রংপুরে নির্মাণ করা হচ্ছে বিশ্বমানের ৪৬০ শয্যা বিশিষ্ট সমন্বিত ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগ ইউনিট। রংপুর অঞ্চলের দুই কোটি মানুষের জন্য এটি হবে বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র। রংপুর বিভাগের মধ্যে এটি হবে বিশ্বমানের প্রথম ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগ ইউনিট। বিশ্বে ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগে যে ধরণের চিকিৎসা হয়, তা রংপুর থেকেই হবে। এতে স্বাস্থ্য সেবাখাতে সুবিধাপ্রাপ্তিতে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে এই জনপদের মানুষ।
জানা গেছে, গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবোধায়নে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ১ একর ৩৭ শতক জমির ওপর অত্যাধুনিক এই ইউনিটের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। স্থাপত্য অধিদপ্তরের নকশার আলোকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এটি বাস্তবায়ন করছে। দুটি বুনিয়াদি ভিত্তি (ভবনের ভূগর্ভস্থ অংশ) এবং ১৫ তলা ভবন বিশিষ্ট এই ইউনিটে ক্যানসারের জন্য ১৮০টি, কিডনির জন্য ১৬৫ এবং হৃদরোগের জন্য ১১৫টি শয্যা রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
অনুমেদিত প্রকল্পটির প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয় ৯২ কোটি ৭৩ লাখ ৪৯ হাজার ৫৩৬ টাকা। ঢাকার বঙ্গ বিল্ডার্স লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৮৩ কোটি ৪৬ লাখ ১৪ হাজার ৫৮২ টাকা ব্যয়ে এর নির্মাণ কাজ চলছে। এই প্রকল্পটি ২৪ মাস সময়সীমা নির্ধারণ করে কার্যাদেশ দেয়া হয় ২০২১ সালের ৩০ মে।
জানা যায়, নির্মাণাধীন জমিতে পানির স্তর উচ্চ হওয়ায় ৪০ ফিট মাটি কেটে কাজটি করাসহ মাঝে বৈশ্বিক করোনা অতিমারীর কারণে প্রকল্পের কাজ অনেকটা বিলম্বিত হয়। প্রায় ২ বছর পর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ফের নির্মাণযঞ্জ শুরু হয়। এর আগে ২০২২ সালে ৯ জানুয়ারি এই সমন্বিত ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগ ইউনিটটির ভার্চুয়ালি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমে এটি ১০০ শয্যার অনুমোদিত হলেও পরবর্তিতে ৪৬০ শয্যায় উন্নিত করা হয়।
এদিকে রংপুর বিভাগের সমস্ত মানুষের একমাত্র উন্নত চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অথচ সেখানে প্রায়ই নেফ্রোলজি বিভাগে কিডনি ডায়ালাইসিসে যন্ত্রত্রুটির কারণে ভুগতে হয় রোগীদের। সরকারি হাসপাতাল হলেও বেশির রোগী সেখানে ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা পায় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
হাসপাতালটির হৃদরোগ বিভাগেও রয়েছে চিকিৎসক সংকটসহ নানা অব্যবস্থাপনা। রোগীর সাথে একের অধিক রোগীর স্বজনের দেখা মেলে বিভাগটিতে। একাধিক দর্শনার্থী প্রবেশ ও অবস্থান করা নিষেধ থাকলেও রোগীর স্বজনরা এই নিয়ম না মানায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয় দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সদের। অথচ অত্যন্ত মুমূর্ষু অবস্থায় এ বিভাগের প্রতিটি রোগীকে ভর্তি করানো হয়। একদিকে নির্ধারিত বেডের চাইতে রোগীর সংখ্যা বেশি, অপরদিকে চিকিৎসক সংকটের জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসকসহ সেবিকাগণও সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
এছাড়া রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীরা পাচ্ছেনা প্রযোজনীয় চিকিৎসা সেবা। দরিদ্র আর নিম্নবিত্ত রোগীদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। এ পরিস্থিতিতে নির্মাণাধীন ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগ ইউনিটটি ঘিরে আশার আলো দেখছেন এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। তারা মনে করছেন, স্বাস্থ্য সেবাখাতে সরকারের বিভিন্ন সফল উদ্যোগের মধ্যে এটি রংপুর বিভাগের জন্য অনেক বড় মাইলফলক হয়ে থাকবে।
এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বঙ্গ বিল্ডার্স লিমিটেডের প্রকল্প প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিশেষায়িত ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগ ইউনিটের নির্মাণ কাজ দেড় বছর আগে শুরু হয়েছে। কাজের শুরুতে এখানকার মাটি এবং পানির চাপের কারণে ব্যঘাত ঘটে। পরে মাটি আটকানোর জন্য সীট পাইল করা হয়। মাটি নিয়ন্ত্রণ করার পর পানির চাপ সৃষ্টি হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, করোনার সংক্রমণে সবকিছু যখন স্থবির ছিল, তখন কিছুই করতে পারিনি। সবমিলিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করতে লম্বা সময় বিলম্ব হয়। তবে এখন কাজ পুরোদমে চলছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা নির্মাণ কাজ শেষে ভবনটি হস্তান্তর করার চেষ্টা করব।
এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদফতর রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খন্দকার বলেন, ৪৬০ শয্যা বিশিষ্ট ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগ ইউনিট প্রকল্পের কাজটি গণপূর্ত বাস্তবায়ন করছে। নির্মাণ কাজ এখনো চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বড় ধরণের কোনো দুর্যোগ, মহামারি বা সংকট দেখা না দিলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করা সম্ভব হবে। প্রকল্পের পুরো কাজ সম্পন্ন করার পর হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হবে।
রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ বিমল চন্দ্র রায় জানান, রংপুরে নির্মাণাধীন ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগ ইউনিটটি হবে বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যবস্থাপনা ইউনিট। এখানকার যন্ত্রপাতিসহ সব ব্যবস্থাপনা থাকবে অত্যাধুনিক। বিশ্বে যেভাবে চিকিৎসা হয় এখানেও সেভাবে হবে।