ইসরায়েলের অন্তত ৯টি সামরিক স্থাপনায় একযোগে আবারও মুহুর্মুহু রকেট ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে লেবাননের ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বৃহস্পতিবার লেবাননের দক্ষিণ সীমান্ত এলাকা থেকে ইসরায়েলি সামরিক স্থাপনায় ওই হামলার দাবি করেছে গোষ্ঠীটি।
মঙ্গলবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর হামলায় হিজবুল্লাহর মাঠ পর্যায়ের জ্যেষ্ঠ একজন কমান্ডার নিহত হন। ওই হামলার প্রতিশোধে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ। লেবাননের একটি নিরাপত্তা সূত্র বলেছে, ইসরায়েলি সামরিক স্থাপনায় গত অক্টোবরের পর বৃহস্পতিবারই সবচেয়ে বড় হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ।
এক বিবৃতিতে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র এই গোষ্ঠী বলেছে, হিজবুল্লাহ ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ছয়টি অবস্থানে মুহুর্মুহু কাতিউশা ও ফালাক রকেট ছুড়েছে। হিজবুল্লাহ-নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের সংবাদমাধ্যম আল-মানার টেলিভিশন একযোগে ১০০টিরও বেশি রকেট ছোড়ার খবর দিয়েছে।
হিজবুল্লাহর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডের সদর দপ্তর, একটি গোয়েন্দা সদরদপ্তর ও একটি সামরিক ব্যারাকে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে।
লেবাননের নিরাপত্তা সূত্র ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, ইসরায়েলে একযোগে অন্তত ৩০টি ‘অ্যাটাক ড্রোন’ ছোড়া হয়েছে; যা ইসরায়েল-হামাসের গত আট মাসের যুদ্ধে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা হিজবুল্লাহর।
গত অক্টোবরে গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রত্যেক দিনই ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী ও ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর মাঝে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটছে।
তবে মঙ্গলবার ইসরায়েলের হামলায় হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ একজন কমান্ডারের প্রাণহানির পর উভয়পক্ষের মাঝে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বুধবার হিজবুল্লাহ বলেছিল, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার প্রতিশোধে ওইদিন অন্তত ৮বার হামলা চালিয়েছে তারা।
বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় বিভিন্ন শহরে বিমান হামলার সাইরেন বাজিয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছেন, বিকেলে লেবানন থেকে প্রায় ৪০টি রকেট ছোড়া হয়েছে।
ইসরায়েলের রাষ্ট্রায়ত্ত সম্প্রচারমাধ্যম কানের প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সীমান্ত থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে সাফেদ-সহ ইসরায়েলের একাধিক শহরের আকাশে অসংখ্য রকেট উড়ছে। ইসরায়েলের জাতীয় অ্যাম্বুলেন্স সেবা সংস্থা বলেছে, রকেটের ধ্বংসাবশেষের আঘাতে অন্তত দু’জন আহত হয়েছেন।
রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে ৩০০ জনেরও বেশি হিজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। যা ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহ-ইসরায়েলের যুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের প্রাণহানির তুলনায় অনেক বেশি।
ইসরায়েল বলছে, লেবাননের হামলায় ইসরায়েলি ১৮ সেনা ও ১০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
হিজবুল্লাহ-ইসরায়েলি বাহিনীর পাল্টাপাল্টি হামলায় উভয় সীমান্তের লাখ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।