প্রথমে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা টার্গেট করেন। পরে যাত্রী সেজে ওঠেন সেই রিকশায়। গন্তব্য বলে নিয়ে যান কোন এক নির্জন জায়গায়। সেখানে গিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয় চালককে। এরপরই সেই রিকশা নিয়ে চম্পট।
এমন পদ্ধতিতে অটোরিকশা ছিনতাই করে আসছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে চক্রের ৬ সদস্য গ্রেপ্তারের পর উঠে আসে ছিনতাইয়ের এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
এ চক্রের সদস্যদের হাতে খুন হওয়া একজন হলেন মোস্তফা। তিনি রাজধানীর দক্ষিণখানের বাসিন্দা। পেশায় রিকশা চালক। গত ৭ ডিসেম্বর রাতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি। নিখোঁজের ১০ দিন পর ছেলের গলিত মরদেহ পায় মা শামছুন্নাহার। ছেলে হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের খবরে ছুটে আসেন মিন্টো রোডে।
কাঁদতে কাঁদতে ছেলে হারানো এ বৃদ্ধা মা বলেন, নিখোঁজের ১১দিনের মাথায় ফোন আসে আমার মেয়ের জামাইয়ের কাছে। আশিয়ান সিটি নামে একটি জায়গায় আমার ছেলের লাশ পড়ে আছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি আমার ছেলের নিথর দেহ পড়ে আছে। বউসহ আমার তিন নাতি-নাতনী আছে। তারা ছোট ছোট, তাদেরকে নিয়ে আমি এখন কোথায় যাবো। ছেলেই আমার সংসার চালাতো। আমার কেউ রইলো না।
শুধু মোস্তফা নয়, ক্লুলেস হত্যা ও গুম-ছিনতাইয়ের একাধিক ঘটনায় জড়িত সংঘবদ্ধ এই চক্রটি। গত ১৩ জানুয়ারি থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মৌলভীবাজারের রাজনগর থানা এলাকাসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিম।
গ্রেপ্তাররা হলেন, খালেদ খান শুভ (২০), মো. টিপু (৩১), হাসানুল ইসলাম ওরফে হাসান (২০), জাহাঙ্গীর হোসেন (৪০), আব্দুল মজিদ (২৯) ও মো. সুমন (৩৫)। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি বাটন মোবাইল, ২ চাকু (সুইস গিয়ার), তিনটি অটোরিকশা ও পাথর উদ্ধার করা হয়।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি জানান, গত বছরের ৭ ডিসেম্বর রাতে অটোরিকশা চালক মোস্তফা নিখোঁজ হবার পর তার মা শামছুন্নাহার দক্ষিণখান থানার জিডি করেন। ছেলের মরদেহ উদ্ধারের পর তিনি দক্ষিণখান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিদের শনাক্ত করা হয়।
হারুন বলেন, মৌলভীবাজারের রাজনগর থানাধীন আসামি মো. খালেদ খান শুভকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিম। তার কাছ থেকে ভিকটিমের ব্যবহৃত বাটন মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, গ্রেপ্তার মো. খালেদ খান শুভর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দক্ষিণখান থানা এলাকা থেকে হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত মো. টিপু ও মো. হাসানুল ইসলাম ওরফে হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে গ্রেপ্তার মো. টিপু ও মো. হাসানুল ইসলাম ওরফে হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও আব্দুল মজিদদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় ভিকটিমের অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও অন্য একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গুম, ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত একটি সুইস গিয়ার চাকু উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, শুধু মোস্তফা নয়, গত ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর টিপু, হাসানুল ইসলাম ও শুভ যাত্রী সেজে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালককে গাজীপুরের কালিগঞ্জ থানাধীন পূর্বাচলের ২৫ নম্বর সেক্টরের নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। এরপর শুভর কেনা ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে চালককে হত্যা করে তার লাশ রোডের পাশে ড্রেনে ফেলে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়।
ডিবি জানায়, এই ঘটনায় কালিগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, গুম ও ছিনতাই ঘটনার আরো মামলা রয়েছে। আসামিরা এ সকল ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখছে ডিবি পুলিশ।
সূত্র:ঢাকা পোস্ট