সাপ্তাহিক ছুটি, দুর্গাপূজা ও ঈদে মিলাদুন্নবীর (সা.) ছুটিসহ টানা পাঁচ দিনের ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের ঢল নেমেছে। সৈকতের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সৈকতজুড়ে পর্যটক দেখা গেছে। এবার পরিবার নিয়ে সমুদ্র দর্শনে গেলেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
প্রতিমন্ত্রী কবে কক্সবাজার গিয়েছেন তা জানা না গেলেও রোববার (৯ অক্টোবর) বিকাল ৩টার পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বেশ কিছু ছবি পোস্ট করেছেন জুনাইদ আহমেদ পলক। ছবির উপের তিনি লিখেছেন, ‘কক্সবাজারে আজ দুপুরে’।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সরকারি দায়িত্ব পালনে দম ফেলানোর ফুসরত নেই। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোন কর্মসূচি থাকে তার। তাছাড়া নিজের নির্বাচনি এলাকাতেও যেতে হয়ে। স্ত্রী সন্তানের জন্য সময় বের করাই কঠিন। বিভিন্ন ইস্যুতে এবার প্রায় সপ্তাহ খানেক সরকারি ছুটি মিলেছে। সেই সুযোগে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে গেছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
গত মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) সকাল থেকে মানুষের ঢল নামে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে। কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্টে হাজার হাজার পর্যটক দেখা গেছে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায়ও ব্যাপক ভিড় রয়েছে। এতে দেখা দিয়েছে যানবাহন সঙ্কট। গণপরিবহনগুলো রিজার্ভ ট্রিপ ধরতে গিয়ে স্থানীয়দের এড়িয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) থেকে পর্যটন মৌসুমের প্রথমবারের মত শুরু হচ্ছে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ চলাচল। তবে আপাতত একটি জাহাজই কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে চলাচল করবে বলে জানিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজ্জামান। মিয়ানমার পরিস্থিতি ভালো হলে টেকনাফ থেকেও জাহাজ চলাচল করবে বলে জানান তিনি।
সবেমাত্র এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এর মধ্যে দুর্গাপূজা, ঈদে মিলাদুন্নবী ও প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে সারা দেশে ১ থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ পড়েছে। এছাড়া সাপ্তাহিক ছুটি বাদ দিয়ে এ সময়ে দুদিন সরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমাও বন্ধ থাকছে। এই সুযোগে দূর-দূরান্তের মানুষ বেড়ানোর জন্যে ছুটে আসছেন কক্সবাজারে।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের ছুটির পর সম্প্রতি তেমন পর্যটক সমাগম হয়নি। কারণ দেরিতে বর্ষা, প্রচণ্ড গরম, ঘনঘন বৈরি আবহাওয়ায় সমুদ্র উত্তাল থাকায় পর্যটকরা কক্সবাজারে আসেনি। তবে এই দশ দিনে পর্যটন শহর কক্সবাজারে লাখো পর্যটক সমাগম হয়েছে।
বিচকর্মীদের সুপারভাইজার মাহবুব আলম বলেন, গত কয়েকদিন সকাল থেকে সৈকতের ৪-৮টি পয়েন্ট থেকে পর্যটকরা নামছেন। কেউ কেউ দলবদ্ধ হয়ে ফুটবল খেলছেন, কেউ ঘোড়ায় চড়ে মজা করছেন, ছবি তোলছেন আবার কোনো কোনো মা-বাবা বাচ্চাদের নিয়ে পানির কাছে মাটির ঘর বানিয়ে আনন্দে মেতেছেন। তাদের সচেতন করতে আমরা মাঠে রয়েছি। মাইকিংয়ের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সচেতনতার ব্যাপারে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, কক্সবাজারে হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে ৫ শতাধিক। এখানে রাত যাপনের সুযোগ রয়েছে এক লাখ ৭০ হাজারের মতো। তাছাড়া জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ায় সেন্টমার্টিনেও রাতযাপন শুরু করেছে পর্যটকরা। সেখানে ৫০টি হোটেল কটেজে প্রায় ২-৩ হাজার পর্যটক রাত যাপন করে। এটা নিয়ে পরিবেশবাদিরা আপত্তি জানালেও প্রশাসন তা আমলে নেয়নি।
হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, ৯৫ শতাংশ হোটেলের কক্ষ ভাড়া হয়েছে। আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটক সমাগম থাকবে। এই সময়ের মধ্যে অন্তত দশলাখ পর্যটকের সমাগম হবে। ফলে আগামী রোববার পর্যন্ত রুম বুকিং নেয়া হচ্ছে না।
ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজ্জামান। তিনি বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। শুধু নিরাপদ ভ্রমণ নয়, পর্যটকেরা যেন কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয়, সেই বিষয়ে আমরা সর্তক আছি। সাদা পোশাকসহ পর্যটন স্পটগুলোতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন, ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ, সিসিটিভি ক্যামেরা কার্যকরসহ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সক্রিয়ভাবে কাজ করবে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পাশাপাশি কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ায় সেখানে নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ ।