সোমবার, নভেম্বর ১১, ২০২৪
spot_img
Homeসারা বাংলাসিলেটে চোরাই চিনির ব্যবসায়ী পুলিশের সোর্স

সিলেটে চোরাই চিনির ব্যবসায়ী পুলিশের সোর্স

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সিলেট শহরতলির উমাইরগাঁওয়ে আলোচিত ১৪ ট্রাক ভারতীয় চোরাই চিনি জব্দের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত দুই ট্রাক চালকের জবাবন্দিতে ট্রাক ভাড়া করা ও চোরাই চিনি বহন করার বিষয়ে দেলোয়ার মোল্লা ও নুর ইসলাম নামের দুই ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে।

এর মধ্যে নুর ইসলামের ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও দেলোয়ার মোল্লার বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের লোক হিসাবে পরিচিত। থানার ওসির সাথে একটি ছবিতে তাকে দেখা গেছে।

জালালাবাদ থানার ওসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আদালতে দুই আসামির জবানবন্দি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় সিলেটের ডাককে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত দুই আসামি ১৬৪ ধারা মোতাবেক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে তারা দুজনেই মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও প্রদান করেছে। জবানবন্দিতে দেওয়া তথ্য সমূহ যাচাই- বাছাই করা হচ্ছে। আসামিদের শনাক্ত করে তাদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান ওসি।

জানা গেছে, উমাইরগাঁওয়ে ১৪ ট্রাক চিনিসহ জব্দ করা একটি ট্রাকের চালক মুনসুর আলীকে (৩৮) গত ১১ জুন গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত মুনসুর আলী সিলেট সদর উপজেলার রঙ্গিটিলা গ্রামের রুস্তম আলীর পুত্র। গ্রেফতারের পরদিনই মুনসুর আলী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় সিলেটের মহানগর হাকিম (তৃতীয় আদালত) উম্মে হাবিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। একই ঘটনায় গত শনিবার গ্রেফতার করা হয় সদরুল আমিন আকাশ (২৮) নামের আরেক ট্রাক চালককে।
সদরুল সিলেট সদর উপজেলার উমদারপাড়ের আফান আলীর পুত্র। গ্রেফতারের পরদিন গত রোববার সদরুলও একই আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে তারা দু’জন আদালতের আদেশে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। আলোচিত ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত উপরোক্ত দুই আসামি গ্রেফতার হলেও এখনো মূলহোতারা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এদিকে, আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে ট্রাক চালক মুনসুর আলী ঘটনার আদ্যপ্রান্ত বর্ণনা দিয়েছেন। জানিয়েছেন, ‘যদি পুলিশের হাতে চিনি চোরাচালান ধরা পড়ে যায়; তাহলে দেলোয়ার মোল্লা পুলিশের দিকটা দেখব। জবানবন্দিতে ১৪ ট্রাক চিনি ধরা পড়ার আগে আরও তিনটি ট্রাক পালিয়ে যাওয়ার তথ্য প্রকাশ করেছেন মুনসুর। মুনসুরের ট্রাকটি ভাড়া করেছিলেন নুর ইসলাম নামের একজন। আর চোরাই চিনির বাহক হিসেবে পথ নির্দেশকের দায়িত্ব পালন করেন দেলোয়ার মোল্লা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের ধারণা, দেলোয়ার মোল্লা চোরাকারবারীদের একজন।
জবানবন্দিতে মুনসুর আলী বলেন, ‘৫ জুন সন্ধ্যার দিকে নুর ইসলাম আমাকে বলে একটা ট্রিপ আছে। হাদারপাড় (বিছনাকান্দি) ট্রাক নিয়ে যেতে বলে। রাত সাড়ে ১০ টায় হাদারপাড় যাই। নুর ইসলাম আমাকে বলে এক ট্রিপ চিনি নিয়ে যাও। তোমাকে ১০ হাজার টাকা ভাড়া দেব। আমি বলেছি, পুলিশ ধরব। তখন সে (নুর ইসলাম) আমাকে বলে, পুলিশে ধরবে না। পুলিশকে ম্যানেজ করব। আমি তখন ১৫৫ বস্তা চিনি নৌকা থেকে ট্রাকে তুলি। তারপর আমাকে নুর ইসলাম বলেছে, দেলোয়ার মোল্লা পুলিশের দিকটা দেখব। আমি ট্রাক চালাইয়া সালুটিকর আসি। তখন সেখানে দেখি আরও ১৬-১৭টি ট্রাক দাঁড়ানো। নুর ইসলাম আমাকে ফোনে বলে যে, উমাইরগাঁও রোড ধরে যাওয়ার জন্য। কিছু ট্রাক এক রোডে, কিছু অন্য রোডে, আবার সবকিছুর নির্দেশনা ফোনে ফোনে হচ্ছিল। আমরা ট্রাক নিয়ে উমাইরগাঁও রোডে রওনা হতেই একটা সাদা রঙের প্রাইভেট কার ও একটি মোটরসাইকেল আমাদের ট্রাক ক্রস করে, আমাদের রাস্তা ক্লিয়ার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এরা কারা আমি ঠিক জানি না। দেলোয়ার মোল্লা জানতে পারে এরা কারা। আমরা উমাইরগাঁও যাওয়ার পরই দেখি আমার সামনের ৬-৭টা ট্রাক ঘুরিয়ে ফেলছে। আমিও দেখে ট্রাকটি ঘুরিয়ে ফেলি। সামনের ট্রাককে জিজ্ঞেস করতে বলে, দুই-তিন মিনিট দাঁড়াতে। এর মধ্যেই বাইক ও প্রাইভেট কারের লোকজন পালাইছে। অন্য ট্রাকের ড্রাইভাররাও পালিয়ে যায়। ৪-৫ মিনিটের মধ্যে দেখি পুলিশ এসে গেছে। তখন সুযোগ বুঝে আমিও পালিয়ে যাই’।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই দেলোয়ার মোল্লার একটি ছবি গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম শ্রাবনের সঙ্গে রয়েছে। দেলোয়ার মোল্লার ফেসবুক আইডিতে পাওয়া গেছে ওসি রফিকুলের সঙ্গে ছবিটি। ‘নতুন ওসি স্যারের সাথে…’ ক্যাপশন লিখে দেলোয়ার মোল্লা তার নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়েছেন গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেলোয়ার মোল্লার বাড়ি গোয়াইনঘাট থানার হাদারপাড়ে। দেলোয়ার মোল্লা স্থানীয়দের নিকট ‘পুলিশের লোক’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও তার সখ্যতা রয়েছে। দেলোয়ার মোল্লার পেশা কী- এ বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারেননি। দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা না থাকলেও তার চলাফেরা রাজকীয় বলে জানা গেছে। স্থানীয় লোকদের মাধ্যমে দেলোয়ার মোল্লার দুটো ফোন নম্বর পাওয়া গেলেও দুটো নম্বরই বন্ধ পাওয়া গেছে।

দেলোয়ার মোল্লার ব্যাপারে জানতে চাইলে গোয়াইনঘাট থানার ওসি রফিকুল ইসলাম শ্রাবণ গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় সিলেটের ডাককে বলেন, ‘ফেইসবুকে যত্রতত্র মানুষ ছবি তুলতে পারে। নতুন স্থানে আসলে কাউকে চেনার উপায় থাকে না। তবুও মামলাটি অন্য থানার। উনারা যদি আসামি ধরতে আসে ডেফিনিটলি আমি তাদেরকে সহায়তা করব।’

প্রসঙ্গত, সিলেট মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানার উমাইরগাঁওয়ে গত ৬ জুন ১৪ ট্রাক চোরাই চিনি জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন পুলিশের এসআই মো. সালাহ উদ্দিন বাদী হয়ে জালালাবাদ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন। মামলা নম্বর-০৫। সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকে আসা চোরাই চিনি চোরাচালানের মধ্যে এটি হলো সবচেয়ে বড় চোরাচালান। ঘটনার পর চোরাকারবারী শনাক্ত করতে পুলিশ মাঠে নামলেও এর মূলহোতাদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি

পর্যালোচনা সংক্ষিপ্ত বিবরণ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন