দিন দিন হাওর কেন্দ্রিক পর্যটন ব্যবসা বৃদ্ধি পেয়েছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মাদাফিসারিজ খ্যাত রামসার সাইট টাংগুয়ার হাওরসহ পর্যটনস্পট গুলোতে। আর পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে শতাধিক বিলাশ বহুল হাউস বোড তৈরি করে নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই হাওরের জীববৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও নদী ধংশ করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কিছু পর্যটন ব্যবসায়ীরা, এর সাথে যুক্ত হয়েছে পরিবেশ ও হাওর নিয়ে কাজ করা সংঘটনের নামধারী নেতারা। ফলে পরিবেশ ও হাওর নিয়ে কাজ করা সংঘটনের নামধারী নেতারা এই বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখা ও প্রশাসন নিরব ভুমিকা পালন করায় এগুলোর কার্যক্রম ও হাওর নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন হাওর পাড়ের বাসিন্দারাসহ সর্বস্তরের মানুষ।
এদিকে, পরিবেশ অধিদপ্তর ও হাওর নিয়ে কাজ করা লোকজন বলেছেন ধান ও মাছের জন্য টাংগুয়ায় এসব নৌকা মারাত্মক বিরুপ প্রভাব পড়বে। না হলে সিলেটের রাতার গুলের মত নষ্ট হবে টাংগুয়ার হাওরের জীববৈচিত্রসহ সার্বিক পরিস্থিতি। গত ১০বছরে রাতারগুল জীববৈচিত্রসহ সার্বিক পরিস্থিতি ঠিক থাকলেও এখন মরা গাছ আর বন্যার সাদা পানি ছাড়া কিছুই নেই। এখন রাতারগুল এলাকার মানুষ বসে বসে মাছি মারে। পর্যটক যাওয়া তো দুরে থাক একজন স্থানীয় মানুষও ওখানে যায় না এর জন্য দায়ী পর্যটক এবং পর্যটন ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট সবাই। সাংবাদিকরা বারবার এসকল ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে সতর্কতামুলক প্রচারণা চালালেও কোন কাজে আসেনি। তাই জানান প্রশাসনের কাছে সচেতন মহলের দাবী এখনেই সময় নিয়মনীতি মেনে হাওরের ধান,মাছ,পরিবেশ,প্রকৃতি ও হাওর পাড়ের সামাজিক অবক্ষয় রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পর্যটক পরিবহনকারী বিভিন্ন নৌযানের চালকগনের সাথে কথা বলে ও খোঁজ নিয়ে জানাযায়,তাহিরপুর উপজেলায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নীলাভূমি টাংগুয়ার হাওর, রয়েছে যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান, শহীদ সিরাজ লেক, বারেকটিলায়হ বিভিন্ন পর্যটন স্পষ্ট রয়েছে। পর্যটন স্পষ্ট গুলোতে বর্ষায় নৌযান ছাড়া হাওরে বেড়ানো অসম্ভব। তাই স্থানীয় মানুষ বড় আকারের নৌকা তৈরী করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পর্যটকদের পরিবহন করত। ঐসব পর্যটন ব্যবসায়ীরা পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সম্প্রতি টাংগুয়ার হাওরে বিলাশ বহুল হাউস বোড গুলোতে ক্যাবিন, এটেষ্ট টয়লেট ও আলাদা বাতরুম আর চাহিদা মত রান্না করা খাবার দিচ্ছে প্যাকেজটুরের মাধ্যমে।
এই হাউজ বোড গুলোতে আবাসিক হোটেলের মত নাম লিপিবদ্ধ করার নিয়ম না থাকা ও প্রশাসনের নজরধারী না থাকার ফলে হাওরে আগত পর্যটকদের মধ্যে বেশির ভাগ উঠতি যুবক-যবতী,বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের অবিবাহিত চাকুরীজীবিরাই তাদের মত করে এক সাথে রাত্রি যাপন করছে। তাদের অসাভাবিক পোশাক চলাফেরা স্বামী স্ত্রী না প্রেমিক প্রেমিকা বুঝার উপাই নেই। এতে করে হাওরের বাসিন্দাদের মধ্যে বিরুপ প্রভাব পড়ছে হাওরে পাখি ও মাছের উপর। মাছ পাখি হাওরে কমে গেছে। এছাড়াও পর্যটকরা প্লাস্টিকের পানির বোতল, কোমল পানিও, পটেটোসহ নানান জিনিস, বোডে টয়লেটসহ সকল ময়লা হাওরের পানিতেই ফেলছে। এতে করে হাওরের পানি দূষিত হওয়ায় এর প্রভাব পরছে হাওর পাড়ের বাসিন্দাদের উপর।
তবে মেহেদি হাসান রিয়াদসহ ঐ সব হাউজ বোড গুলোর মালিক ও চালকগন বলছেন,তারা ভাড়া কমেই নিচ্ছেন। টিমের মধ্যে টিম লিডারের নাম লিখিত থাকে। আর বেশি ভাগ তারা প্যাকেজ টুর দিচ্ছে সেই অনুযায়ী তারা আগত পর্যটকদের খাবার থেকে শুরু করে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন। তবে কোনো অনিয়ম ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আজও ঘটেনি। আগত পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিজেরাই দেখভাল করেন। পরিবেশ ও টাংগুয়ার হাওরের ক্ষতি হয় এমন কিছু তারা করছেন না আর পর্যটকগনও বিরত রয়েছে।
জিসান মিয়া,আরিফ মিয়াসহ হাওর পাড়ের বাসিন্দাগন জানান,পরিবেশ ও হাওর নিয়ে কাজ যারা করে তারা এখন হাওর ও পরিবেশ কথা বলা বাদ দিয়ে টাকা কামাই করতে বড় বড় হাউজ বোডের মালিক হয়ে হাওরে নেমেছে। হাওরে নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র ভাবে হাওরে হাউজ বোড চলাচল উচ্চ শব্দে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে গান বাজানোসহ হাউজ বোডসহ সকল নৌকার টয়লেটসহ সকল ময়লা হাওরের পানিতেই ফেলায় হাওরের পানি দূষিত হওয়ায় এর প্রভাব পরেছে হাওর পাড়ের বাসিন্দা,পাখি ও মাছের উপর। মাছ পাখি হাওরে কমে গেছে। আর পর্যটকদের অসাভাবিক আচার আচরন,চলাফেরার কারনে গ্রাম এবং হাওরা লের ঊঠতি বয়সী যুব সমাজের মধ্যে এর বিরুপ প্রভাব পরেছে,আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের মূল কারন হয়ে দাড়িয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা থেকে আগত পর্যটক জানান,আমরা বন্ধু-বান্ধবী মিলে ২০ জনের একটি টিম এসেছি টাংগুয়ার হাওরসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পষ্ট গুলোতে একরাত দু দিনের টুরে। এখানে নৌকা ছাড়া বিকল্প থাকার ব্যবস্থা না থাকায় আমরা হাউস বোড বুকিং করেছি। ভাড়া বেশি হলেও কিচ্ছু করার নাই কারন বিকল্প ব্যবস্থা ও ত নাই যে কারনে আমরা বাধ্য হয়েই হাউজ বোডে আছি। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাড়া,টাংগুয়ার হাওর রক্ষা আর নিরাপত্তার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আগত পর্যটকদের উপকার হবে।
এই বিষয় তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রায়হান কবির জানান, হাওরে এখন হাউজ বোড চলছে যা পূর্বে ছিলনা। হাউজ বোডে প্যাকেজ টুর দিচ্ছে আর সৌখিন পর্যটকরাও একটু আলাদা ভাবে নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করছে। সেখানে কোন অনিয়ম ও নিয়মনীতির পরিপন্থী কোনো কাজ হচ্ছে কি না তা কঠোর ভাবে তদারকি করা হবে। আর এমনিতেই নিরাপত্তাসহ সার্বিক পরিস্থিতি আমরা সবোচ্ছ নজরধারীতেই রাখা হচ্ছে।