রবিবার, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪
spot_img
Homeযাঁকে সারাজীবন মনে রাখা যায়

যাঁকে সারাজীবন মনে রাখা যায়

আমার ভালো বন্ধুদের একজন গতকাল আমাকে জিগ্যেস করেছিল, আচ্ছা মামা, নোবেলবিজয়ী অধ্যাপক এ্যানির সাথে তুলনা করে দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী যেভাবে শিক্ষকদের অপমান করছে, এটা তুই কীভাবে দেখোস? আসলেই কি আমাদের শিক্ষকরা এতটা দায়িত্বহীন আচরণ করেন?

আমি বলেছিলাম, মামা, শিক্ষকদের তো খুব সুন্দর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমাদের দেশের বেশিরভাগ শিক্ষক ভালো মানুষ না। বেশিরভাগ শিক্ষক পা থেকে মাথা পর্যন্ত অসুন্দর। তাঁরা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে জানেন না, ভালো আচরণ করতে জানেন না, মিশতে জানেন না, ভালোবাসতে জানেন না। এদের শিক্ষক হবার যোগ্যতাই নেই।

আমি নিজের কথাই যদি বলি, স্কুল জীবনে যাঁদের পেয়েছি, তাঁদের বেশিরভাগই শিক্ষক হিসেবে ভালো ছিল না। আমার স্কুল জীবনে আমার কোনো প্রিয় শিক্ষক নেই, কাউকেই আমি মনে রাখিনি। মনে রাখার মতো সেখানে একজন শিক্ষকও পাইনি। আবার কলেজে এসে যাদের পেয়েছি তাঁরা সবাই-ই আমার প্রিয়। এখন ইউনিভার্সিটিতে এসেও চারজন শিক্ষক পেয়েছি, যাঁরা ভীষণ সুন্দর মানুষ।

আমি যখন গ্রামে থেকে মাধ্যমিকে পড়ি, তখন আমিও শিক্ষকদের ভালো চোখে দেখতাম না। শহরে আসার পর সুন্দর শিক্ষক পেলাম, এখন আমি শিক্ষকদের নিয়ে ভালো ভালো কথা বলি। ব্যাপারটা ঠিক এমনই।

এই যে এখন যারা নোবেলবিজয়ী অধ্যাপক এ্যানির সাথে তুলনা করে নিজেদের শিক্ষকদের অপমান করছে, হতে পারে এরা সুন্দর শিক্ষকের দেখা পায়নি কখনো। তাই এই জিনিসটাকে আমি ভালো চোখেই দেখি। শিক্ষক হলে শিক্ষকের সব গুণাবলি তাঁর ভেতর সব থাকা উচিৎ। শিক্ষার্থীরা ভুল করবে, সেই ভুল ধরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব শিক্ষকের। এখন যদি শিক্ষক সেটা না করে অকথ্য ভাষায় কথা বলেন, তাহলে কি আর তাঁকে শিক্ষক বলা যায়? তুই তাঁকে গুরু বলবি? তোর ভালো লাগবে তাঁকে?

আমাদের ধারণা মতে যিনি পড়ান তিনি শিক্ষক আর শিক্ষকতা শুধু একটি চাকুরী। যারা শিক্ষকতাকে একটি চাকুরী হিসেবে দেখেন সেখানেই বিপদ। তাঁদের কাছে ক্লাসরুমে গতানুগতিক পাঠদান করেই তাঁদের দায়িত্ব শেষ করেন। সত্যি কথা বলতে গেলে এ রকম শিক্ষকের সংখ্যাই আমাদের সমাজে অনেক বেশি। তাই এটা নিঃসন্দেহে বলা চলে যে, একজন শিক্ষক হওয়া আমাদের দেশে খুব সহজ হলেও একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়া অত্যন্ত কঠিন।

তোর ছাত্র জীবনে এমন কয়জন শিক্ষক পেয়েছিস, যাঁদের আজীবন মনে রাখা যায়?

তিনজন শিক্ষককে কখনো ভুলবো না। এরমধ্যে কলেজ জীবনে দুইজনকে পেয়েছিলাম আর ইউনিভার্সিটিতে এসে একজন পেয়েছি। কলেজ জীবনের সাইফুল স্যার আর দীপঙ্কর স্যারের কথা তোকেও আগেও বলেছিলাম। কেবল একজন শিক্ষকের কথা তোকে এখনো বলিনি, তিনি হলেন, আমার সাংবাদিকতা বিভাগের হেড স্যার।

আমি স্কুল জীবনে থাকতে কখনোই ভাবিনি, কেউ আমার প্রিয় শিক্ষক হতে পারেন।

ইউনিভার্সিটিতে একজন স্যারের সংস্পর্শে আসার পর বুঝতে পারলাম, আমি আসলে এমন একজন শিক্ষক পেয়ে গেছি, যাঁকে আজীবন শ্রদ্ধা করা যায়। যাঁর আদর্শে জীবন পরিচালনা করা যায়; যাঁর স্নেহের স্পর্শে আগামী দিনে ভালো কিছু করার প্রেরণা পাওয়া যায়।

ভালো কথা, এখনো সেই প্রিয় শিক্ষকের নামই বলা হলো না, যাঁর কথা বলছি। ওনার নাম নাম হচ্ছে রফিকুজ্জামান রুমান স্যার।

আমাদের রুমান স্যার একজন ড্রিমার। একজন শিক্ষকের মৌলিক কাজই হচ্ছে তাঁর শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখানো। আমাদের সমাজে অনেক শিক্ষক রয়েছেন তারা শুধু ভালো শিক্ষার্থীদের শিক্ষক। শিক্ষকতার মৌলিক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে খারাপ শিক্ষার্থীদেরও শিক্ষক হওয়া। রুমান স্যার একাধারে ভালো ও খারাপ উভয় শিক্ষার্থীর শিক্ষক।

আমাদের স্যারকে আমি প্রথমে অত্যন্ত একজন রাগী মানুষ হিসেবে মনে করলেও স্যার ছিলেন খুবই কোমল হৃদয়ের অধিকারী। বিভাগের প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে তিনি একজন ইতিবাচক শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের অন্যতম আশ্রয়স্থল আমাদের এই প্রিয় শিক্ষক।

আমি খুবই সৌভাগ্যবান। কারণ, আমার শিক্ষা জীবনে সাইফুল স্যার, দীপঙ্কর স্যার ও রোমান স্যারের মতো ভালো কিছু শিক্ষক পেয়েছি। তাঁদের সকলের প্রতিই আমি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু কেউ যদি বলে মাত্র একজন শিক্ষককে বাছাই করতে তাহলে সেটি আমার কাছে কঠিন কাজ।

তবে আমার জীবনে যাদের আদর্শ গভীরভাবে মনে ছাপ ফেলেছে তাদের মধ্যে রোমান স্যার একজন। উনি শিক্ষার্থীদের প্রতি সর্বদা আন্তরিক। সবাইকে সাহায্য করতে উৎসাহী।

সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে উনি আসলেই অতুলনীয়। একই সঙ্গে ছিলেন একজন সৎ চরিত্রের সহজ-সরল জীবনে বিশ্বাসী মানুষ; যাকে দেখে শিক্ষার্থীরা নীতিবান হতে উৎসাহী হয়।

শিক্ষার্থীদের খুব সহজভাবে বোঝাতে পারার অসাধারণ ক্ষমতা আছে স্যারের। স্যার প্রতিটি বিষয়ে আমাদের এতো উৎসাহ এবং এত সুন্দরভাবে পড়ান যে, সকল শিক্ষার্থীই তাঁর ক্লাসে মুগ্ধ থাকতো।

উনি এমন একজন শিক্ষক যিনি সকলের মন জয় করে নিতে পারেন সহজেই। জানি না, স্যারের কাছে আমার এই লেখাটি কখনো পৌঁছাবে কিনা।

স্যার, আজ আপনাকে একটা কথা বলতে চাই। আপনাকে শুধু আমি না, আমরা সবাই সত্যি খুব ভালোবাসি। সামনা-সামনি হয়তো কখনও কেউ বলতে পারেনি। আমরাও হয়তো কোনোদিন মুখে বলতে পারবো না। আজ এ লেখার মাধ্যমেই জানিয়ে দিলাম আমাদের সে না বলা কথা। আমরা আপনাকে পেয়েছি একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে। এ ধরনের শিক্ষক পাওয়া সত্যিই কপালের ব্যাপার। আপনি এমন একজন মানুষ, যাঁকে সারাজীবন মনে রাখা যায়।

আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস। প্রতিবছর অক্টোবর মাসের ৫ তারিখ বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন করা হয়। শিক্ষা ও উন্নয়ন অর্থাৎ শিক্ষকদের অবদান সর্বত্র ও অনস্বীকার্য। অনেকেই তাদের প্রিয় শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন। শিক্ষকদের শ্রদ্ধা না জানানোর কোনো সুযোগ নেই। আপনি আমাদের মানারাতের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক, আমরা সবাই আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি।

বিশ্ব শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা স্যার। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। আপনি সবসময় ভালো থাকেন, সুস্থ থাকেন। সে প্রত্যাশাই করি।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, এমআইইউ

 

 

পর্যালোচনা সংক্ষিপ্ত বিবরণ

Al Mahmud Apu
Al Mahmud Apu
Traine Sub-Editor, Sangbad Post

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন