দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা চট্টগ্রাম বন্দরে সূচনা হয়েছে ‘ল্যান্ডলর্ড’ যুগ। রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি)-এর অধীনে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)-তে প্রথম বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙরের মধ্য দিয়ে সূচনা হয়েছে নতুন অধ্যায়ের। নতুন এ টার্মিনালের যাত্রার মধ্য দিয়ে বেড়েছে বন্দরের সক্ষমতা। একই বন্দরে যুক্ত হবে আধুনিক এবং নিত্যনতুন প্রযুক্তি। এতে অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান।
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য আজ ঐতিহাসিক দিন। এটা বিশেষ মুহূর্ত। প্রথম বিদেশি অপারেটর হিসেবে কাজ শুরু করেছে আরএসজিটি। প্রতিষ্ঠানটি খুবই অভিজ্ঞ ও স্বনামধন্য। তারা বন্দরে আধুনিক ও নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসবে। প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান হবে।’
আরএসজিটি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরউইন হেইজ বলেন, পিটিসিতে প্রথম আনুষ্ঠানিক জাহাজ আগমনের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক উদযাপন করছি আমরা। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এবং বৈশ্বিক লজিস্টিক চেইনে চট্টগ্রাম বন্দরের কেন্দ্রীয় ভূমিকা বাড়াতে অবদান রাখতে উন্মুখ। বাংলাদেশ সরকার, বন্দর কর্তৃপক্ষ, এনবিআর, কাস্টমস এবং আমাদের দীর্ঘ সময়ের ব্যবসায়িক অংশীদার মায়েরস্ককে ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা আমাদের বাংলাদেশের শিপিং কমিউনিটি এবং বৈশ্বিক বন্দর শিল্পকে বিশ্বমানের সেবা দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে।
গতকাল বিকাল পৌনে ৩টায় পিসিটিতে রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি)-এর অধীনে প্রথম বাণিজ্যিক জাহাজ হিসেবে নোঙর করে সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী ‘মায়েরস্ক দাভাও’। জাহাজকে স্বাগত জানাতে পিসিটিতে উপস্থিত হন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, আরএসজিটি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরউইন হেইজসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং থেকে আসা ফিডার জাহাজাটি প্রায় ৮০০ টিইইউএস কনটেইনার লোড করে আজ মঙ্গলবার বিকালে ইন্দোনেশিয়ার বেলাওয়ান বন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে পতেঙ্গা পিসিটি নির্মাণ করা হয়। ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকার এ প্রকল্পে পুরোটাই অর্থায়ন করেছে বন্দর। ৩২ একর ভূমিতে নির্মিত এ কনটেইনার টার্মিনালে রয়েছে প্রায় ১৬ একর ব্যাকআপ ইয়ার্ড। এ টার্মিনালে একসঙ্গে রাখা যাবে ৪ হাজার ৫০০ টিইইউএস কনটেইনার। বছরে ৫ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম হবে। পিসিটিতে সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজও ভিড়তে পারবে। পিসিটির ৬০০ মিটার জেটিতে একসঙ্গে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০ মিটার ড্রাফটের অন্তত তিনটি জাহাজ ভেড়ানো যাবে। আরএসজিটির মাধ্যমে ল্যান্ডলর্ড যুগে প্রবেশ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। চুক্তি অনুযায়ী আগামী ২২ বছর টার্মিনাল পরিচালনা করবে প্রতিষ্ঠানটি। চুক্তি অনুয়ায়ী টার্মিনালের সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, সংযোজন করবে আরএসজিটি। প্রতিষ্ঠানটি টার্মিনাল পরিচালনা করলেও বন্দর ট্যারিফ, রিভার চার্জ, নিরাপত্তাসহ সব বিষয়ই দেখবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। অন্যান্য অপারেটরের মতো জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করবে। বিনিময়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে লভ্যাংশ শেয়ার করবে।