ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী গ্রামের গৃহবধূ রাশিদা আক্তার ওরফে রুশিকে (৩০) ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে দুইজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
বুধবার (১ মার্চ) দুপুরে ফরিদপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ আদেশ দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- নিহত রাশিদা আক্তারের স্বামী জাহাঙ্গীর মোল্লা (৪৯) ও চুন্নু মাতুব্বর (৫০)। রায় ঘোষণার সময় দণ্ডপ্রাপ্তরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালের জুন মাসে সদরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ব্রাহ্মনদী গ্রামের মুন্সী হারুন অর রশিদের মেয়ে রাশিদা আক্তার ওরফে রুশির সঙ্গে একই উপজেলার ঢেউখালী গ্রামের মৃত বারেক মোল্লার ছেলে জাহাঙ্গীর মোল্লার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকসহ নানা কারণে রাশিদাকে নির্যাতন করত জাহাঙ্গীর। এরপর জাহাঙ্গীর সৌদি আরব চলে যান। সৌদি আরব থেকে ফিরে জাহাঙ্গীর ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার সুমা বেগমকে বিয়ে করেন। তখন থেকেই রাশিদাকে সংসার ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য জাহাঙ্গীর নির্যাতন করে আসছিল। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি রাশিদা। পরবর্তীতে জাহাঙ্গীর আবার সৌদি আরব চলে গেলে রাশিদা তার বাবার বাড়ি চলে আসে ও সেখানে বসবাস করতে শুরু করেন। রাশিদা বাবার বাড়িতে বসবাসের সময় প্রতিবেশী চুন্নু মাতুব্বরের ছেলেকে প্রাইভেট পড়াত।
একপর্যায়ে জাহাঙ্গীর বিদেশে বসে রাশিদাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এ কাজের জন্য জাহাঙ্গীর রাশিদার পরিচিত চুন্নু মাতুব্বরকেই ২ লাখ টাকায় ভাড়া করেন। ২০১২ সালের ১৩ জানুয়ারি রাতে চুন্নু মাতুব্বর রাশিদাকে ডেকে নিয়ে যায়। চুন্নু মাতুব্বর রাশিদার ছাত্রের বাবা হওয়ায় তিনি চুন্নুর সঙ্গে যান। ওইদিন রাতের কোনো একসময় চুন্নু মাতুব্বর তার পাঁচজন সহযোগীকে নিয়ে রাশিদাকে পাশের দশহাজার গ্রামের এক মেহগনি বাগানে নিয়ে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে একটি মেহগনি গাছে গলায় রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই মো. দেলোয়ার হোসেন (৬৩) বাদী হয়ে সদরপুর থানায় রাশিদার স্বামী জাহাঙ্গীর ও চুন্নুসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে ২০১২ সালের ২৮ নভেম্বর সদরপুর থানা পুলিশের তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) ওহিদুজ্জামান সাতজনের নামে অভিযোগপত্র জমা দেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি স্বপন পাল বলেন, রাশিদাকে হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসেবে স্বামী জাহাঙ্গীর মোল্লা ও ধর্ষণের পর হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ায় চুন্নু মাতুব্বরকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। রাশিদার স্বামী বর্তমানে সৌদি আরবে রয়েছেন। চুন্নু মাতুব্বরও পলাতক রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, হত্যায় সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় এ মামলার বাকী পাঁচ আসামিকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন আদালত। খালাস প্রাপ্তরা হলেন- সুইট মোল্লা, শাহিন মোল্লা, কামরুল মোল্লা, রশিদ মোল্লা ও চান্দ মোল্লা।
মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী বিমল তুলশিয়ান বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা পলাতক রয়েছেন। তারা আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আমরা পরবর্তী বিষয় বিবেচনা করবো। আদালত বাকী আসামিদের খালাস প্রদান করায় আমরা খুশি।