রবিবার, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪
spot_img
Homeসারা বাংলাস্ট্রোক নিয়ে কিছু কথা

স্ট্রোক নিয়ে কিছু কথা

স্ট্রোক এখন সারাবিশ্বে একটি আতঙ্কের নাম। কারণ একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রতি তিন সেকেন্ডে একজন মানুষ স্ট্রোক আক্রান্ত হয়, যার বেশির ভাগই মৃত্যুবরণ করে। এর কারণ ব্রেইন স্ট্রোক। তাছাড়া নন কমিউনিকেশন ডিজিজ হিসাবে স্ট্রোককে এখন তৃতীয় মৃত্যর কারণ বলা হয়। সচেতনতা তৈরি করা এখন সবার দায়িত্ব। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো ‘নিরাময়ের চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি’।

আমরা জানি স্ট্রোক দুই প্রকারের হয়ে থাকে :

১. ইসকেমিক স্ট্রোক : ব্রেনের অভ্যন্তরীণ রক্ষানালী গুলোর মধ্যেকার রক্ত সঞ্চালন কমে গেলে, অর্থাৎ রক্তনালীগুলোর মধ্যেকার জমা হয়ে থাকা চর্বি যা মেডিকেল ভাষায় থ্রম্বো এম্বোলিজমের কারণে হয়ে থাকে। ২. হেমোরেজিক স্ট্রোক : যা ব্রেইনের অভ্যন্তরীণ রক্তনালী ছিড়ে গিয়ে ব্রেইনের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে যা আক্রান্ত স্থানের টিস্যুগুলোকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। যার ফলে রোগীর বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা যায়।

যেমন শরীরের একপাশ ঝিম ঝিম বা অবশ অবশ মনে হওয়া অথবা শক্তি কমে যাওয়া, মুখ বেকে যাওয়া অথবা আক্রান্ত পাশের হাত-পা, নাড়াতে না পারা ইত্যাদি। কিন্তু মজার ব্যাপার হল। ইস্কেমিক স্ট্রোক বা হেমোরেজিক স্ট্রোক উভয়েরই উপসর্গ একই তাই রোগ নির্ণয়ের জন্য ব্রেইনের সিটি স্ক্যান বা এমআরআই খুবই জরুরি। কারণ দুই ধরনের স্ট্রোক এর চিকিৎসা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

আমরা জানি যে কোন রোগের ক্ষেত্রে প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধই উত্তম পন্থা। অতএব কিভাবে আমরা স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে পারি। ১. ধুমপান বন্ধ করা, ২. ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, ৩. চর্বি জাতীয় খাবার না খাওয়া অর্থাৎ যাদের শরীরের রক্তে চর্বির পরিমাণ বেশি তাদের চর্বি কমানোর ব্যবস্থা নেওয়া, ৪. নিয়মিত ব্যায়াম করা ও ৫. স্ট্রেস বা দুঃচিন্তা না করা ইত্যাদি।

এখন আসুন যখন একজন ব্যক্তি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে শরীরে একপাশ প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে গেলেন অর্থাৎ তার করণীয় কী?
অনেকেরই ধারণা এই ধরনের প্যারাইসিসের কোন চিকিৎসা নেই, এটা একেবারেই ভুল কথা। এখন বিশ্বে খুবই উন্নতমানের চিকিৎসা আবিষ্কার হয়েছে- যা বাংলাদেশেও দ্রুততম সময়ের মধ্যে আশা করি শুরু হবে। সেটি হলো একটি রোগী স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি তার রোগ নির্ণয় করা যায় যে ইস্কেমিক স্ট্রোক এর কারণে প্যারালাইসিস হয়েছে তা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে থ্রম্বো এম্বোলিক এজেন্ট ইনজেকশন আকারে দিলে রোগী খুবই দ্রুত সুুস্থ হয়ে যেতে পারে কিন্তু বেশীরভাগ মানুষই সচেতনার অভাবে দেরিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। যার ফলে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন রোগীরা।

এখন বলতে পারেন যে রোগীটি স্ট্রোক পরবর্তী প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হলেন তার আবার পূর্বের জীবনে ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে কি?
হ্যাঁ, সুযোগ আছে কিন্তু যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে স্ট্রোক এ আক্রান্ত ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং নির্ণয় করতে হবে কি ধরনের স্ট্রোকে তিনি আক্রান্ত হয়েছেন এবং নির্ণয় পরবর্তী চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

এক্ষেত্রে চিকিৎসা দুই ধরনের :

১. মেডিসিন বা সার্জারি যা আক্রান্ত ব্যাক্তির ব্রেইনের রক্ষ চলাচল বৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করবে ইস্কেমিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে। অন্যদিকে, হোমোরেজিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে রক্ত সরানোর জন্য কিছু কিছু রোগীর অপারেশন এর প্রয়োজন পড়ে

২. পুনর্বাসন চিকিৎসা : এটি একটি সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন রোগীর ফিজিক্যাল রিহ্যাবিলিটেশন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন অকুপেশনাল রিহ্যাবিলিটেশন, আবার কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে কথা বলতে অসুবিধা দেখা দেয় যাকে মেডিকেলের পরিভাষার এফাসিয়া বলা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ পুনর্বাসন। তাই পুনর্বাসন চিকিৎসাটি হওয়া উচিত একটি মাল্টিডিসিলিনারি টিম এপ্রোচ- যার মাধ্যমে একটি রোগী যেন তার সবগুলো অসুবিধা থেকে মুক্তি পেতে পারেন এবং এই সমন্বিত চিকিৎসা পেলে একজন রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে।

লেখক : কনসালটেন্ড ও বিভাগীয় প্রধান, ফিজিওথেরাপি বিভাগ, প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

পর্যালোচনা সংক্ষিপ্ত বিবরণ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন