পবিত্র কোরআনের প্রথম সুরা আল ফাতিহা। মক্কায় নাজিল হওয়া সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ একটি সুরা। বিশেষ বৈশিষ্ট্য, মর্যাদা ও বিষয়বস্তুর প্রতি লক্ষ রেখেই ফাতিহা নামকরণ হয়েছে। প্রথম তিন আয়াতে মহান আল্লাহর প্রশংসা করার পদ্ধতি, পরের চার আয়াতে ইবাদতের তাওফিক, পূর্ণ হিদায়াত ও নেক বান্দাদের মধ্যে শামিল থাকার প্রার্থনা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এই সুরার ফজিলত ও আমল সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
সুরা ফাতিহার বরকতময় নাম
পবিত্র কোরআনের ১১৪টি সুরার মধ্যে সুরা ফাতিহার নাম সবচেয়ে বেশি। এই নামগুলোর পেছনে রহমত, বরকত ও আমলের গুপ্ত রহস্য লুকিয়ে আছে। প্রত্যেক নামের সঙ্গে সুরাটির সামঞ্জস্য ও যথার্থতা বিদ্যমান।
আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতি (রহ.) ‘আল-ইতকান’ গ্রন্থে সুরা ফাতিহার ৫০০ নাম উল্লেখ করেছেন।
এটা নিঃসন্দেহে উক্ত সুরার শীর্ষ মর্যাদার পরিচায়ক। ইমাম বুখারি (রহ.) সুরা ফাতিহাকে ‘উম্মুল কিতাব’ হওয়ার ব্যাখ্যায় বলেন, এই সুরা দিয়ে কোরআন লেখার সূচনা হয়েছে। আর এটার মাধ্যমে নামাজ শুরু করা হয় এবং এটাই কোরআনের সারসংক্ষেপ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, এটাই উম্মুল কোরআন, এটাই সাবআ মাসানি এবং এটাই কোরআনুল আজিম।
(জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৮৭৫, মুসনাদে আহমদ: ২/৪৪৮)
এ সুরার প্রসিদ্ধ পাঁচ নাম : আল-কোরআন, আল-ফুরকান, আল-কিতাব, আত-তানজিল, সাবউল মাসানি।
সুরা ফাতিহা নবীকে দেওয়া আল্লাহর উপহার
সুরা ফাতিহা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দেওয়া আল্লাহর বিশেষ উপহার। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, জিবরাইল (আ.) নবীজির কাছে উপবিষ্ট ছিলেন। হঠাৎ ওপরের দিকে তিনি একটি আওয়াজ শুনতে পেয়ে নিজের মাথা তোলেন এবং বলেন, এটি আসমানের একটি দরজা, যা আজই খুলে দেওয়া হলো। আজকের দিন ছাড়া কখনো তা খোলা হয়নি।
তখন সে দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতরণ করলেন। তিনি বলেন, ইনি একজন ফেরেশতা। আজ ছাড়া অন্য কখনো তিনি অবতরণ করেননি। এরপর ওই ফেরেশতা সালাম করে বলেন, দুটি নুরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যা আপনাকে দেওয়া হয়েছে এবং যা আপনার আগে আর কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি। তা হলো সুরা ফাতিহা ও সুরা বাকারার শেষাংশ। এ দুটির যেকোনো হরফ আপনি পাঠ করবেন তা আপনাকে দিয়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ এতে যে দোয়ার বিষয়বস্তু আছে তা কবুল করা হবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৭৫০)
সুরা ফাতিহার গুরুত্ব ও তাৎপর্য
সুরা ফাতিহার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক । মুমিন বান্দার তিলাওয়াত মহান আল্লাহ শোনেন। পঠিত আয়াতের জবাব দেন। উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা তাওরাত ও ইনজিলে উম্মুল কোরআনের মতো কিছু অবতীর্ণ করেননি, যা হলো সাবউল মাসানি। এটি আমার এবং আমার বান্দাদের মধ্যে ভাগাভাগি। আমার বান্দা যা চাইবে তা-ই তার।
(জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩১২৫)
সুরা ফাতিহার ফজিলত
সব নামাজে সুরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব। এটা ছাড়া নামাজ হয় না। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘হে নবী, আমি আপনাকে বারবার পঠিতব্য সাতটি আয়াত অর্থাৎ সুরা ফাতিহা ও মহান কোরআন দান করেছি।’
(সুরা : হিজর,আয়াত : ৮৭)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন ইমাম বলবে গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ দোয়াল্লিন, তখন তোমরা বলবে, আমিন। যার পড়া ফেরেশতাদের পড়ার সময় হবে তার আগের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪১২৩)
সুরা ফাতিহার ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) আরো বলেছেন, সুরা ফাতিহা কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ। (কানজুল উম্মাল, হাদিস : ২৪৯৫)
সুরা ফাতিহা শিফা
শরিয়তসম্মত রুকইয়ার ক্ষেত্রে সুরা ফাতিহার উপকারিতা শীর্ষে। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, সুরা ফাতিহা মৃত্যু ছাড়া সব রোগের মহৌষধ।(শুআবুল ঈমান,
হাদিস : ২৩৭০, সুনানে দারেমি, হাদিস : ৩৪১৩)
এ ছাড়া সাহাবায়ে কেরাম এ সুরার মাধ্যমে ঝাড়ফুঁক করার কথা সহিহ সনদে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৬৪৫ )
পবিত্র কোরআনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এই সুরা দৈনিক আমলের তালিকায় রাখা উচিত। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।