রবিবার, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪
spot_img
Homeজাতীয়ঘুরে দাঁড়ানো আর দেনা নিয়ে এখন যত চিন্তা

ঘুরে দাঁড়ানো আর দেনা নিয়ে এখন যত চিন্তা

সরকারের সহযোগিতা নিয়ে বঙ্গবাজারেই পুনর্বাসন চান ব্যবসায়ীরা * এখনও মামলা হয়নি, খতিয়ে দেখা হচ্ছে আগুনের সূত্র

এমনিতেই নিত্যদিন দোকানে দোকানে হুমড়ি খেতেন ক্রেতা। সকাল থেকে রাত– মানুষে গমগম করত গুলিস্তানের বঙ্গবাজার। এখানকার পোশাক ছড়িয়ে পড়ত দেশের নানা প্রান্তে, শহর থেকে অজপাড়াগাঁয়ে। ঈদ উৎসব ঘিরে তা হয়েছিল আরও জমাট; ছিল না পা ফেলার জো। দেশের অন্যতম প্রধান এই পোশাকের বাজারে নতুন কাপড় ছড়াত সুরভি। এক দিন আগেও কাপড়ে ঠাসা ছিল সব গুদাম আর দোকান। এখন ‘পোশাক-রাজ্য’ বঙ্গবাজার পুরোটাই বিরান। নতুন পোশাকের মৌতাতের বদলে বাতাসে ভাসছে পোড়া গন্ধ।

থেমে গেছে ব্যবসায়ীদের চাঞ্চল্য, নেই বিকিকিনির ব্যস্ততা আর হাঁকডাক। মঙ্গলবারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর বঙ্গবাজার এখন ধ্বংসস্তূপ, নিঃস্ব ব্যবসায়ীদের চোখের নোনাজল মেশানো একখণ্ড পোড়া জমি। সেখানে এখন আর ক্রেতা নেই, পড়ছে কেবল সর্বস্বান্ত ব্যবসায়ীদের পা। কেউ চাপড়াচ্ছেন বুক, কারও চোখে নীরবে বইছে জল। দুঃসময়ে ধ্বংসস্তূপের ছাই উড়িয়ে নিজের স্বপ্নের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পোড়া ভিটায় অনেকে হাতড়াচ্ছেন সুসময়ের স্মৃতি।

সর্বগ্রাসী অনল বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের চোখে-মুখে এঁকে দিয়ে গেছে ঘুরে দাঁড়ানো আর দেনা শোধের চিন্তারেখা। অনেকেই ব্যাংক, এনজিও থেকে ঋণ এবং আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে দোকানে নতুন মালপত্র তুলেছিলেন। এখন সব হারিয়ে সরকারের সহযোগিতা নিয়ে বঙ্গবাজারেই পুনর্বাসন চান ব্যবসায়ীরা।

বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আশপাশের আট মার্কেটের অন্তত পাঁচ হাজার দোকান ছাই হয়। ফায়ার সার্ভিসের ৪৮ ইউনিটের চেষ্টায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন হলেও আগুন লাগার কারণ নিয়ে গতকাল বুধবার পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করতে চাননি কেউ। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের আদর্শ মার্কেট থেকে আগুনের সূত্রপাত। এক দিন পার হলেও বঙ্গবাজারসংলগ্ন এনেক্সকো টাওয়ার থেকে গতকালও ধোঁয়ার কুণ্ডলী বের হতে দেখা গেছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ওই টাওয়ারে পানিও ছিটান। এনেক্সকো ভবনের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম তলা থেকে একের পর এক পোশাকভর্তি বস্তা নিচে ফেলা হচ্ছিল। এর পর তা ব্যবসায়ীরা নিরাপদে সরিয়ে নেন। বঙ্গবাজারের ধ্বংসস্তূপের বিভিন্ন জায়গায় গতকালও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পানি ছিটাতে দেখা গেছে। এনেক্সকো ভবনের নিরাপত্তাপ্রধান আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ভোরে আগুন দেখে পাশের মসজিদ থেকে মাইকিং করে সবাইকে সর্তক করা হয়। এ সময় ফায়ার সার্ভিসকেও জানানো হয়।’ এদিকে আগুনের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। তবে শাহবাগ থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে আগুনের সূত্র খোঁজার চেষ্টা করছে।
পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) জাফর হোসেন সমকালকে বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরে মামলার প্রস্তুতি চলছে। জড়িতদের আমরা শনাক্ত করব।’

ব্যবসায়ীদের হাহাকার : গতকাল সকাল থেকে বঙ্গবাজার লাগোয়া ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরের সামনের সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। ওই তালিকায় নাম তুলতেও ছিল লম্বা সারি। সেখানে রাস্তার পাশে একটি বেঞ্চে নির্বাক বসে ছিলেন ‘প্রিন্স কিডস জোন’ নামে দোকানের মালিক মো. ইয়াছিন। তিনি জানান, তাঁর দোকানে ৩৬ লাখ টাকার পোশাক ছিল। ক্যাশবাক্সে ছিল ৩ লাখ টাকা। একটা সুতাও দোকান থেকে বের করতে পারেননি তিনি। পুড়ে গেছে নগদ টাকাও। যেসব পার্টির কাছ থেকে পাইকারি পোশাক কিনে ঈদ ঘিরে দোকান সাজিয়েছেন; তাঁরা পাবেন ২০ লাখ টাকা। আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার করেছেন ১০ লাখ টাকা। এসব দেনা কীভাবে শোধ করবেন– কোনো কিনারাই দেখছেন না তিনি। ২০১৪ সাল থেকে লড়াই করে তিনি যে ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন, এক আগুনে সব শেষ হয়ে গেছে। ইয়াছিন বললেন, ‘কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানিও আমার শুকিয়ে গেছে। আগুন লাগার খবর পেয়েই দোকানে ছুটে আসি। দেখি দাউদাউ করে জ্বলছে। ঢোকার কোনো উপায় ছিল না। এই দোকানের ওপরেই পুরো সংসার। আবার কীভাবে শুরু করব, জানি না। সরকার যদি পাশে না দাঁড়ায়, আমাদের স্বপ্ন এখানেই শেষ হবে। আমার চেয়েও বড় অনেক ব্যবসায়ী ছিলেন, যাঁরা এক দিন আগেও কোটিপতি ছিলেন; আজ তাঁরা নিঃস্ব।’ তবে ‘রাফি-রায়হান ফ্যাশন’-এর কর্ণধার শাহিদ হোসেনের গল্প আরও মর্মস্পর্শী। বঙ্গবাজারে বোনের দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছিলেন তিনি। টলমল চোখে শাহিদ বলেন, ‘পরিবারের সবাই হতভম্ব। আজ সকালে ঘর থেকে বের হওয়ার আগেও দুই সন্তানের গলা জড়িয়ে কান্নাকাটি করেছি। সংসার, সন্তানদের পড়াশোনা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছি– কীভাবে চলব আমরা! করোনার কারণে অনেক দিন ব্যবসা ভালো ছিল না। দোকানের ভাড়া বাকি আছে তিন বছরের। স্বজনের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ঈদের বাজারটা ধরার চেষ্টা করেছি। ব্যবসা করে ধার শোধ করার কথা ছিল।’

পর্যালোচনা সংক্ষিপ্ত বিবরণ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন