রবিবার, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪
spot_img
Homeছাত্রলীগছাত্রলীগের নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে যারা

ছাত্রলীগের নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে যারা

নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলনের দিনক্ষণ। আর এরপর থেকেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীরা। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পারিবারিক পরিচয়, সংকটে দলের পাশে থাকা, বিতর্কমুক্ত, শিক্ষার্থীবান্ধব পদপ্রত্যাশীদের বিবেচনায় রাখছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। এদিকে এসব শর্ত বিবেচনায় প্রায় দুই ডজন পদ প্রত্যাশী নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে আছেন।

ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের পর ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ মেয়াদ শেষ করার আগেই ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তারা পদত্যাগ করেন। এরপর সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান যথাক্রমে আল নাহিয়ান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য। তিন মাস ভারপ্রাপ্ত থাকার পর ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তাদের ভারমুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মেয়াদকাল দুই বছর। আর মেয়াদকালের মধ্যে সম্মেলন আয়োজন করার নিয়ম থাকলেও তা করতে পারেনি জয়-লেখক। পরে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড ৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনের আয়োজনের নির্দেশনা দেয়।

এদিকে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পরপরই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা। তারা নিয়ম করে ধরনা দিচ্ছেন ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকের কাছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছেও পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন অনেকেই। আর পদপ্রত্যাশীদের প্রধান উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে নাম পৌঁছানো। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে নাম পৌঁছানোর জন্য রোবটিক্স ক্যাম্প, বাইসাইকেল বিতরণসহ শিক্ষার্থীবান্ধব নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করছেন ছাত্রলীগ নেতারা।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অন্তত এক ডজন পদপ্রত্যাশীর সঙ্গে কথা হয় সংবাদ পোস্টের । তারা জানান, বিগত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। যারা ভালো কাজ করছে তাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। তারপরও নেতা হওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের হিসাব মিলাতে হয়। আগের কমিটির নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করে আমরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের দারস্থ হচ্ছি। যাতে আমাদের নামটা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছায়।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্য ও প্রতিটি জেলা থেকে নির্বাচিত ২৫ জন কাউন্সিলর প্রতিনিধি হিসাবে গণ্য হবেন। এই কাউন্সিলররা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদ (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) নির্বাচিত করেন। ২০১১ সালে ২৭তম এবং ২০১৫ সালে ২৮তম সম্মেলনের মাধ্যমে গঠনতন্ত্রের নিয়মানুযায়ী সংগঠনটির শীর্ষ দুই পদে নির্বাচন করা হয়। তবে এসব কমিটিতে পদপ্রার্থী ছিল হাতেগোনা। সংগঠনটির তৎকালীন নেতৃত্বের অভিযোগ, এসব সম্মেলনে সাবেক নেতৃত্বদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কাউন্সিল করা হতো। এতে নিজেদের প্রার্থীরাই নেতা নির্বাচিত হতো। এই অভিযোগটি আমলে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৮ সালে ২৯তম সম্মেলনে সিন্ডিকেটের প্রভাব ভেঙে নিজেই নেতৃত্ব গঠন করেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। আগামী ৩০তম সম্মেলনেও প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্ব গঠনে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আশা দেখছেন শতাধিক পদপ্রত্যাশী। তারা ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের চার নেতা এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য প্রভাবশালী নেতার কাছে ধরনা দিচ্ছেন। তাদের মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাতে চান প্রার্থীরা।

এদিকে ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের কারণে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে বিবেচনা করা হবে। এছাড়া নেতৃত্ব নির্বাচনে পারিবারিক পরিচয়, সংকটে দলের পাশে থাকা, শিক্ষার্থীবান্ধব পদপ্রত্যাশীদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।

আলোচনায় যারা : ছাত্রলীগের বিগত কয়েকটি কমিটি শীর্ষ নেতৃত্বের নির্বাচনের প্রক্রিয়া, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা এবং গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী অঞ্চলভিত্তিক যেসব পদপ্রত্যাশী এগিয়ে আছেন তারা হলেন-

উত্তরবঙ্গ থেকে : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য, সহ সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ফেরদৌস আলম,  ক্রীড়া সম্পাদক আল আমিন সিদ্দিকী সুজন, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আবু হাসনাত সরদার হিমেল, উপ-দপ্তর সম্পাদক সজীব নাথ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মেহেদি হাসান সানি, ক্রীড়া সম্পাদক মো. আল আমিন সুজন, উপ-দপ্তর সম্পাদক খাঁন মোহাম্মদ শিমুল, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম উপ-দপ্তর সম্পাদক আহসান হাবীব, উপদপ্তর সম্পাদক আহসান হাবীব, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের  সাধারণ সম্পাদক জাকিউল ইসলাম ফুয়াদ।

চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে : কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইফতেখার আহমেদ সজিব, সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহমেদ রাসেল, শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ লিমন, উপসাহিত্য সম্পাদক জয়জিৎ দত্ত, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, নাট্য ও বিতর্কবিষয়ক সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ, মাজহারুল ইসলাম শামীম, শিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ লিমন, উপ গণয‌োগাযোগ ও প্রশ‌ক্ষিণ ব‌িষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল ন‌োমান, হাজী মোহাম্মদ মহসিন হলের সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ হোসাইন।

বরিশাল অঞ্চল থেকে : কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি রিয়াজ আল রিয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ইনান, উপ বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক সবুর খান কলিন্স, , গণ শিক্ষা বিষয়ক উপসম্পাদক সোলাইমান ইসলাম মুন্না, সহসভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসাইন, আপ্যায়ন সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম ফাহাদ, কর্মসংস্থান বিষয়ক উপ সম্পাদক খাদেমুল বাসার জয়।

ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে : কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সোহান খান, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক মেহেদি হাসান তাপস, সহসম্পাদক রাকিব সিরাজী, তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপসম্পাদক রাশিদ শাহরিয়ার উদয়।

ফরিদপুর ও মাদারীপুর অঞ্চল থেকে : কেন্দ্রীয়  ছাত্রলীগের আইন সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত।

খুলনা অঞ্চল থেকে : কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাঁধন, মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহিন।

এছাড়া আলোচনায় আছেন ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস  নারী ও সংখ্যালঘু কোটায় সহসভাপতি তিলত্তমা শিকদার, সহ সভাপতি ফরিদা ইয়াছমিন, ডাকসুর সাবেক সদস্য ও ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাকিবুল হাসান রাকিব, ধর্ম সম্পাদক তুহিন রেজা, পরিবেশ সম্পাদক শামীম পারভেজ, সাহিত্য সম্পাদক আহমেদ মনির তাঈফ, বেসরকারি বিশ্ব বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি হুমায়রা নাজ। এর বাইরেও আলোচনায় আছেন সহসভাপতি, যুগ্ম-সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক ও উপসম্পাদক পদের জন্য শতাধিক নেতা। এরা আলোচনায় থাকলেও ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী (২৭) অধিকাংশের বয়স নেই। সার্বিক বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, বয়সের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করবেন। তবে যাদের দক্ষতা আছে, ম্যাচিউরড এবং পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগ পরিবারের তাদেরই প্রাধান্য দেওয়া হবে।

সংবাদপোস্ট/ বায়জিদ সরকার

পর্যালোচনা সংক্ষিপ্ত বিবরণ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন