শাদাব খান ও ইফতিখার আহমেদ। ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে পাকিস্তানকে দেখাতে থাকেন জয়ের স্বপ্ন। ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে ছক্কায় বল গ্যালারি ছাপিয়ে পাশের রাস্তায় নিয়ে ফেলেন শাদাব খান। আর অন্য প্রান্ত আগলে রাখছিলেন ইফতিখার।
তবে ষোলতম ওভারের তৃতীয় বলে আফগানদের ব্রেক-থ্রো এনে দেন ফরিদ আহমেদ। এই পেসারের শর্ট লেংথের স্লোয়ার বলটি পুল করে উড়িয়ে মেরেছিলেন ইফতিখার। তবে ডিপ মিডউইকেটে ইব্রাহিম জাদরান ক্যাচ লুফে নিয়ে ৪১ বলে ৪২ রানের জুটিটি ভাঙে। ফেরার আগে ২ চারে ৩৩ বলে ৩০ রানের একটি ইনিংস খেলেন তিনি।
পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে রশিদ খানের আউটসাইড অফের বলটি লং অফ দিয়ে সীমানা ছাড়া করতে চেয়েছিলেন শাদাব। কিন্তু শর্ট থার্ড ম্যানে দাঁড়িয়ে থাকা আজমতউল্লাহ ওমরজাই তা লুফে নেন। তাতে ২৬ বলে ৩৬ রানের এক ঝড়ো ইনিংস থামে। ৩ ছক্কা ও ১ চারে সাজানো ছিল তার ইনিংসটি।
মাঠে নেমেই রশিদ খানের বলে স্লগ সুইপে ছক্কা মারেন আসিফ। কিন্তু আফগানিস্তান দলটা যেন ফুটবলের জার্মানি দলটার মতো। হারার আগে তারা হারতে চায় না। শেষ পর্যন্ত স্নায়ু ধরে রাখতে জানে তারা।
তাই তো পরের ওভারেই জোড়া আঘাত হানেন ফজল-হক ফারুকী। ফেরত পাঠান মোহাম্মদ নেওয়াজ ও খুশদিল শাহকে। তাতে হারের শঙ্কা দেখা দেয় পাকিস্তান দুর্গে। সেই শঙ্কা আরও ঘনীভূত হয় পরের ওভারে ফরিদের করা দ্বিতীয় বলেই যখন বোল্ড হলেন হারিস রউফ। তবে আসিফ আলির ছক্কায় ফের মোড় ঘুরে যেত! কিন্তু ফরিদের শর্ট বল এজ হয়ে করিম জানাতের হাতে ধরা দিলে ফিরে যেতে হয় আসিফকেও। ৮ বলে ২ ছক্কায় ১৬ রান করে আউট হয়ে যান। তাতে আফগানরা জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়।
কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শেষ বলে কিছু নেই। সেটাই যেন দেখালেন পেসার নাসিম শাহ। ফারুকির শেষ ওভারে দুই ফুলটসে নাসিমের ছক্কায় ম্যাচ জিতে নেয় পাকিস্তান। তাতে উল্লাসে ফেটে পড়েন আসিফরা।
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম। আগে ব্যাট করতে নেমে স্কোর বোর্ডে ৩৬ রান তুলতেই প্রথম উইকেট হারায় আফগানিস্তান। ১১ বলে ১৭ রান করা রহমানউল্লাহ গুরবাজকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান হারিস রৌফ।
পরের ওভারে ১৭ বলে ২১ রান করা আরেক ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাইকে বোল্ড করেন মোহাম্মদ হাসনাইন। দুই ওপেনারের বিদায়ের পর দলীয় সর্বোচ্চ ৩৫ রানের ইনিংস খেলেন ইবরাহিম জাদরান। এছাড়া কারিম জানাত ১৫, নাজিবুল্লাহ জাদরান ১০, মোহাম্মদ নবী ০ রান করে ফেরেন সাজঘরে।
শেষ দিকে আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের ১০ ও রশিদ খানের ২ চার, ১ ছক্কায় ১৮ রানে ১২৯ রান তোলে আফগানরা।
পাকিস্তানের পক্ষে ২ উইকেট নেন হারিস রৌফ। ১টি করে উইকেট নেন নাসিম শাহ, মোহাম্মদ হাসনাইন, মোহাম্মদ নওয়াজ ও শাদাব খান।