স্টাফ রিপোর্টার:
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন ছয় থানা কমিটির পূর্ণাঙ্গসহ প্রস্তাবিত কমিটি সম্প্রতি জমা দিয়েছে নেতৃবৃন্দ। কিন্তু কমিটি জমা দেয়ার পর পরেই সেই প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে ছড়িয়ে পরেছে নানা বিতর্ক। যা নিয়ে ক্ষোভ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে খোদ মহানগর আওয়ামী লীগের তৃণমূলে।
আওয়ামী লীগের মহানগরের তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, প্রস্তাবিত কমিটিতে ত্যাগী ও দলের নিবেদিতদের এড়িয়ে বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের জায়গা করে দেয়া হয়েছে।মাদক ব্যবসায়ী, সাজাপ্রাপ্ত মামলার আসামি, যুবদলের সাবেক নেতাকে দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আনলে তার খেসারত দিতে হবে বলেও মনে করেন তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১০ মে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন শফিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হিসাবে কমিটি ঘোষণা করে।কিন্তু সেই সময় প্রতিটা কমিটি সার্কিট হাউসে রাতের আঁধারে টাকা লেনদেনে করা হয়েছে বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে। এছাড়াও কোন কমিটি সম্মেলন স্থলে ঘোষণা করা হয়নি ।আর এসব কারণে সেই ছয় থানার কমিটি অনুমোদন দেয়নি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। ফলে কমিটি হলেও কার্যক্রম স্থগিতই ছিল। সে সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আলোচিত সাখাওয়াত হোসেন শফিক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাফিউর রহমান সাফি ও সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডলের বিরুদ্ধে অনেক নেতা কর্মী
লিখিত অভিযোগ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় জমা দেয় বলেও জানা যায়।
তবে সেই প্রস্তাবিত কমিটি এবার বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ করার জোর তদবির চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
একাধিক দলীয় সূত্রে জানা যায়, রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের থানা কমিটি গুলোর মধ্যে কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রথমে গোলাম রব্বানী বিপ্লব এর নাম লিখে ঘোষণা দেয় তৎকালীন দায়িত্ব প্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক। কিন্তু রব্বানীর কাছে টাকা না পেয়ে পরবর্তীতে তার নাম কেটে দিয়ে উপরে শাহাজাদা আরমান কে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দেন তিনি । এই শাহাজাদা আরমান প্রথমে জাসদ এবং পরে যুবদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। বিপুল টাকার বিনিময়ে সাধারণ সম্পাদক পদে সিলেকশন পান।পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে হারধান চন্দ্র রায়ের নাম এসেছে। তিনি রংপুরের ৪ নং ওয়ার্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী হিসাবে অনেকবার জেলে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজির মামলা এখনো চলমান।মাহিগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত সভাপতি হিসাবে তাজুল ইসলামের নাম এসেছে। তার বিরুদ্ধে যুবদল করার অভিযোগ রয়েছে। তার স্ত্রী এখনো জাতীয়তাবাদী যুব মহিলা দল করেন। টাকার বিনিময়ে তিনি আওয়ামী লীগের পদে আসতে চান বলেও জানা গেছে। তাজহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত সভাপতি হিসাবে নাম এসেছে ইমাদ মিয়ার। তিনি মহানগরের স্থানীয় বাসিন্দাই নন। তার বাড়ি মিঠাপুকুর উপজেলায়। তার দাদা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া হারাগাছ থানা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম মাদকাসক্ত এবং মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তাজহাট থানা আ’লীগের সভাপতি ইমাদ মিয়া বলেন,আমার ছয় থানা কমিটি নিয়ে একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করছে।আর পশুরাম থানা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক হারাধন রায় বলেন,আমি দুইবারের কাউন্সিলর অনেকে রাজনীতির কারণে মামলায় জড়িয়েছে।
হাজীরহাট থানা আ’লীগ নেতা গোলাম সরওয়ার মির্জা বলেন, থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন দিনে অনুষ্ঠিত হয় আর গভীর রাত পর্যন্ত সার্কিট হাউসে বসে দ্বিতীয় অধিবেশনের নামে টাকা নিয়ে তারপর কমিটি ঘোষণা করে তৎকালীন দায়িত্বপ্রায় আ’লীগ নেতা শফিক।
তাজহাট থানা আ’লীগ নেতা নেছার মিয়া বলেন,এই থানায় রাতের আধারে টাকা নিয়ে রাজাকার পরিবারের সদস্যকে সভাপতি করা হয়েছে। বিষয়টি কেন্দ্রেও লিখিত অভিযোগ করেছিলাম আমরা।
মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম রাব্বানী বিপ্লব বলেন,আমি যখন কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হই তখন প্রথম কাগজে আমার নাম ঘোষণা করা হলেও পরবর্তীতে আমার নাম কেটে দিয়ে টাকার বিনিময়ে আরেকজকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল।
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডাক্তার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ছয় থানা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তাই এখন পর্যন্ত কোনো অনুমোদন দেয়া হয়নি এবং আমরা বিষয় গুলো কেন্দ্রে অবগত করেছি।