১. বিশ্বের কমিউনিস্ট ও ওয়ার্কার্স পার্টিগুলোর ২৪তম আন্তর্জাতিক সম্মেলন লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হওয়ার কথা ছিল। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ছিল ওয়ার্কিং কমিটির সভা। ২৫, ২৬ ও ২৭ অক্টোবর ছিল আন্তর্জাতিক সম্মেলন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ওয়ার্কিং কমিটিরও সদস্য। ওই সম্মেলনে পার্টির পক্ষ থেকে আমার যোগদানের কথা ছিল। এবারের সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয় (থিম) ছিল- পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সংগ্রামকে শক্তিশালী করতে, ফিলিস্তিনি জনগণের সমর্থনে এবং এর প্রতিরোধের জন্য। জাতীয় ও সামাজিক মুক্তির জন্য, প্রগতি ও সমাজতন্ত্রের জন্য।
২. লেবাননের কমিউনিস্ট পার্টি ছিল এবারের এই সম্মেলনের আয়োজক। সভার আমন্ত্রণপত্রে কয়েক মাস আগে তারা জানিয়েছিলেন, এই সময়টি আমাদের পার্টির শতবর্ষ উদযাপনের সঙ্গে মিলে যায় এবং এটি আমাদের পার্টির রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংহতির সুযোগ করে দেবে। সম্মেলনটি একটি ব্যতিক্রমী সময়েও আহ্বান করা হয়েছে। যেখানে লেবাননের দক্ষিণসহ আমাদের অঞ্চলের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী আগ্রাসন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং গাজাসহ সমগ্র ফিলিস্তিনে জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যামূলক যুদ্ধ শুরু হয়েছে।
অতএব, বৈঠকের একটি ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক ও সংহতির তাৎপর্য রয়েছে এবং লেবাননে এই সম্মেলনটি বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট এবং শ্রমিক আন্দোলনের আন্তর্জাতিক সংহতি এবং সমর্থনের অভিব্যক্তি হিসাবে আসবে।
৩. লেবাননে ইসরাইলি বর্বর হামলার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। এটাই বাস্তবসম্মত। প্রতিদিন আমরা বৈরুতে ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞ দেখছি। এর বিরুদ্ধে সারা বিশ্বের কমিউনিস্ট ও ওয়ার্কার্সপার্টি এবং শান্তিকামী মানুষ প্রতিবাদ করছে। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী মদদপুষ্ট ইসরায়েল তার বর্বরতা বন্ধ করেনি।
৪. প্রথমত রাজনৈতিক কারণে পৃথিবীর অনেক জায়গায় যাওয়ার সুযোগ হলেও বৈরুতে যাওয়া হয়নি। লেবাননের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেখা হয়েছে। তাদের লড়াকু সংগ্রামী ইতিহাস আমরা জেনেছি। অনুপ্রাণিত হয়েছি।
সেই ছোটবেলা থেকে বৈরুতের নাম শুনলেই বারুদের ছবি ভেসে উঠত। বৈরুত মানে যেন যে কোনো সময় যুদ্ধাবস্থা আর ধ্বংসযজ্ঞ। এবারেও বৈরুতের সম্মেলনে যোগদানের কথা ওঠায় অনেকে আশঙ্কা বলেছিলেন, যে যুদ্ধাবস্থা চলছে এর মধ্যে যাবেন?
নানা বিবেচনায় পার্টির পক্ষ থেকে এই সম্মেলনে আমার যোগদানের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয় এবং আয়োজকদের জানিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে আয়োজকরাও উৎসাহিত ছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। আমি আশা করেছিলাম, ছোটবেলা থেকে নাম শোনা বৈরুতকে দেখব। শতবর্ষের লেবাননের কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস ঐতিহ্য জানা হবে। সেটা এবার হচ্ছে না।
৫. সর্বশেষ কিউবাতে বিশ্বের কমিউনিস্ট এবং ওয়ার্কার্স পার্টির নেতাদের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। এবারও দেখা হবে। সারা বিশ্বের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে, বিভিন্ন দেশে কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর আন্দোলন সম্পর্কে জানা হবে। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, পুঁজিবাদী শোষণের বিরুদ্ধে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্র, সমাজতান্ত্র তথা মানবমুক্তির সংগ্রামকে অগ্রসর করতে আমরা পরস্পরের অভিজ্ঞতা বিনিময় ও কর্মপন্থার কথাও বিবেচনা করতে পারব। সেটি হয়তো একসঙ্গে বসে করা গেল না। কিন্তু আমাদের সংগ্রাম চলবে।
মুক্ত মানবের মুক্ত সমাজ গড়ার সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। এ জন্য আন্তর্জাতিক সংহতি জোরদার করা হবে।
৬. সম্প্রতি বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে জনআকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে তা নস্যাৎ করতে গণতন্ত্রবিরোধী, সাম্প্রদায়িক, সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তি তৎপর রয়েছে। এর বিরুদ্ধে বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তির ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম ও গণজাগরণ গড়ে তুলতে আমরা আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখব।
৭. মানুষ ও প্রকৃতির মুক্তির সংগ্রাম অগ্রসর করতে বিশ্বের কমিউনিস্ট ও ওয়ার্কার্স পার্টিসমূহের মৈত্রী বন্ধন আরও দৃঢ় হবে- এটাই প্রত্যাশা।