সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধকালে নারী-পুরুষ সবাই মিলে যুদ্ধ করেছি। তখন ধর্মের বা লিঙ্গের প্রশ্ন আসেনি। ১৯৭৫ এর পর মৌলবাদের আলোকে দেশ পরিচালিত হয়েছে। এখন মৌলবাদের অবস্থাকে প্রতিহত করে প্রতিরোধের আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের রোকেয়া সদনের ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
সোমবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে রোকেয়া সদনের (সহিংসতা ও বঞ্চনার শিকার নারীদের আশ্রয়কেন্দ্র) ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, নারী নির্যাতন সারা পৃথিবীতে প্রকট আকার ধারণ করছে মৌলবাদের উত্থানের কারণে।
তিনি বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বেশ কয়েকটি শিশুসদন পরিচালিত হচ্ছে। পাশাপাশি এসিডদগ্ধ নারীদের জন্য ফান্ড এবং ক্যান্সার, কিডনি, থ্যালামাইসিস রোগে আক্রান্ত নারীদের জন্য এককালীন ফান্ডের ব্যবস্থা আছে। তিনি এসময় রোকেয়া সদনের কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নিতে সার্বিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে টাঙ্গাইল শাড়ী কুটিরের কর্ণধার মুনিরা ইমদাদ বলেন, তাতী সম্প্রদায়ের মধ্যে মেয়েদের বাল্যবিয়ে দেওয়ার প্রবণতা আছে। এটা আইন করে জোরালোভাবে প্রতিরোধের আহ্বান জানান তিনি।
বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহীদা চৌধুরী বলেন, সহিংসতার শিকার মেয়েদের মানসিক অবস্থা আমরা গুরুত্ব দেই না। তারা মনের মধ্যে থাকা কষ্টের জন্য সারা জীবনই ভুগতে থাকে। এমন মনোভাব কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, কঠিন দিনগুলোতে রোকেয়া সদনের ভিত্তি শক্ত করতে সাহায্য করেছেন অনেক নারী। একেকটি আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনার লক্ষ্য হয় ভিন্ন ধরনের। আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনার ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে, নারী নির্যাতন নির্মূল করতে হবে। ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্টর কথা বলা হচ্ছে। সহিংসতার শিকার নারী যারা আছেন তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। তাদের সমাজের মূল ধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশে থাকা আশ্রয়কেন্দ্র যারা পরিচালনা করেন তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে দাবি করে তিনি বলেন, কোনো সংঘবদ্ধ আইন করা হবে কি না, নীতিমালা করা হবে কি না এগুলো ভাবতে হবে।
সহিংসতার শিকার নারীদের সহায়তা দানের কাজকে সেবামূলক না দেখে তাদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হিসেবে দেখার জন্য আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনাকারীদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানান তিনি। এসময় প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য আলাদা আশ্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন বিপ্লবী কর্মকার, অর্পণা কর্মকার, শংকরি মিত্র এবং সাথী চক্রবর্তী। মহিলা পরিষদের রোকেয়া সদনের কর্মকাণ্ড উপস্থাপন করেন আইটি অফিসার দোলন কৃষ্ণ শীল।
সদনের মেয়েদের মধ্যে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে শান্তা ইসলাম বলেন, রোকেয়া সদন একটি আশ্রয়কেন্দ্র কিন্তু একটা মমতাময়ী মায়ের আচলের মতো বেধে রেখেছে। যেখানে দৈনন্দিন জীবনযাপনের নিয়ম, লেখাপড়া শেখানো এবং কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য উপযোগী করে তুলতে সহায়তা করা হয় আমাদের স্বাবলম্বী করতে।
স্বাগত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, রোকেয়া সদনের দীর্ঘ ৩৭ বছরের পথচলায় অনেক অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে। সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে এই সদন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিরোধ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এবং নির্যাতিত, বঞ্চনার শিকার এবং সহিংসতার শিকার নারীদের নিরাপত্তা ও আশ্রয় দানের লক্ষ্য নিয়ে। সহিংসতার শিকার এসব নারী ও কন্যাদের সমাজের মূলধারায় প্রতিষ্ঠার জন্য আইনগত সহায়তা দেওয়া, শারীরিক-মানসিক সহায়তা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা এখনো চলমান আছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে এমন আশ্রয়কেন্দ্র থাকলেও তা সহিংসতার শিকার নারীদের জন্য পর্যাপ্ত নয় ।