মানিক রহমান। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমানের ছেলে। জন্ম থেকেই দুই হাত নেই। আজ বৃহস্পতিবার তিনি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। পা দিয়ে লিখলেও অন্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় তার লেখার প্রশংসা করছেন সবাই।
মানিকের বাবা মিজানুর রহমান একজন ক্ষুদ্র ওষুধ ব্যবসায়ী। বাবা-মায়ের বড় ছেলে তিনি। জন্মের পর থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে তিনি বড় হয়ে উঠেছেন। তার দুটো হাত না থাকলেও পড়ালেখা থেকে কখনো পিছিয়ে পড়েননি। তাকে কঠোর পরিশ্রম করা শিখিয়েছে তার পরিবার। শুধু যে দুই পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন তা নয়, মানিকের দুটো হাত না থাকলেও সুস্থ ও স্বাভাবিক ছেলেমেয়ের মতোই পা দিয়ে লিখে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মোবাইলে চ্যাট করেন।
মানিক পা দিয়েই কম্পিউটার টাইপ, ইন্টানেট ব্রাউজারসহ বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী। তিনি ২০১৬ সালে জছি মিঞা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসিতে গোল্ডেন এ-প্লাস পান এবং ২০২০ সালে ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এজন্য মানিকের মা মরিয়ম বেগমের অবদানটাই অনেক বেশি।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় ফুলবাড়ী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে তিনি বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা দিয়েছেন।
মানিক রহমান বলেন, ‘আমার দুটো হাত না থাকলেও আল্লাহ রহমতে পিইসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ-প্লাস ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন, যেন এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ-প্লাস পাই। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাই। ভবিষ্যতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।’
মানিকের বাবা মিজানুর রহমান ও মা মরিয়ম বেগম বলেন, ‘আমাদের দুই ছেলে। মানিক বড়। ছোট ছেলে মাহীম ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বড় ছেলে মানিক প্রতিবন্ধী এটা আমরা মনে করি না। জন্ম থেকেই তার দুটো হাত না থাকলেও ছোট থেকে আমরা তাকে পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করিয়েছি। সমাজে অনেক সুস্থ ও স্বাভাবিক ছেলে-মেয়ের চেয়েও মানিক পিএসসি ও জেএসসিতে ভালো রেজাল্ট করেছে। এটা আমাদের গর্ব। সবাই আমার ছেলেটার জন্য দোয়া করবেন সে যেন সুস্থ-সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে। সে এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে তার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে।’
ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার বলেন, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মানিক অসাধারণ শিক্ষার্থী। সে আমাদের বিদ্যালয়ের সম্পদ। সে ডান পায়ে বুড়ো আঙ্গুলের ফাঁকে কলম ধরে লিখে আর বাম পা দিয়ে প্রশ্ন ও খাতার পাতা উল্টাতে পারে। এভাবে পরীক্ষা দিয়ে সে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। সে যেন এসএসসিতে গোল্ডেন এ-প্লাস পায় সেজন অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো।’
ফুলবাড়ী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (পাইলট) স্কুলের কেন্দ্র সচিব মশিউর রহমান বলেন, ‘মানিক রহমান প্রতিবন্ধী হয়েও অন্য শিক্ষার্থীদের মতোই প্রতিটি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করছে। বেঞ্চে বসে পরীক্ষায় অসুবিধা হওয়ায় তার চন্য চৌকিতে বসে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং বাড়তি ২০ মিনিট দেওয়াসহ সব সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছি।’
কেন্দ্র সচিব বলেন, ‘জন্ম থেকেই তার দুটো হাত না থাকলেও পা দিয়ে লিখে সুস্থ ও স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের চেয়ে পড়ালেখা ও লেখার ধরন একেবারে আলাদা। পায়ের লেখা কীভাবে এত সুন্দর হয়, এটা খুবই অদ্ভুত ব্যাপার। আমি মানিক রহমানের জন্য মঙ্গল কামনা করছি। সে যেন বাবা-মা ও তার স্বপ্ন পূরণ করে আত্মনির্ভরশীল হয়।’
সংবাদ পোস্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক/আব্দুল্লাহ আল নিয়াত