উজানের পাহাড়ি ঢলে রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বুধবার (১৯ জুন) বিকেল ৩টায় তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে করে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে, গঙ্গাচড়ায় কোলকোন্দ ইউনিয়নে তিস্তার পানির তোড়ে ভাঙনের কারনে হুমকির মুখে পড়েছে প্রায় ১০টি ঘরবাড়ি। ভাঙন ঠেকাতে সেখানে কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গঙ্গাচড়া কাউনিয়া উপজেলায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে তিস্তা নদীর পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা ২৮ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। বুধবার বিকেল ৩টায় এ পয়েন্টে ২৮ দশমিক ৯১ সেন্টিমিটার পানি রেকর্ড করা হয়েছে। একই সময় ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহিত হয়েছে।
অন্যদিকে, তিস্তা নদীর পানির তোড়ে গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ জুন) রাতে সেখানে প্রায় ১০০ মিটার অংশে ভাঙন শুরু হয়। খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা রাত থেকেই সেখানে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন থেকে ঘরবাড়ি রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে। ভাঙন প্রতিরোধে সেখানে ১৪ হাজার ৪২৩টি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাউবো’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী পিয়াস চৌধুরী।
লক্ষীটারি ইউয়িনের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহিল হাদি বলেন, তার ইউনিয়নে ৬০০ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হুমায়ুন কবির লাল বলেন, রাত থেকে তিস্তা নদীতে পানি বাড়ছে। তাই পানির চাপে ইউনিয়ন পরিষদের কাছে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এতে করে এলাকার দুলু মিয়া, সারোয়ার আলম, মহুবার, আনারুল, কোনা মিয়া, আমজাদ হোসেনসহ ১০ পরিবারের ঘরবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে।
কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আনছার আলী বলেন, তিস্তা নদীর পানি যেভাবে বাড়ছে এতে করে নদীর তীরবর্তী ও চরের মানুষজন অনেক আতংঙ্কে রয়েছে। ইতোমধ্যে তিস্তা নদীর পানিতে চরের বাদাম, পাটক্ষেত তলিয়ে গেছে। শতাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমন বলেন, আমরা সার্বক্ষনিক বন্যা সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করছি। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলে বন্যাদুর্গতের উদ্ধার ও আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা, তাদের খাদ্য সরবরাহ এবং বন্যা পরবর্তীতে তাদের নানা ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাবে এবং কিছু স্থানে বিপদসীমা অতিক্রম করে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতি হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। গঙ্গাচড়ার কোলকোন্দ ইউনিয়নে একটি অংশে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। সেটি মেরামতে মঙ্গলবার (১৮ জুন) রাত থেকে সেখানে কাজ চলছে।