ঢাকা কাস্টমস হাউসের সেকশন থেকে সেকশনে অবস্থান করে বহিরাগত দালাল। কিছু অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন তারা। কাস্টমস কর্মকর্তারা অবৈধ কার্যকলাপের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন এদের। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ এই দপ্তরে নিয়ম বর্হিভূতভাবে নিজের উৎকোচ গ্রহণে প্রতিনিধি হিসেবে রেখেছেন অনেক বহিরাগত লোক। কাস্টমসে এদের পরিচিতি ঘুষ আদায়ের দালাল হিসেবে।
হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডে সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ থাকলেও লাইসেন্স লক বা বাতিলের হুমকিতে ভীত হয়েই চাহিদামতো ঘুষ দিয়েই ফাইল সই করান বলে জানা গেছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা কাস্টমস হাউস ঘিরে এসব লোক সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নন। তবে তারা দাপটের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয়ে কাজ করে থাকেন। কাস্টমস কর্মকর্তারাও এদের ওপর নির্ভরশীল। ছোট-বড় সব অবৈধ লেনদেন এই বহিরাগতদের মাধ্যমেই হয়। তারা কাউকেই পাত্তা দেন না।
কমিশনার থেকে কম্পিউটার সেল পর্যন্ত বহিরাগত দালালদের রয়েছে একটা বড় সিন্ডিকেট। ডেপুটি কমিশনার প্রিভেন্টিবে দালাল হিসেবে রাসেল, ডেপুটি কমিশনারের দালাল ইউসুফ, ইভেন্টিভ সুপারের দালাল নজরুল, ইভেন্টিভ ইন্সপেক্টরের দালাল শান্ত, সুপারেল গ্রুপ ওয়ানের দালাল উত্তম কুমার ও ইন্সপেক্টরের সদর দালাল হিসেবে রয়েছেন ইয়াসিন।
এছাড়া ঢাকা কাস্টম হাউসে বহিরাগতরা বিভিন্ন কমিশনার দপ্তরসহ কম্পিউটার সেলে কমিশনে কাজ করেন। যেমন- যুগ্ম কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের এখানে বহিরাগত দালাল হিসাবে সিদ্দিক ও সিদ্দিক (২), ডেপুটি কমিশনারের সঙ্গে আনিস ও রমজান, সহকারী কমিশনারের সঙ্গে রয়েছেন রাজু, ইন্সপেক্টরের সঙ্গে শান্ত, কম্পিউটার সেলে কাজ করেন তারেক, মনির, সিদ্দিক, সাদ্দাম, আরিফ, আজিম, নয়ন, শামসু, টিটু, আক্তার, মিঠু, শান্ত ও হলরুমে বহিরাগত দালাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সুজন।
সংশ্নিষ্টরা বলছেন, অবৈধ পণ্য পাচারে গোপন কাগজপত্র নিজেদের হেফাজতে রাখে এই দালালচক্র। এক শ্রেণীর অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তা তাদের ব্যবহার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিপরীতে এই কর্মীরাও পায় মোটা অংকের ঘুষ। এতে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট অফিসে এই বহিরাগতদের দাপটে বিচরণ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা কাস্টমস হাউসে এদের সংখ্যা অনেক। তারা প্রত্যেকেই বাড়ি-গাড়িসহ কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তাদের অত্যাচারে ব্যবসায়ীরাও অতিষ্ঠ।
এদের অপসারণে একাধিকবার চেষ্টা চালিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তবে দালালদের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের ক্ষমতাবলে তারা বছরের পর বছর বিচরণ করছে ঢাকা কাস্টমস হাউসের গুরুত্বপূর্ণ সব যায়গায়। আর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ।
এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার সৈয়দ মোকাদ্দেস হোসেন বলেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকতে এই বিষয়টা নিয়ে কোন নিউজ করার বিষয় হলো। দেশে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু পড়ে আছে, ওইসব নিয়ে নিউজ করেন। নিউজ করতে চাইলে করতে পারেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।
এদিকে বহিরাগত এসব দালালরা কাস্টমস হাউসের আটঘাট জানে। কোথায় কী করতে হয়, সবই এদের নখদর্পণে। তাই কাস্টমস কর্মকর্তারাও এদের ওপর নির্ভরশীল। বড় বড় চোরাচালানির সঙ্গে এসব দালালদের রয়েছে সুসম্পর্ক। এদের কাছে থাকে কর্মকর্তাদের রাবার স্ট্যাম্প ও গোপনীয় কাগজপত্র।