রবিবার, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪
spot_img
Homeসারা বাংলাপাসপোর্ট ছাড়া বিমানে ওঠা শিশু জুনায়েদ হতে চায় পাইলট

পাসপোর্ট ছাড়া বিমানে ওঠা শিশু জুনায়েদ হতে চায় পাইলট

পাসপোর্ট-বোডিং পাস ছাড়াই বিমানে উঠে আলোচনা আসা শিশু জোনায়েদ মোল্লা বাড়ি ফিরেই বাঁধা পড়ে শিকলে। গত মঙ্গলবার বাড়ি ফেরার পর সকালে পরিবারের সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় জুনায়েদ। এরপর অনেক খোঁজাখুজি করে সন্ধান পেয়ে জুনায়েদকে ধরে এনে শিকলবন্দি করা হয়। গত শুক্রবার এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অনুরোধে তাকে শিকলমুক্ত করা হয়। জোনায়েদ মোল্লার বিমানে চড়ার ইচ্ছা পূরণ করা হবে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী ও আত্মীয়স্বজন।

এরই মধ্যে আবার শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জুনায়েদ মোল্লা পাইলট হবে বলে মনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি ফুলকুচি দিয়ে বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল থেকে টাকি মাছ মেরে সময় পার করছেন।

এর আগেও কাউকে কোনো কিছু না বলে চলে যাওয়ায় ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হতো। ৪ দিন আগে দাদিকে মাদ্রাসার যাওয়ার ওয়াদা করে বাইরে হয়ে ঢাকায় গিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গেটের নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে উঠে পরে বিমানে। এ নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

জানা যায়, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পারইহাটি গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী ইমরান মোল্লার প্রথম পক্ষের ছেলে জোনায়েদ মোল্লা (১০)। বেশ কয়েক বছর আগে মা অন্যত্র চলে যাওয়ার পর সৎমায়ের কাছে বড় হতে থাকে জোনায়েদ। ভর্তি করে দেওয়া হয় উপজেলার উজানী হাফিজিয়া মাদ্রাসায়। তবে বিভিন্ন সময় বাড়ির কাউকে না বলে বাইরে চলে যায় জোনায়েদ। তবে এবার ঘটিয়েছে আবাক কাণ্ড, যা নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

পরিবার সূত্রে আরও জানা যায়, গত এক সপ্তাহ আগে জোনায়েদ মোল্লা তালাবদ্ধ ঘর থেকে বের হয়েই প্রথমে ইজিবাইকে করে মুকসুদপুর থেকে বাসে উঠে চলে যায় ঢাকার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে বসুন্ধরা হয়ে যায় এয়ারপোর্টে। পরে ওপরে উঠতে গেলে বাধা পেয়ে অন্য পাশ দিয়ে ঘুরে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে জোনায়েদ। পরে এয়ারপোর্টের গেটের নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে সোজা উঠে পড়ে কুয়েতগামী কুয়েত এয়ারওয়েজের রাত ৩টা ১০ মিনিটের একটি ফ্লাইটে। প্রায় ১ ঘণ্টার মতো বিমানের সিটে বসে থাকার পর জুনায়েদ প্লেনের ভেতরে কোরিডোরে হাঁটাচলা করছিল। এ সময় কেবিন ক্রু জুনায়েদকে সিটে বসার পরামর্শ দেন। তখন শিশুটি একটি সিটে বসে পড়ে। একপর্যায়ে জুনায়েদ যেই সিটে বসেছিল পাশের সিটের যাত্রী শিশুটিকে তার বাবা-মায়ের কাছে গিয়ে বসতে বলে। কিন্তু শিশুটি তার বাবা-মায়ের বিষয়ে কোনোকিছু বলতে পারেনি।

এর আগেও বাড়ির কাউকে কিছু না বলে ঢাকা, মোংলা, ফরিদপুর, বাড়বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে চলে যায় বলে জানিয়েছে জোনায়েদের পরিবার। জোনায়েদ চলে যাওয়ার পর খোঁজাখুঁজি করা হয় বিভিন্ন স্থানে। পরে এয়ারপোর্ট থানা থেকে ফোন আসার পর জোনায়েদের খোঁজ পায়। পরে জোনায়েদের চাচা ঘটনাস্থলে গিয়ে জুনায়েদকে পুলিশের কাছ থেকে বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়ি এসে সকালে আবারও পালিয়ে যায় জোনায়েদ। পরে খুঁজে বের করে পায়ে শিকল দিয়ে তালাবন্ধ করে ঘরের খুঁটির সঙ্গে আটকে রাখা হয়। পরে এলাকাবাসী ও আত্মীয়স্বজনের অনুরোধে তাকে শিকলমুক্ত করা হয়।

শিশুটির চাচা ইউসুফ মোল্লা বলেন, আমার ভাতিজা জোনায়েদ মোল্লা ছোটবেলা থেকে খুবই দুরন্ত। তাকে হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়েছিল। সেখান থেকে সে বারবার পালিয়ে আসে বলে তাকে মাদ্রাসা থেকে এনে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। শিশু জোনায়েদ বাড়ি থেকে মাঝেমধ্যে হারিয়ে যায় আবার একাই ফিরে আসে। গত এক সপ্তাহ আগে সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরে আমরা তার খোঁজ পাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি সে সেখান থেকেও পালিয়ে গেছে। বিমানে উঠে পড়ার ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। বিমানবন্দর থানা থেকে আমাদের ফোন করা হলে তাকে বিমানবন্দর থানা থেকে তাকে নিয়ে আসি। বাড়িতে আনার পর সকালে আবারও অন্যত্র চলে গিয়েছিল জুনায়েদ। পরে তাকে খুঁজে এনে পায় শিকল পরানো হয়। পরে এলাকাবাসী ও আত্মীয়স্বজনের অনুরোধ তাকে শুক্রবার শিকলমুক্ত করা হয়। এখন আবার জুনায়েদ বলছে সে পাইলট হবে, বিমান চালাবে।

শিশু জোনয়েদ মোল্লার সঙ্গে কথা হলে সে কালবেলাকে তার ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলে, আমি বিমানবন্দরের সব নিরাপত্তারক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিমানে উঠে পড়ি। আমি কোনো কিছু না বুঝেই শখের বসে বিমানে উঠেছিলাম। বিমানে ওঠার পর আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এ জন্য প্লেনের মধ্যে হাঁটাচলা করেছিলাম।

তুমি এখন মুক্ত এমন প্রশ্নের জবাবে জোনায়েদ বলে, আমার ভালো লাগছে। এর আগে কাছ থেকে কখনো প্লেন দেখি নাই। ওইখানে (এয়ারপোর্ট) গিয়ে ভেতরে ঢোকার পর প্লেন দেখতে পেয়ে হাঁটতে হাঁটতে প্লেনের কাছে গিয়ে উঠে পড়ি। তবে আমার ইচ্ছা বিমানে চড়া থেকে সরে এসে নিজে বিমানের পাইলট হবো এবং বিমান চালাব।

ছেলে জুনায়েদের বিমান চালানোর ইচ্ছা এবং পাইলট হওয়ার বিষয়ে জুনায়েদের মা মাকসুদা বেগম বলেন, আমার ছেলে জুনায়েদ পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। আমি দোয়া করি আল্লাহ যেন তার মনের আশা পূরণ করেন।

পর্যালোচনা সংক্ষিপ্ত বিবরণ

Al Mahmud Apu
Al Mahmud Apu
Traine Sub-Editor, Sangbad Post

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন