রবিবার, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪
spot_img
Homeসারা বাংলারংপুরে ভুয়া ভাউচারে ৩৮ বিদ্যালয়ের বরাদ্দ কর্মকর্তার পকেটে

রংপুরে ভুয়া ভাউচারে ৩৮ বিদ্যালয়ের বরাদ্দ কর্মকর্তার পকেটে

রংপুর সদর উপজেলায় গত ৩০ জুনের মধ্যে ৩৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭৬ লাখ টাকার উন্নয়নকাজ দেখানো হয়েছে শুধুই কাগজে-কলমে। কিন্তু সেই কাজ এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে ৩০ জুনের আগে ভুয়া ভাউচার নিয়ে ট্রেজারি থেকে পাস করে টাকা নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এরপর তিনি প্রধান শিক্ষকদের কাজ বাস্তবায়ন করে তাঁর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪)-এর আওতায় এই উপজেলায় ৩৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১২ জুন ২ লাখ করে টাকা বরাদ্দ দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। কাজের মেয়াদ ছিল ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রধান শিক্ষকেরা ৩০ জুনের মধ্যে নিজের টাকায় কাজ করে বরাদ্দ হওয়া টাকা নেওয়ার কথা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কেউ কাজ করতে ব্যর্থ হলে বরাদ্দের টাকা সরকারের কোষাগারে ফেরত যাবে।
তিনজন প্রধান শিক্ষক জানান, ওই তারিখের মধ্যে কেউই নিজের টাকায় কাজ করেননি। টাকা যাতে ফেরত না যায় এ জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে তাঁরা তাঁর কার্যালয়ে কাজের ভুয়া ভাউচার জমা দিয়েছেন। এরপর শিক্ষা কর্মকর্তা টাকা উত্তোলন করে নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। এখন তিনি কাজ করে টাকা নিতে বলছেন।
অন্তত ১২টি বিদ্যালয় সরেজমিনে দেখা গেছে, সেখানে কোনো কাজ হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরাদ্দ হওয়া অন্যান্য বিদ্যালয়েরও একই অবস্থা।
সদর উপজেলার আশরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২ লাখ টাকা বরাদ্দ পায়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ২১ জুলাই প্লাস্টিক বোর্ড ৪৫ হাজার ৮০ টাকা, টাইলস ৭৭ হাজার ৪০০, বালু ও শ্রমিক ২৯ হাজার ৭৪০ টাকাসহ পাঁচ দফা কাজের ভাউচার শিক্ষা অফিসে জমা দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো কাজই হয়নি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আখতারুন নেসা বলেন, ‘আমি এখনো পুরো টাকা না পাওয়ায় কাজ শুরু করতে পারিনি।’ এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘কাজ করার আগে শিক্ষা অফিস ভাউচার চাওয়ায় তা সিস্টেমে দিয়েছি।’
৩০ জুনের আগে মাহিগঞ্জ বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রং, গার্ডিয়ান ছাউনি ও বাউন্ডারি ওয়াল সংস্করণের কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে মর্মে শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভাউচার জমা দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে এখনো কোনো কাজই করা হয়নি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সায়মা আকতার বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়ে বরাদ্দ ২ লাখ টাকা। শিক্ষা অফিসে অনেক ধরনা দিয়ে ১ লাখ টাকার চেক পেয়েছি। সেই টাকায় আজ রঙের কাজ শুরু করেছি। আগাম ভাউচার জমা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা নতুন কিছু না। দীর্ঘ বছর ধরে এখানে এই নিয়মই চলে আসছে।’
সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম  বলেন, ‘বিধি অনুযায়ী কাজ করে টাকা নিতে হবে প্রধান শিক্ষককে। এর বাইরে আগাম টাকা দেওয়ার সুযোগ নেই। তবুও কিছু স্কুলকে ১ লাখ করে টাকার চেক দিয়েছি।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালক মো. মুজাহিদুল ইসলাম সংবাদ পোস্টকে বলেন, ‘বিধি অনুযায়ী ৩০ জুনের মধ্যে নিজের টাকায় কাজ করে প্রধান শিক্ষককে বরাদ্দের টাকা নিতে হবে। ওই সময়ের মধ্যে কেউ কাজ বাস্তবায়ন করতে না পারলে বরাদ্দের টাকা ফেরত যাবে। কিন্তু টাকা উত্তোলন করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অ্যাকাউন্টে রাখার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পর্যালোচনা সংক্ষিপ্ত বিবরণ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন