জটিল কিডনি রোগে আক্রান্ত রাকিবুল ইসলাম রনি (২৭) বাঁচতে চান। তাকে বাঁচাতে তার মা রোমেনা খাতুন নিজের একটি কিডনি দেবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু অস্ত্রোপচারের খরচ বাবদ দরকার ১০ লাখ টাকা। এই টাকা জোগাতে না পেরে অস্ত্রোপচার হচ্ছে না রনির।
জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের কোনাবাড়ি গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক মো. লুৎফর রহমানের ছেলে রাকিবুল ইসলাম রনির জন্ম ১৯৯৬ সালে। পরে ১৯৯৮ সালে তার জটিল কিডনি রোগ ধরা পড়ে। এর মধ্যেই বাবা লুৎফর রহমান ছেলেকে বাঁচাতে ব্যয়বহুল চিকিৎসা করাতে থাকেন। পাশাপাশি ছেলের পড়ালেখাও চলতে থাকেন। রনি এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফলাফলও করেন। বর্তমানে রনি তাড়াশের দোবিলা ইসলামপুর ডিগ্রি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
রাকিবুল ইসলাম রনি জানান, তার কিডনির চিকিৎসা চলতে চলতেই ২০১৯ সালে অবস্থার অবনতি হয়। সেই থেকে প্রতি সপ্তাহে দুই বার ডায়ালাইসিস করাতে হচ্ছে তাকে। এতে করে প্রতি সপ্তাহে খরচ হচ্ছে প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা।
এদিকে রনির চিকিৎসক বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউর রহমান জরুরিভাবে রনিকে বাঁচাতে কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন। সে মোতাবেক রনির মা রোমেনা খাতুন ছেলেকে বাঁচাতে তার নিজের একটি কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এজন্য সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক রমজান মাসের পর কিডনি প্রতিস্থাপনের দিনক্ষণ ঠিক করেছেন। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপনে অস্ত্রোপচারে ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ পড়বে। সে টাকার ব্যবস্থাই করতে পারছে না পরিবার।
রনির বাবা লুৎফর রহমান বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে সন্তানকে বাঁচাতে জমি, বসতভিটা বিক্রি করে চিকিৎসা করাচ্ছি। একজন নির্মাণশ্রমিক হিসেবে যে রোজগার হয় তাতে ছেলের ব্যয়বহুল কিডনির চিকিৎসা অসম্ভব হয়ে পড়েছে এখন। জরুরিভিত্তিতে রনিকে বাঁচাতে কিডনি প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপেনের ব্যয়ভার বহন করার সক্ষমতা আমাদের নেই। তাই ছেলেকে বাঁচাতে দেশের বিত্তবান ও হৃদয়বান কাছে আর্থিক সহযোগিতা কামনা করছি।
নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আব্দুল খালেক বলেন, রনি একদম ছোটবেলা থেকেই অসুস্থ। আমরা নানা সময় তাকে ও তার পরিবারকে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছি। শুধু আমরা নয়, আমাদের মতো এলাকার অনেকেই তাদের সহযোগিতা করে আসছে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু এখন তার মা তাকে একটা কিডনি দিচ্ছে এবং এটা একটা বড় অপারেশন তাই এত টাকা খরচ করার মতো কোনো উপায় তাদের নেই। দেশের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে তবেই সম্ভব। এ ছাড়া আমাদের পক্ষ থেকে তাকে একটা প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড ও তার মাকে একটা ভিজিডির কার্ড করে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, ছেলেটি আসলেই খুব অসুস্থ। তার বেঁচে থাকার জন্য কিডনি প্রতিস্থাপনটা দরকার। যেহেতু তার পরিবারের এই ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়। আমি বিত্তশালীদের অনুরোধ করবো তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
রনির উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষক রঘুনিলি মঙ্গলবাড়িয়া বিজ্ঞান কারিগরি ও কৃষি প্রযুক্তি মহাবিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক এম আতিকুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ছেলেটি মেধাবী এবং খুব ছোটবেলা থেকেই অসুস্থ। তাদের পরিবার তার চিকিৎসা করতে গিয়ে বসতভিটা থেকে শুরু করে প্রায় সবই শেষ করে ফেলেছে। এখন তার মা তাকে একটি কিডনি দিতে চাইলেও টাকার অভাবে সেটা প্রতিস্থাপন করা যাচ্ছে না। এখন এই ৯-১০ টাকা সংগ্রহে যদি হৃদয়বান ও বিত্তশালীরা রনির পাশে দাঁড়াতো, তাহলে বেঁচে যেত একটা প্রাণ ও কিছু স্বপ্ন।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা কিডনি-ক্যান্সারসহ ৬টি রোগের ওপরে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য অনুদান দিতে পারি। তারা আবেদন করলে যাচাই-বাছাই করে অনুদান দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।