রবিবার, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪
spot_img
Homeসারা বাংলাঠাকুরগাঁওয়ে মাদক মামলায় পুলিশ সদস্যকে বাঁচাতে চার্জশিটে ‘জালিয়াতি’

ঠাকুরগাঁওয়ে মাদক মামলায় পুলিশ সদস্যকে বাঁচাতে চার্জশিটে ‘জালিয়াতি’

ইয়াবা ও হেরোইনসহ গ্রেপ্তার হওয়া মোশারফ হোসেন নামের পুলিশের এক কনস্টেবলকে বাঁচাতে মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) থেকে তার নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এজন্য মামলার বাদী ঠাকুরগাঁও জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ফরহাদ আকন্দ অভিযোগপত্রের পাতায় অগ্রগামীর জন্য ওই দপ্তরের সহকারী পরিচালকের অনুপস্থিতিতে তার স্থলে নিজেই সই করেছেন। পরে ওই অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয়া হয়।

মামলা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁও শহরের আশ্রমপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০২ পিস ইয়াবা ও পাঁচ গ্রাম হেরোইনসহ আতিকুল ইসলাম আতিক (মাদক কারবারি) ও পুলিশ কনস্টেবল মোশারফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ ঘটনায় ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ফরহাদ আকন্দ বাদী হয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করেন ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক আজাহারুল ইসলাম।

এজাহারে আরও বলা হয়, গ্রেপ্তার দুজনই দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ও হেরোইনের ব্যবসা করে আসছিল। অন্যদিকে কনস্টেবল মোশারফ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে ঠাকুরগাঁও জেলায় কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি খাগড়াছড়িতে কর্মরত। গত ২৫ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দায়িত্বরত সহকারী পরিচালক সৌমিক রায় বদলি হয়ে যান। এতে ওই পদটি শূন্য হয়ে পড়ে। একই সময় মামলার অভিযোগপত্র তৈরি করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। সহকারী পরিচালকের অনুপস্থিতিতে তার সিল ব্যবহার করে মামলার বাদী ফরহাদ আকন্দ নিজেই অভিযোগপত্র অগ্রগামীর জন্য সই করেন। পরে ২১ মে ওই অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন। অভিযোগপত্রে আতিকুল ইসলাম আতিককে অভিযুক্ত করা হয় এবং পুলিশ কনস্টেবল মোশারফ হোসেনকে অব্যাহতির জন্য সুপারিশ করা হয়।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক সহকারী পরিচালক সৌমিক রায় বলেন, ‘গত ২৫ এপ্রিল আমার বদলি হয়ে যায়। অভিযোগপত্র থেকে আসামির নাম বাদ দেওয়ার বিষয়টি জানা নেই।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে মামলার বাদী ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ফরহাদ আকন্দ বলেন, ‘সফট কর্নার থেকে অভিযোগপত্রে কনস্টেবল মোশারফ হোসেনের নাম বাদ দেওয়ার জন্য আদালতে সুপারিশ করা হয়েছে। অভিযোগপত্র দেওয়ার সময় এখানে সহকারী পরিচালক ছিলেন না। তাই নিজেই অভিযোগপত্র অগ্রগামীর জন্য সহকারী পরিচালকের পক্ষে সই করে আদালতে জমা দিয়েছি।’

বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শরীফ উদ্দীন বলেন, আমার কর্মস্থল নীলফামারী জেলায়। কিন্তু ঠাকুরগাঁও জেলায় সহকারী পরিচালকের পদটি শূন্য। ফলে গত ২৮ মে অতিরিক্ত হিসেবে আমাকে ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

মাদক মামলা থেকে আসামিকে উপযুক্ত ডকুমেন্টস ছাড়া বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। সেই সঙ্গে সহকারী পরিচালকের সিল ব্যবহার ও স্বাক্ষর করার বিষয়টি নজরে এসেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, পুলিশ কনস্টেবল হওয়ার কারণেই মাদক মামলা থেকে বাঁচাতে তার নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে এটা বোঝা যায়। এখানে কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, এটা গুরুতর অপরাধ।

ঠাকুরগাঁও জজ কোর্টের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোজাফ্ফর আহমেদ মানিক বলেন, ‘দায়িত্বরত সহকারী পরিচালক বদলি হয়েছেন। এ সুযোগে ওই কর্মকর্তার সিল ব্যবহার করে সই দিয়ে অভিযোগপত্র অগ্রগামী করেন মামলার বাদী। এটি জালিয়াতি কাজ। কোনোভাবেই এটি বাদী করতে পারেন না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর অথবা আদালত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক আলী আসলাম হোসেন বলেন, চার্জশিটের বিষয়টি জানতে চেয়েছি, আসুক তারপর দেখব। আর সব মামলায় যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মতামত লাগবে এমনটি নয়। তবে কোনো মামলা যদি গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার জানা উচিত কীভাবে কী হলো। চার্জশিট দাখিলে অনিয়ম হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পর্যালোচনা সংক্ষিপ্ত বিবরণ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন