সব বাধা পেরিয়ে স্বপ্নের বন্দরে নোঙ্গর করেছে বাংলাদেশ। একদিন পর (২৮ ডিসেম্বর) ঢাকায় ঝিক ঝিক শব্দ তুলবে মেট্রোরেল। যা এ দেশের মানুষের কল্পনার বাইরে ছিল, সেটিই আজ দৃশ্যমান। বড় বড় দালান কোঠার মধ্য দিয়ে চলাচল করবে মেট্রোরেল। ছিল অনেক বাধা। ছিল সাধ্য এবং সামর্থ্যের ঘাটতিও। এমনকি ইচ্ছা শক্তিগুলো কাজে লাগাতেও ভয় হয়েছিল অনেকের। কিন্তু সেটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে বর্তমান সরকার সফল করেছে বিশাল এই কর্মযজ্ঞের। বাংলাদেশ করোনা মানেনি। ঠাই পায়নি অপারগতা। নিজস্ব ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়ে মেট্রোরেল রূপ নিয়েছে আজ বাস্তবে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশের মানুষ নিজেকে মৃত্যুর কাছে ঠেলে দিয়ে যুদ্ধ করেছে। নিজের দেশকে বাঁচাতে রক্ত দিয়েছে। সংগ্রামী সেইসব বীর যোদ্ধাদের ত্যাগে আজ আমরা মুক্ত দেশের স্বাধীন মানুষ। সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন। চালু হয়েছে বিশ্বের বিস্ময়-পদ্ধা সেতু। পায়রা বন্দর সেতু, সারা দেশের ১০০টি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ১০০ সেতু খুলে দেয়া হয়েছে। আকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। ২ লেনের মহাসড়ক ৬ লেনে করা হয়েছে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার এবং ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে রেল সড়ক নির্মাণ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আকাশপথে যোগ হয়েছে নতুন অতিথি, আকাশ তরী, শ্বেত বলাকা, ধ্রুব তারা। সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে সারা বিশ্বের সঙ্গে।
প্রতিদিন বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের দিকে ধাবিত হচ্ছে। দেশ নির্মাণে বর্তমান অগ্রগতি বিশ্বের মানুষের কাছে মডেল হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের খ্যাতি চোখে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে। দেশ আজ ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হচ্ছে। এই নিয়ে চলছে বর্তমান সরকারের ব্যাপক পরিকল্পনা। এমন উন্নয়নের স্রোতধারায় মেট্রোরেল চালু নিঃসন্দেহে একটি বিস্ময়কর ঘটনা। বাংলাদেশের মানুষ এখন নিমিষেই পৌঁছাতে পারে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। এই সফলতা সামাজিক ক্ষেত্রে স্বস্তি এনে দিয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিপণ্য বিক্রি উন্নয়নের পথকে আরো গতিশীল করেছে।
মেট্রোরেল তৈরির পরিকল্পনার পর চালু পর্যন্ত সময় লেগেছে ৯ বছর। ২০১৩ সালে অতি জনবহুল মহানগরীর ক্রমবর্ধমান যানবাহন সমস্যা ও পথের দুঃসহ যানজট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে পরিবহন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। প্রথম পর্যায়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন- ৬ কে নির্বাচন করা হয়। ২০১৬ সালের ২৬ জুন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এমআরটি লাইন -৬ এর কাজ শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল শুরু করবে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উত্তরা-আগারগাঁও ছাড়া আর কোথাও থামবে না।
মেট্রারেল সূত্রে বলা হয়েছে- ১টি স্টেশনে রেল থেমে থাকবে ১০ মিনিট। সপ্তাহে ১ দিন মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে। টিকিট কাটার আগে নিবন্ধন করতে হবে। স্টেশন ও কোচ থাকবে সিসিটিভির আওতায়। শুরুতে মেট্রোরেল চলবে দিনে ৪ ঘণ্টা। বিদ্যুৎচালিত এই ট্রেন চলবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। টিকিট ব্যবস্থা হবে কম্পিউটারাইজড।
২৮ ডিসেম্বর স্বপ্নের মেট্রোরেলের শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উত্তরায় মেট্রোরেলের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করে সেখানেই তিনি ভাষণ দেবেন। এর পর মেট্রোরেলে চড়ে তিনি উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ে আসবেন। ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এলাকাবাসীর জন্য পুলিশের ৭ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
এদিকে মেট্রোরেলের প্রথম টিকিট কাটবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি স্থায়ী কার্ড কিনে ভাড়া পরিশোধ করবেন। অন্য যাত্রীরাও কার্ড কিনে মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবেন। কার্ডের মেয়াদ হবে ১০ বছর। কার্ডের মূল্য ২০০ টাকা। পর্যায়ক্রমে স্টেশনের বাইরে মেট্রোরেলের কার্ড বিক্রির জন্য কিছু প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানিয়েছে রেল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বনিম্ন ২০ টাকা। ২ স্টেশন পর ১০ টাকা করে ভাড়া যোগ হবে। আর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভাড়া হবে ৬০ টাকা।
আগামী বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হবে। প্রথম দিন উত্তরা ও আগারগাঁও স্টেশন থেকে টিকিট কাটা যাবে। তবে এর আগে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনে থাকবে নাম, পিতা-মাতার নাম, ফোন নাম্বার এবং ই-মেইল। মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।