আসন্ন রমজানে বাজারের চেয়ে কম দামে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। আগামী বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) থেকে মাসব্যাপী এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
জানা গেছে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এ ভ্রাম্যমাণ বিপণন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করবে। এ কার্যক্রমকে সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে সম্প্রতি বৈঠকে বসেছিলেন সংশ্লিষ্টরা।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ২০টি স্থানে বাজারের চেয়ে কম দামে দুধ, ডিম ও মাংস ভ্রাম্যমাণ বিপণন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম এবং দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরের কয়েকটি স্থানে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ভ্যানে প্রতিদিন ১০০ কেজি গরুর মাংস, ২৫ কেজি খাসির মাংস, ৫০ কেজি ড্রেসড বয়লার এবং ২০০ লিটার দুধ বিক্রি করা হবে। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ১ কেজি গরুর মাংস, ১ কেজি খাসির মাংস, ১ কেজি ড্রেসড বয়লার, ২ লিটার দুধ এবং ১ ডজন ডিম কিনতে পারবেন।
রাজধানীতে সচিবালয় সংলগ্ন আব্দুল গণি রোড, খামারবাড়ি গোল চত্বর, মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটি, মিরপুর ৬০ ফুট রাস্তা, আজিমপুর মাতৃসদন, নয়াবাজার, আরামবাগ, নতুন বাজার, কালশী, যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও, নাখালপাড়ার লুকাস মোড়, সেগুনবাগিচা, উত্তরার দিয়াবাড়ি, বনানীর কড়াইল বস্তি, উত্তরখান, হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচর এবং গাবতলীতে এ কার্যক্রম চলবে।
বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হলেও এসব স্থানে ৬৪০-৬৫০ টাকায় বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত থাকা সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ কর্মকর্তা বলেন, বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৮০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে প্রতি কেজি গুরুর মাংসের দাম ৬৪০-৬৫০ টাকার মধ্যে থাকবে। সে হিসেবে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত সাশ্রয় হবে সাধারণ মানুষের।
এছাড়া খাসির মাংস ৯৪০-৯৫০, প্রতি লিটার গরুর দুধ ৮০ এবং প্রতি ডজন ডিম ১২০ টাকা দরে বিক্রি করা হতে পারে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি খাসির মাংসের দাম পড়ছে ১ হাজার ৮০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত। ৯৪০-৯৫০ টাকায় বিক্রি হলে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত কমে ভ্রাম্যমাণ ভ্যান থেকে কিনতে পারবেন সাধারণ মানুষ। এছাড়া বাজারের চেয়ে কম মূল্যে ড্রেসড বয়লার মুরগির মাংসও (চামড়া ছাড়া) পাওয়া যাবে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) ভ্রাম্যমাণ এ কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করবে। এছাড়া বাংলাদেশ ডেইরি ফামার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল এ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকবে।
জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. মো. গোলাম রাব্বানী বলেন, আমরা এ কার্যক্রমে লজিস্টিক সার্পোট দিয়ে থাকি। গত বছরেও দিয়েছি, এ বছরও দেওয়া হবে। এ কার্যক্রমকে সফল করতে আমরা কাজ করছি।
বাংলাদেশ ডেইরি ফামার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ কার্যক্রম পরিচালনা করবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। আমরা মাংস এবং দুধ সরবরাহ করব।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, রমজান মাসে মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সেটি সরকারের লক্ষ্য। তাই প্রাণীজ আমিষ ও পুষ্টির চাহিদা মেটাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করার জন্য মোটামুটি সব কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভ্রাম্যমাণ বিপণনে শুধু সূলভমূল্যে বিক্রি করে আমরা দায়িত্ব ছাড়ছি না, এসব স্থানে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। কারণ মানুষকে নিরাপদ খাবার পৌঁছে দেওয়া সাংবিধানিক দায়িত্ব। মন্ত্রণালয় থেকে ভ্রাম্যমাণ বিক্রির সব কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হবে।
এর আগে গত রমজানেও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীতে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংসের ভ্রাম্যমাণ বিক্রি কার্যক্রমে পরিচালনা করা হয়। সে সময় সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায় এ কার্যক্রম।