রবিবার, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪
spot_img
Homeসারা বাংলাসৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা চালানোর লোক নেই

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা চালানোর লোক নেই

রেলের দুর্দশা কাটাতে বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করলেও তা কাজে আসছে না। নীলফামারীর সৈয়দপুরে অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে কারখানার আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে ১২২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সরকার।

প্রকল্পের আওতায় আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ট্রেনের যাত্রীবাহী বগি, ওয়াগন, ক্রেন এবং বয়লার মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ সম্পন্ন করার পাশাপাশি ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু জনবলের অভাবে এসব আধুনিক যন্ত্রপাতি পড়ে আছে। প্রকল্পের সুবিধা কোনো কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

ভারত ও চীন থেকে আনা মানহীন যন্ত্রপাতি স্থাপনের কারণে দীর্ঘমেয়াদে সেগুলোর সুফল পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে প্রকল্প তদারকি সংস্থা বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। জবাবে

রেল বিভাগ বলছে, রেলের সব সেক্টরেই জনবল সংকট রয়েছে। নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তবে তারা রাতারাতি দক্ষ হয়ে উঠবে না; সময় লাগবে। ‘সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপ আধুনিকায়ন’ প্রকল্পের ওপর সংস্থাটির একক প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

২০০৯ সালে তিন বছর মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ওই বছরের এপ্রিলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় ১২২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি পাস হয়। নির্দিষ্ট মেয়াদে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৫৩ কোটি টাকায়। কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে। গত মে মাসে আইএমইডি এই প্রকল্পের প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করতে সরেজমিনে যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় রেলওয়ের ব্রডগেজ ও মিটারগেজ যাত্রীবাহী বগি এবং ওয়াগনের ক্রমবর্ধমান মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ চাহিদা পূরণে সৈয়দপুরের ১৭টি ওয়ার্কশপ মেরামত করা হয়। এ ছাড়া ৪৩ ধরনের মেকানিক্যাল ও ১৩ ধরনের ইলেকট্রিক্যাল প্লান্টস অ্যান্ড মেশিনারিজ প্রতিস্থাপন এবং ডিপ টিউব-ওয়েল স্থাপনসহ একটি ওভারহেড পানির ট্যাঙ্ক নির্মাণ করা হয়। এগুলোর মাধ্যমে কারখানার দক্ষতা, উৎপাদন ক্ষমতা ও গুণগতমান বৃদ্ধিই পাবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু হয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তীব্র জনবল সংকট ও উন্নত প্রযুক্তির মেশিন সম্পর্কে অপারেটররা অভ্যস্ত না হওয়ায় এসব যন্ত্রপাতি কারখানার শ্রমিকরা ব্যবহার করতে পারছেন না। এ ছাড়া বিদ্যমান শ্রমিকদের দক্ষতা এবং কাজের গুণগতমান কাক্সিক্ষত হারে বৃদ্ধি না পাওয়ায় সার্বিকভাবে কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধি পায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেল সচিব মোফাজ্জেল হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ৮০’র দশকে রেলপথ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ওই সময় অনেক কর্মকর্তাকে বিদায় করে দেওয়া হয়। ওই ধাক্কা এখনো সামলে ওঠা যায়নি। এজন্য ভালো ও দক্ষ ট্রেনচালকেরও অভাব রয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, রেল বিভাগের সব সেক্টরেই জনবল সংকট রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। কিন্তু নতুন নিয়োগ পেলেই রাতারাতি দক্ষ হয়ে উঠতে বলা যায় না। সময় লাগবে। আমরা রেল বিভাগের সেবার মান বাড়াতে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

প্রতিবেদনে জলবলের সংকটের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, প্রকল্পে আওতায় ২৫ জন জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা থাকলেও প্রকল্প পরিচালক ছাড়া একজন অনভিজ্ঞ এসএই (ম্যাকানিক) এবং একজন করনিক ছাড়া কোনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বর্তমানে কারখানায় ৬৭ শতাংশ অনুমোদিত পদ শূন্য আছে। যে হারে লোকবল কারখানার কাজে নিয়োজিত আছেন, তার থেকে বেশি হারে অবসরে যাচ্ছেন। তাই যথাসম্ভব দ্রুত সৈয়দপুর কারখানার শূন্য পদগুলো পূরণ করতে হবে।

আইএমইডি এ বিষয়ে আরও পরামর্শ দিয়ে বলছে, জনবল নতুন নিয়োগ না হওয়ায় প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে খাপখাওয়ানোর জন্য যথাযথ কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল তৈরি হচ্ছে না। তবে বর্তমান চলাচলরত ব্রডগেজ গাড়িগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রকল্প থেকে ক্রয়কৃত মেশিনগুলো কারখানার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে যথেষ্ট নয় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

কারখানায় অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়ে, সব কারখানায় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়ে নির্দেশনা থাকলেও সৈয়দপুর কারখানার অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। কারখানার অভ্যন্তরে শপগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় কম। যেহেতু কারখানায় একটি ওভার হেড ট্যাঙ্ক আছে, তাই শপগুলোকে কেন্দ্র করে পানি মজুদ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রকল্পের আওতায় মানহীন যন্ত্রপাতি স্থাপনের প্রমাণ পেয়েছে আইএমইডি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপরিহার্য ও শুধু রেলওয়ের জন্য ব্যবহার্য কিছু মেশিন উন্নত দেশ থেকে সংগ্রহ করা উচিত ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। নতুন স্থাপন করা যন্ত্রপাতিগুলো চীন ও ভারত থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। বর্তমানে সমস্যা না থাকলেও অদূর ভবিষ্যতে এগুলো নির্ভরযোগ্য সার্ভিস দিতে পারবে বলে প্রতীয়মান হয় না।

একই সঙ্গে কোয়ালিটির হলেও এসব মেশিনের আয়ুষ্কাল কারখানার অন্য মেশিনগুলোর সমকক্ষ হবে না। চাইনিজ মেশিনারিজের সফটওয়্যার ইংরেজিতে থাকায় তথ্য বুঝতে অসুবিধা হয়। আরও কিছু প্রয়োজনীয় মেশিন প্রতিস্থাপন করা দরকার ছিল, প্রয়োজনীয় মেশিনগুলো যথাসময়ে প্রতিস্থাপন না হলে অদূর ভবিষ্যতে কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

আইএমইডি সচিব আবুল মনসুর মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এই প্রতিবেদন পাঠাব। আশা করি, প্রকল্পটি কার্যকর করতে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এতে উন্নয়নে বিনিয়োগকৃত অর্থের রিটার্ন আসবে।

প্রতিবেদনে প্রকল্পটি নিয়ে পরামর্শ দিয়ে আইএমইডি বলেছে, বর্তমানে রেলপথের সম্প্রসারণ ও রোলিংস্টকের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন ট্রেন চালু হতে যাচ্ছে। যাত্রী ও মালবাহী গাড়ির চলাচলকে স্বাভাবিক রাখতে হলে লোকোমোটিভ, ক্যারেজ ও ওয়াগনগুলোকে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রেলওয়ে কারখানাগুলোকে পুরোপুরি আধুনিকায়নের করতেই হবে। রেলের দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য রেলওয়ে কারখানাগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য উন্নত মানসম্পন্ন যন্ত্রাংশ, মেশিন এবং কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন শ্রমিক নিয়োগ দিত।

সংবাদ পোস্ট

শাহজাহান সরকার কাজল/সৈয়দপুর প্রতিনিধি

পর্যালোচনা সংক্ষিপ্ত বিবরণ

Abdullah Al Niat
Abdullah Al Niat
স্বপ্ন আকাশ ছোয়া� গন্তব্য বহুদূর � বর্তমানে সাংবাদিক চর্চায় ব্রত �

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন