টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভা হচ্ছে আগামীকাল। দ্বাদশ সংসদে নির্বাচিত সদস্যরা আজ সকাল ১০টায় শপথ নেবেন। আগামীকাল সন্ধ্যা ৭টায় শপথ নেবেন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এবারের মন্ত্রিসভায় কে কে আসছেন, পুরনোরা বাদ পড়ছেন কারা-এমন কৌতূহল রাজনীতিক থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের। যাঁরা এবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তাঁরাও প্রধানমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠদের কাছে খোঁজ নিচ্ছেন তাঁদের নাম থাকছে কি না। কেউ কেউ গণমাধ্যমকর্মীদের কাছেও বিষয়টি জানতে চাইছেন। তবে ২০০৯ সাল থেকে মন্ত্রিসভা গঠনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা চমক দেখিয়ে আসছেন। তাই আশা করা হচ্ছে, এবারও চমক থাকবে। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে হবে নতুন মন্ত্রিসভা। সংবিধান নিশ্চিত করেছে মন্ত্রিসভা গঠন পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার।
নতুন মন্ত্রিসভার শপথের দিন বৃহস্পতিবার, এটা গতকাল মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন। সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে হবে শপথ গ্রহণ। অনুষ্ঠানের সবরকম প্রস্তুতি চলমান। তবে মন্ত্রিসভায় সদস্য হিসেবে কারা থাকবেন সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা পাননি তিনি।
সূত্র জানান, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এবারের মন্ত্রিসভা হবে আরও স্মার্ট। এমন নেতারাই মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাবেন, যাঁরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনামতো রাতদিন সারা দেশ চষে বেড়াতে পারবেন। দক্ষতা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মীদের কাছে যাঁদের গ্রহণযোগ্যতা আছে এমন নেতারাই মন্ত্রিসভায় আসবেন। এ ছাড়া কর্মীরা চান, ঢাকাসহ সারা দেশে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার যোগ্যতা রাখেন এমন ব্যক্তিত্বদের মন্ত্রিসভাভুক্তি হোক। রাজনৈতিক মহল ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সর্বোচ্চ ৫০ সদস্যের মন্ত্রিসভা হবে। মন্ত্রিসভার এক কর্মকর্তা বলেন, সর্বশেষ দুটি নির্বাচনোত্তর সরকার গঠন ৫০ সদ্যস্যের মধ্যেই ছিল। গত নির্বাচনে ৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা এবং এর আগেরবার দশম নির্বাচনে ৪৮ সদস্যের মন্ত্রিসভা শপথ নিয়েছিল।
জানা গেছে, বর্তমান তিনজন প্রতিমন্ত্রী দলের মনোনয়ন পাননি। আর সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিন প্রতিমন্ত্রী হেরে গেছেন। এ ছয়জন ছাড়া আরও কয়েকজন বয়স ও বিতর্কিত কাজসহ নানা কারণে বাদ পড়বেন। এ ছাড়া কয়েকজনের মন্ত্রণালয় রদবদলও করা হবে। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে মন্ত্রিসভায় আছেন এমন ব্যক্তিরাও এবার বাদ যাচ্ছেন। এ ছাড়া কপাল পুড়বে যাঁরা নিজেদের কীর্তির কারণে বিতর্কিত।
নতুন নির্বাচিত এমপিদের মধ্যে একাধিক প্রাক্তন আমলা মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়ার সম্ভাবনা। আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া নেতা, যাঁরা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন, অতীতে দলের দুঃসময়ে ছিলেন তাঁদের মূল্যায়ন এখন সময়ের দাবি। দলের নেতা, নির্বাচিত এমপি ছাড়াও টেকনোক্র্যাট কোটায় স্ব স্ব ক্ষেত্রে দক্ষ প্রশাসনিকভাবে অভিজ্ঞ স্মার্ট ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেওয়া হবে বলেও জানা গেছে। টেকনোক্র্যাট কোটায় এবার দক্ষ নারীও যুক্ত হতে পারেন বলে শোনা যায়। এ ছাড়া প্রতি বছর জেলা কোটাভিত্তিক মন্ত্রিত্বের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। পাশাপাশি ২০০৯ ও ২০১৪ সালে দায়িত্ব পালন করা কেউ কেউ ফিরবেন মন্ত্রিসভায়। তথ্য মন্ত্রণালয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ থেকে যেতে পারেন। কোনো কারণে তাঁকে অন্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হলে তথ্যে আসতে পারেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ এ আরাফাত।
২০১৪ সালে অধিকাংশ পুরনো মন্ত্রী বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত নতুন ও আগের সরকারের সময় দলের বাদ পড়া জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে সরকার গঠন করা হয়। ২০১৯ সালের মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ ছিলেন ৩১ জন। ৭ জানুয়ারি রবিবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮ আসনের মধ্যে ২২২টিতে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পায়। আজ এমপিরা সংসদ ভবনে শপথবাক্য পাঠ করবেন। এরপর আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক। সেখানে সংসদ নেতা, উপনেতা নির্বাচন করা হবে। সিদ্ধান্ত হতে পারে চিফ হুইপ ও হুইপের ব্যাপারেও। এমপি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধানকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাবেন রাষ্ট্রপতি। আগে প্রধানমন্ত্রী পদধারীকে শপথ পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি। এরপর শপথ নেবেন নবগঠিত মন্ত্রিসভার সদস্যরা। আওয়ামী লীগের এক সূত্র জানান, সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমন্বয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল, মন্ত্রিসভা গঠনেও নির্বাচিত এমপিদের মধ্য থেকে সব শ্রেণি-পেশার সমন্বয় থাকবে।