মহান আল্লাহ মাঝে মাঝে মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য অভাব-অনটন, বিপদ-আপদ দান করেন। নবীজি (সা.) ও সাহাবায়ে কিরামের যুগে মাঝে মাঝে খাদ্যসংকট, অভাব-অনটন দেখা দিয়েছিল। তা থেকে উত্তরণের জন্য তাঁরা কোন পথ অবলম্বন করেছেন, নিম্নে সে বিষয়ে কিছুটা আলোকপাত করা হলো—
ধৈর্য ধারণ : দুঃসময়ে ধৈর্য ধারণও এক ধরনের নেক আমল। খাদ্যসংকট বা দুর্দিনে মহানবী (সা.) ও সাহাবায়ে কিরাম ধৈর্য সহকারে আল্লাহর সাহায্য চাইতেন।
এবং মুমিনদের দুর্দিনে ধৈর্য ধারণের দীক্ষা দিয়েছেন। যারা তা করতে পারে, মহান আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘ভালো কাজ এটা নয় যে, তোমরা তোমাদের চেহারা পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ফেরাবে; বরং ভালো কাজ হলো যে ঈমান আনে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি এবং যে সম্পদ প্রদান করে তার প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও নিকটাত্মীয়গণকে, এতিম, অসহায়, মুসাফির ও প্রার্থনাকারীকে এবং বন্দিমুক্তিতে ও যে সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করে, যারা ধৈর্য ধারণ করে কষ্ট ও দুর্দশায় এবং যুদ্ধের সময়ে; তারাই সত্যবাদী এবং তারাই মুত্তাকি।’
(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৭৭)
সংযত জীবনাচার : নবীজি (সা.)-এর যুগে যখন মদিনায় দুর্ভিক্ষ এসেছিল, এই দুর্ভিক্ষ থেকে উম্মতকে বাঁচাতে সবাইকে তিনি জীবনাচারে সংযত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ইবনে উমর (রা.) বলতেন, (অভাবের দিনে) রাসুলুল্লাহ (সা.) কাউকে তার ভাইয়ের অনুমতি ছাড়া একসঙ্গে দুটি করে খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ২৪৫৫)
অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো : কোনো অভাবী ব্যক্তি যাতে ক্ষুধার জ্বালায় কষ্ট না পায়, তাই ভাগাভাগি করে খাবার গ্রহণের তাগিদ দিয়েছিলেন নবীজি। এমনকি সংকট কেটে যাওয়া পর্যন্ত কোরবানির ঈদের সময় গোশত সংরক্ষণ করতে নিষেধ করেছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওয়াকিদ (রা.) বলেন, তিন দিনের ওপরে কোরবানির গোশত খেতে রাসুল (সা.) নিষেধ করেছেন। (মুসলিম, হাদিস : ৪৯৯৭)
অধিক হারে দোয়া করা : অভাব-অনটন ও দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা পাওয়ার আরেকটি করণীয় আমল হলো দোয়া। মহান আল্লাহর কাছে অতীতের গুনাহগুলো থেকে তাওবা করে, পরিস্থিতি অনুকূলে এনে দেওয়ার জন্য দোয়ায় মগ্ন হয়ে যাওয়া। অনেক ক্ষেত্রে দোয়ার মাধ্যমেও অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। নবীজি (সা.) দুর্ভিক্ষ থেকে মুক্তি পেতে মহান আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেছিলেন। (মুসলিম, হাদিস : ১৯৬৪)
গুনাহ ছেড়ে দেওয়ার তাগিদ দেওয়া : রিজিকের সংকট কিংবা অভাব-অনটনের একটি কারণ হলো পাপাচার, তাই মহানবী (সা.) তাঁর উম্মতদের সংকট থেকে বাঁচাতে পাপাচার থেকে দূরে থাকার তাগিদ দিতেন।
সাওবান (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, …মানুষ তার পাপ কাজের দরুন তার প্রাপ্য রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০২২)
উৎপাদন ও কৃষি খাতকে উন্নত করা : প্রিয় নবী (সা.)-এর এই শিক্ষাগুলো সাহাবায়ে কিরামও তাঁদের শাসনামলে প্রয়োগ করেছেন। ফলে দুর্ভিক্ষের কারণে তাঁদেরও খুব বেশি বিপদে পড়তে হয়নি। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) দুর্ভিক্ষের বছর বলেন, আর সেই বছর ছিল ভীষণ দুর্বিপাক ও কষ্টের। উমর (রা.) পল্লী অঞ্চলের বেদুইনদের উট, খাদ্যশস্য, তেল প্রভৃতি সাহায্যসামগ্রী পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। এমনকি তিনি গ্রামাঞ্চলের এক খণ্ড জমিও অনাবাদি পড়ে থাকতে দেননি এবং তাঁর চেষ্টা ফলপ্রসূ হলো।…(আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৫৬৪)
হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, সংকট মোকাবেলায় উৎপাদন খাত বা স্থানীয় শিল্প ইত্যাদি চাঙ্গা করতে হবে। যে যে খাত থেকে আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে, সব খাতকে গুরুত্ব সহকারে চাঙ্গা করতে হবে।
আখিরাতকে প্রাধান্য দেওয়া : কেননা আখিরাতকে প্রাধান্য দিলে মহান আল্লাহ শান্তি দেন, আর দুনিয়াকে প্রাধান্য দিলে মহান আল্লাহ অভাব, হতাশা ইত্যাদি বাড়িয়ে দেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১০৭)
মহান আল্লাহ সবাইকে অভাব-অনটন থেকে হেফাজতে থাকার তাওফিক দান করুন।