জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে নবনির্মিত আবাসিক হলগুলো চালু করা সাপেক্ষে পুরাতন হলগুলোতে গণরুম না রাখার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে নানা জটিলতায় নতুন হলগুলো উদ্বোধন করতে পারেননি তারা। ফলে কয়েকদফায় প্রথম বর্ষের (৫১তম ব্যাচ) ক্লাস শুরুর সময়সূচি পিছিয়ে মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) ক্লাস থেকে শুরু হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য একটি করে হল চালু করা হয়েছে। তবুও অব্যবস্থাপনা ও অছাত্রদের দাপটে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গণরুমেই ঠাঁই মিলেছে। তবে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে নির্মিত সবগুলো হল চালু হলে গণরুম সমস্যা সমাধান হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নবীন শিক্ষার্থীরা হলের কমন রুম, ডাইনিং রুম, রিডিং রুম, সংসদ রুম, নামাজের কক্ষ ও সাইবার রুম প্রভৃতি স্থানে গাদাগাদি করে থাকছেন। সেখানে একজনের জায়গায় কম করে হলেও তিন থেকে চারজন শিক্ষার্থীকে থাকতে হচ্ছে। এছাড়া দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা গণরুম ছেড়ে ‘মিনি গণরুমে’ উঠেছেন। সেখানে তারা দু’জনের রুমে ছয় থেকে আটজন এবং চার জনের রুমে ১৪ থেকে ১৬ জন থাকছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের হলগুলো ৪৩ ও ৪৪তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছেন। আবার ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন ৪২ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীরাও হলে থাকছেন। অন্যদিকে নবনির্মিত দু’টি হল চালু করা হলেও সেখানে নবীন শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। সেখানে আবেদনের ভিত্তিতে পুরাতন হলের শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে পুরাতন হলের ফাঁকা আসনগুলো ‘মিনি গণরুমে’ থাকা তৃতীয় বর্ষের (৪৯তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা দখল করছেন। ফলে গণরুমে থাকা দ্বিতীয় বর্ষের (৫০তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা উঠছেন ‘মিনি গণরুমে’। সবমিলে অছাত্ররা হলে অবস্থান করায় এবং অব্যবস্থাপনায় নবীন শিক্ষার্থীদের গণরুমে থাকতে হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের হলগুলোতে প্রশাসনের ‘বিন্দুমাত্র কর্তৃত্ব’ নেই বললেই চলে। যেটুকু রয়েছে তা হল স্বাক্ষরদান ও হল অফিস পরিদর্শন। এছাড়া আসন বরাদ্দ ও শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা সংক্রান্ত কোনো কাজে শিক্ষকরা তদারকি করেন না। কিন্তু হলের মধ্যে বড় কোনো ঝামেলা হলেই কেবল দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দেখা মেলে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ও হল প্রশাসনের পর্যাপ্ত কর্তৃত্ব রয়েছে। ফলে এ হলগুলোতে আসন বরাদ্দ সংক্রান্ত বিষয়াদি হল প্রশাসনই তদারকি করে। ফলে সেখানে আসন সংকট থাকলেও সঠিক ব্যবস্থাপনা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, গণরুমগুলোর অবস্থা সবারই জানা। সবথেকে বড়ো আশঙ্কা হচ্ছে- বিভিন্ন সিজনাল রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম টার্গেট গণরুমের শিক্ষার্থীরা। গণরুমে না রাখার জন্যই আমাদের ক্লাস শুরু করতে প্রশাসন দীর্ঘ সময় নিয়েছে। তবুও শেষমেশ আমাদের গণরুমে ওঠানো হয়েছে। একদিকে আমরা সেশনজটে পড়েছি, অন্যদিকে গণরুমেই থাকছি। আমরা ভেবে রেখেছিলাম নবীনদের নতুন হলে আসন বরাদ্দ দেওয়া হবে। এখন দেখছি আশার গুড়েবালি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফি বলেন, নতুন হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওঠানো হয়নি। তবে শীঘ্রই নবনির্মিত অন্য চারটি হল চালু করে আবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের ওঠানো হবে। সেখানে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া হল থেকে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ার জন্য সবগুলো হলের প্রাধ্যক্ষদের নির্দেশ দিয়েছি। তাদের বের করতে পারলে এবং নতুন হলগুলো চালু হলে গণরুম সংকট নিরসন হবে।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে এর আগে তিনি গণমাধ্যমে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনির্মিত সবগুলো হল চালু হলে আবাসন সংকট কমে যাবে এবং গণরুম সংস্কৃতি ওঠে যাবে।’