অনলাইনে জুয়া ও অবৈধ মালটিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন—মো. সাদ্দাম হোসেন মিজি, সহিদুল ইসলাম আলমগীর ও মো. আলমগীর খান। তাদের কাছ থেকে অনলাইনে জুয়া ও অবৈধ মালটিলেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনার কাজে ব্যবহৃত পাঁচটি মোবাইল ফোন ও সাতটি সিমকার্ড জব্দ করা হয়েছে। তাদের নিবন্ধিত অ্যাকাউন্টের তথ্য পর্যালোচনা করে প্রায় ৩ কোটি টাকা পাচারের তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এসব টাকা বিভিন্ন মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্যও পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
ডিবি সূত্র জানায়, চক্রটি নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার জন্য রেফারেলকারীকে আকর্ষণীয় বোনাস অফার করে থাকে। ৩০টি অ্যাকাউন্টের জন্য প্রতি মাসে ৩ হাজার ৬০০ টাকা, ৫০টি অ্যাকাউন্টের জন্য প্রতি মাসে সাড়ে ৭ হাজার, ১০০টি অ্যাকাউন্টের জন্য প্রতি মাসে ১৮ হাজার টাকার অফার দেয়। এভাবে ৮০০টি অ্যাকাউন্টের জন্য প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত মাসিক আয়ের অফার করা হয়। এভাবে এক বছরে ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে চক্রটি।
ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ জানান, নিয়মিত সাইবার পেট্রলিং ও অনলাইনে নজরদারির মাধ্যমে অনলাইনে জুয়া ও অবৈধ মালটিলেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সরলতাকে পুঁজি করে বেশি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী এই চক্রের তিন জনকে খিলক্ষেত এলাকা থেকে গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে গ্রেফতার করা হয়।
তারেক বিন রশিদ বলেন, গ্রেফতারকৃতরা ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে জুয়া ও অবৈধ মালটিলেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম চালাত। বেটিং সাইট ও মোবাইল অ্যাপস পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ দুটির গঠন প্রণালিতে প্রথমে রয়েছে সুপার অ্যাডমিন, তারপর পর্যায়ক্রমে ম্যানেজার, ভিআইপি এজেন্ট এবং সর্বশেষে ইউজার। মূলত সুপার অ্যাডমিন ফ্রান্স থেকে ওয়েবসাইট ও অ্যাপস নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন দেশে দেখভালের জন্য বেশ কিছু ম্যানেজার নিয়োগ করা আছে। সংশ্লিষ্ট ম্যানেজাররা কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকা টার্গেট করে সেখানে একজন এজেন্টকে অধিক কমিশনের প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করে থাকে। এজেন্টরা মূলত ইউজার সংগ্রহে সহায়তা ও বিভিন্ন সমস্যা হলে সরাসরি ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমাধানের কাজ করে। এজেন্টরা সদস্য সংগ্রহ করে তাদের প্রত্যেকের নিকট থেকে মালটিলেভেল মার্কেটিং তথা পিরামিড সিস্টেমে কমিশন পেয়ে থাকে।
গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ বলেন, গ্রেফতারকৃতরা নিজেরা অভ্যন্তরীণ কথা বার্তা ও যোগাযোগের জন্য পিএসজি সাদ্দাম হোসেন মিজি নামে প্রাইভেট টেলিগ্রাম গ্রুপ ব্যবহার করত।
গ্রেফতার সাদ্দাম হোসেন মিজি ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপসের একজন এজেন্ট এবং সহিদুল ইসলাম ও আলমগীর খান তার সহযোগী হিসেবে কাজ করত। সাদ্দাম বিভিন্ন এলাকা থেকে ইউজার সংগ্রহ করে ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপের অ্যাকাউন্ট তৈরি ও তাতে ডিপোজিট করতে সহায়তা করত। বিনিময়ে মোটা অঙ্কের কমিশন পেত। ডিপোজিট করা টাকা ডিজিটাল হুন্ডির সহায়তায় দেশের বাইরে পাচার হয়ে যেত। যার প্রভাব পড়ে দেশের সামগ্রিক রেমিট্যান্স খাতের ওপর।