রবিবার, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪
spot_img
Homeরাজধানীগৃহকর্মী সেজে অজ্ঞান করে লুট করতো স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা

গৃহকর্মী সেজে অজ্ঞান করে লুট করতো স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা

রাজধানীর দিলু রোডের নিজ বাসায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর সকালে স্ত্রী ও গৃহকর্মী নূরজাহানকে রেখে অফিসে যান মনোয়ার আলী। ঘণ্টা খানেক পর আমেরিকা প্রবাসী মেয়ে ফোনে জানায় মা ফোন ধরছে না। দ্রুত বাসায় ফিরে স্ত্রীকে অজ্ঞান অবস্থায় পান মনোয়ার। পুরো বাড়ি তছনছ সাথে মাত্র তিন দিন আগে ছয় হাজার টাকায় নিয়োগ দেওয়া নূরজাহান নামের গৃহকর্মীও লাপাত্তা। দ্রুত স্ত্রীকে নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করান। স্ত্রী সুস্থ হলে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন তিনি।

মূলত গৃহকর্মী সেজে বাসায় কাজ নিয়ে সুযোগ বুঝে কৌশলে গৃহকর্ত্রীকে অজ্ঞান করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেওয়া চক্রের সদস্য নূরজাহান। তিনি মোসাম্মৎ বিলকিস বেগম, কনা, রুজিনা ও নুরজাহান (৪০) নামে একাধিক বাসায় চুরি বা লুট করেছেন।

বুধবার (২ আগস্ট) রাজধানীর কোতোয়ালী থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) একটি বিশেষ দল।

বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ৬০ ফিট এলাকায় পিবিআই (ঢাকা মেট্রো-উত্তর) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম।

তিনি বলেন: ওই মামলার দায়িত্ব থানা পুলিশ থেকে পিবিআইয়ের কাছে যাওয়ার পর খোঁজ মেলে ছদ্মবেশী নুরজাহানের। তার আসল নাম বিলকিস। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সোয়া ১১টার মধ্যে স্ত্রী রেজিনা রহমানকে (৫৫) বাসায় একা পেয়ে কাজের মহিলা নুরজাহান (ছদ্মনাম) ও অজ্ঞাত আরও একজন মিলে কৌশলে অজ্ঞান করে বাসায় থাকা সাড়ে ৪ লাখ টাকা ও একটি স্বর্ণের বালা ও একটি স্বর্ণের চামচ নিয়ে পালিয়ে যায়।

তিনি বলেন, পেশাদার চক্রের সদস্য তিনি। একেক বাসায় একেক নামে গৃহকর্মীর কাজ নেন। এরপর সুযোগ বুঝে গৃহকর্ত্রীকে অজ্ঞান করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেওয়া চক্রের সদস্য নূরজাহান। তিনি মোসাম্মৎ বিলকিস বেগম, কনা, রুজিনা ও নুরজাহান (৪০) নামে একাধিক বাসায় চুরি বা লুট করেছেন। বিলকিসের স্বামীর বাড়ি ময়মনসিংহে ধোবাউড়ায় হলেও এখনো তিনি স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করেন বাবার বাড়ি জামালপুর মেলান্দহ রুকনাই গ্রামকে।

বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পাশের বাসার দারোয়ান গোলাম মোস্তফার সহযোগিতায় ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী মনোয়ারের নিউ ইস্কাটনের বাসায় কাজের সুযোগ নেয় নুরজাহান। মামলার বাদী সরল বিশ্বাসে ধূর্ত নুরজাহানকে তার বাসায় কাজ করার জন্য প্রতি মাসে ছয় হাজার টাকা বেতনে নিয়োগ দেন। এর তিনদিন পরই চুরির ঘটনা ঘটে।

মামলা নথিভুক্ত হওয়ার পর হাতিরঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রহমত উল্লাহ রনি তদন্তের দায়িত্ব পান। তিনি তদন্ত শেষে মামলার ঘটনায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। হাতিরঝিল থানা পুলিশের দাখিল করা প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বাদীর না-রাজির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।

এরপর ওই মামলা তদন্ত করছিল ঢাকা মেট্রো (উত্তর)। পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রবিউল ইসলাম মামলার মূল রহস্য উদঘাটন, বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজের মহিলা সেজে কৌশলে বাসার লোকজনকে অজ্ঞান করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেওয়া চক্রের সদস্যদের শনাক্তকরণসহ গ্রেপ্তারে একটি টিম গঠন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার গ্রেপ্তার হয় নুরজাহান।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর বলেন, নুরজাহান ঢাকা শহরের বিভিন্ন বাসায় গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ নেওয়ার সময় ভিন্ন ভিন্ন নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুরজাহান নিউ ইস্কাটনের ওই বাসায় নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা এবং হাতিয়ে নেওয়া স্বর্ণালংকার ডিএমপি ঢাকার খিলক্ষেত থানা এলাকা এবং জামালপুরের ইসলামপুর থানা এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির করার কথা স্বীকার করেছেন।

পিবিআই (ঢাকা মেট্রো-উত্তর) প্রধান বলেন, ঢাকা মহানগর এলাকার বিভিন্ন বাসায় একই কৌশলে ভিন্ন ভিন্ন নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন নুরজাহান। পিবিআই অনুসন্ধানে জানতে পেরেছে, নুরজাহানের নামে রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানা, ভাটারা থানা, উত্তরা পশ্চিম থানায় মোট চারটি চুরির মামলা রয়েছে।

শেরে বাংলা নগর থানার মামলায় আসামি বিলকিস নামে সোহেলের বাসা থেকে ৪০ হাজার টাকা, ভাটারা থানার মামলায় রুজিনা (৩৮) নামে ভুক্তভোগী সিদ্দিকুর রহমানের বাসা থেকে নগদ ১০ লাখ টাকা ও প্রায় তিন ভরি ওজনের বিভিন্ন প্রকারের স্বর্ণালংকার লুট করেন। উত্তরা পশ্চিম থানার মামলায় কনা নামে ভুক্তভোগী মুশফিক ইসলামের বাসা থেকে নগদ দেড় লাখ টাকা ও সোয়া পাঁচ লাখ মূল্যের স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান। এ তিন থানার মামলার ঘটনায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ, যা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।

পেশাদার এ প্রতারক নারীর পেছনে আরও কেউ রয়েছে কি না– জানতে চাইলে পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর বলেন, পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এ তদন্তাধীন হাতিরঝিল থানার মামলায় লুণ্ঠিত নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার উদ্ধারসহ তার সঙ্গে আর কারো যোগসাজশ রয়েছে কি না তা জানতে রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

পর্যালোচনা সংক্ষিপ্ত বিবরণ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন